সিজ্জীন
সিজ্জীন
৮৩ :
كَلَّا إِنَّ كِتَابَ الْفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٍ

কখনো না, পাপাচারীদের আমলনামা তো সিজ্জীনে [১] আছে।

ফুটনোট

[১] سجين শব্দটি سجن থেকে গৃহীত। سجن অর্থ সংকীর্ণ জায়গায় বন্দী করা। [ইবন কাসীর] আর سجّين এর অর্থ চিরস্থায়ী কয়েদ। [মুয়াসসার] এটি একটি বিশেষ স্থানের নাম। যেখানে কাফেরদের রূহ অবস্থান করে। অথবা এখানেই তাদের আমলনামা থাকে। [জালালাইন]

৮৩ :
وَمَا أَدْرَاكَ مَا سِجِّينٌ

আর কিসে আপনাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী?
ফুটনোট

৮৩ :
كِتَابٌ مَرْقُومٌ

চিহ্নিত আমলনামা [১]।

ফুটনোট

[১] مرقوم শব্দের কয়েকটি অর্থ আছে, লিখিত, চিহ্নিত এবং মোহরাঙ্কিত। [কুরতুবী] অর্থাৎ কিতাবটি লিখা শেষ হওয়ার পর তাতে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে ফলে তাতে হ্রাস বৃদ্ধি ঘটবে না। আর কিতাব বলতে, আমলনামা বোঝানো হয়েছে। ইবনে কাসীর বলেন, এটা সিজ্জীনের তাফসীর নয়; বরং পূর্ববতী كِتٰبَ الْفُجَّارِ এর বর্ণনা। অর্থ এই যে, কাফের ও পাপাচারীদের আমলনামা মোহর লাগিয়ে সংরক্ষিত করা হবে। ফলে এতে হ্রাস-বৃদ্ধি ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকবে না। এই সংরক্ষণের স্থান হবে সিজ্জীন। এর প্রমাণ আমরা বারা ইবনে আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে দেখতে পাই। সেখানে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ্ কাফেরদের রূহ হরণ হওয়ার পর বলবেন,

اكْتُبُوا كِتَابَه فيِ سِجِّيْنٍ فيِ الأَرْضِ السُّفْلٰى

“তার কিতাবকে সর্বনিম্ন যমীনে সিজ্জীনে লিখে রাখ’’। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/২৮৭]

৮৩ : ১০
وَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِلْمُكَذِّبِينَ

সেদিন দুর্ভোগ হবে মিথ্যারোপকারীদের,
ফুটনোট

৮৩ : ১১
الَّذِينَ يُكَذِّبُونَ بِيَوْمِ الدِّينِ

যারা প্রতিদান দিবসে মিথ্যারোপ করে,
ফুটনোট

৮৩ : ১২
وَمَا يُكَذِّبُ بِهِ إِلَّا كُلُّ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ

আর শুধু প্রত্যেক পাপিষ্ঠ সীমালংঘনকারীই এতে মিথ্যারোপ করে;
ফুটনোট

৮৩ : ১৩
إِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِ آيَاتُنَا قَالَ أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ

যখন তার কাছে আমাদের আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয় তখন সে বলে, (এ তো) ‘পূর্ববর্তীদের উপকথা।’
ফুটনোট

৮৩ : ১৪
كَلَّا ۖ بَلْ ۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

কখনো নয়; বরং তারা যা অর্জন করেছে তা-ই তাদের হৃদয়ে জঙ্ ধরিয়েছে [১]।

ফুটনোট

[১] ران শব্দটি رين থেকে উদ্ভূত। অর্থ প্রাধান্য বিস্তার করা। [কুরতুবী] ঢেকে ফেলা। [তাতিস্মাতু আদওয়াইল বায়ান] যাজ্জাজ বলেন, মরিচা ও ময়লা। [কুরতুবী] অর্থাৎ শাস্তি ও পুরস্কারকে গল্প বা উপকথা গণ্য করার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই। কিন্তু যে কারণে তারা একে গল্প বলছে তা হচ্ছে এই যে, এরা যেসব গোনাহে লিপ্ত রয়েছে তাদের অন্তরে মরিচা ধরেছে। মরিচা যেমন লোহাকে খেয়ে মাটিতে পরিণত করে দেয়, তেমনি তাদের পাপের মরিচা তাদের অন্তরের যোগ্যতা নিঃশেষ করে দিয়েছে। ফলে তারা ভাল ও মন্দের পার্থক্য বোঝেনা। ফলে পুরোপুরি যুক্তিসংগত কথাও এদের কাছে গল্প বলে মনে হচ্ছে। [ইবন কাসীর] এই জং ও মরীচার ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: বান্দা যখন কোন গোনাহ করে, তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। সে তওবা করলে দাগটি উঠে যায়। কিন্তু যদি সে গোনাহ করে যেতেই থাকে তাহলে সমগ্র দিলের ওপর তা ছেয়ে যায়। [তিরমিয়ী: ৩৩৩৪ ইবনে মজাহঃ ৪২৪৪]

৮৩ : ১৫
كَلَّا إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ

কখনো নয়; নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রব হতে অন্তরিত থাকবে [১];

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ কেয়ামতের দিন এই কাফেররা তাদের রবের দীদার বা দর্শন ও যেয়ারত থেকে বঞ্চিত থাকবে এবং পর্দার আড়ালে অবস্থান করবে। এই আয়াত থেকে জানা যায় যে, সেদিন মুমিনগণ আল্লাহ্ তা‘আলার দীদার ও যেয়ারত লাভে ধন্য হবে। নতুবা কাফেরদেরকে পর্দার অন্তরালে রাখার কোন উপকারিতা নেই। [ইবন কাসীর]

৮৩ : ১৬
ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُو الْجَحِيمِ

তারপর নিশ্চয় তারা জাহান্নামে দগ্ধ হবে;
ফুটনোট

৮৩ : ১৭
ثُمَّ يُقَالُ هَٰذَا الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تُكَذِّبُونَ

তারপর বলা হবে, ‘এটাই তা যাতে তোমরা মিথ্যারোপ করতে।’
ফুটনোট

0:00
0:00