আল্লাহ গুণগ্রাহী
আল্লাহ গুণগ্রাহী
: ১৫৮
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ ۖ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا ۚ وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ

নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমূহের [১] অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে কেউ (কা’বা) ঘরের হজ [২] বা “উমরা [৩] সম্পন্ন করে, এ দু'টির মধ্যে সাঈ করলে তার কোন পাপ নেই [৪]। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোন সৎকাজ করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ উত্তম পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।

ফুটনোট

[১] (شَعَائِرِاللّٰهِ) এখানে (شَعَائِرِ) শব্দটি (شعيرة) শব্দের বহুবচন। এর অর্থ চিহ্ন বা নিদর্শন। (شَعَائِرِاللّٰهِ) বলতে সেসব আমলকে বুঝায়, যেগুলোকে আল্লাহ্ তা'আলা দ্বীনের নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

[২] (حج) এর শাব্দিক অর্থ ইচ্ছা পোষণ করা, সংকল্প করা। কুরআন-সুন্নাহর পরিভাষায়
বিশেষ সময়ে বিশেষ অবস্থায় বায়তুল্লাহ্ শরীফে আল্লাহ্‌র ইবাদতের উদ্দেশ্যে গমন করে বিশেষ ধরনের কিছু কর্ম সম্পাদন করাকে হজ্ব বলা হয়ে থাকে।

[৩] (عمرة) শব্দের আভিধানিক অর্থ দর্শন করা। শরীআতের পরিভাষায়, ইহরামসহ আল্লাহ্‌র ইবাদতের উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ্ শরীফে হাযির হয়ে তাওয়াফ-সায়ী প্রভৃতি বিশেষ কয়েকটি ইবাদাত সম্পাদনের নামই উমরাহ।

[৪] ‘সাফা’ এবং ‘মারওয়া’ বায়তুল্লাহর নিকটবতী দুটি পাহাড়ের নাম। হজ কিংবা উমরার সময় কা'বা ঘরের তওয়াফ করার পর এ দুটি পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াতে হয় শরীআতের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘সা’য়ী’। জাহেলী যুগেও যেহেতু এ সায়ীর রীতি প্রচলিত ছিল এবং তখন এ দুটি পাহাড়ের মধ্যে কয়েকটি মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল, এ জন্য মুসলিমদের কারো কারো মনে একটা দ্বিধার ভাব জাগ্রত হয়েছিল যে, বোধহয় এ সা’য়ী জাহেলী যুগের কোন অনুষ্ঠান এবং ইসলাম যুগে এর অনুসরণ করা হয়ত গোনাহ্‌র কাজ। কোন কোন লোক যেহেতু জাহেলী যুগে একে একটা অর্থহীন কুসংস্কার বলে মনে করতেন, সেজন্য ইসলাম গ্রহণের পরও তারা একে জাহেলিয়াত যুগের কুসংস্কার হিসেবেই গণ্য করতে থাকেন। এরূপ সন্দেহের নিরসনকল্পে আল্লাহ্ তা'আলা যেভাবে বায়তুল্লাহ্ শরীফের কেবলা হওয়া সম্পর্কিত সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়েছেন, তেমনিভাবে এ আয়াতে বায়তুল্লাহ সংশ্লিষ্ট আরও একটি সংশয়ের অপনোদন করে দিয়েছেন। তাছাড়া রাসূলের বিভিন্ন হাদীস দ্বারাও সাফা-মারওয়ার মাঝখানের সায়ী প্রমাণিত। [দেখুন, মুসনাদে আহমাদ: ৬/৪২১, ৪২২]

: ১৪৭
مَا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ إِنْ شَكَرْتُمْ وَآمَنْتُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمًا

তোমরা যদি শোকর-গুজার হও [১] এবং ঈমান আন, তবে তোমাদের শাস্তি দিয়ে আল্লাহ কি করবেন? আর আল্লাহ (শোকরের) পুরস্কার দাতা, সর্বজ্ঞ।

ফুটনোট

[১] আয়াতে শোকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর আসল অর্থ হচ্ছে নেয়ামতের স্বীকৃতি দেয়া ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা এবং অনুগৃহীত হওয়া। এ ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ না হও এবং তাঁর সাথে নিমকহারামী না কর; বরং যথার্থই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ ও শোকর আদায়কারী হও তাহলে আল্লাহ অনর্থক তোমাদের শাস্তি দেবেন না। মোটকথা: আল্লাহ তা’আলা ঈমানদার এবং শোকরগুজারকে শাস্তি দিবেন না। [তাবারী] কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অনুগ্রহকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক পদ্ধতি কি? বস্তুতঃ হৃদয়ের সমগ্র অনুভূতি দিয়ে তার অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়া, মুখে এ অনুভূতির স্বীকারোক্তি করা এবং কার্যকলাপের মাধ্যমে অনুগৃহীত হওয়ার প্রমাণ পেশ করাই হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক উপায়। এ তিনটি কাজের সমবেত রূপই হচ্ছে শোকর। এ শোকরের দাবী হচ্ছে প্রথমতঃ অনুগ্রহকে অনুগ্রহকারীর অবদান বলে স্বীকার করা। অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে অনুগ্রহকারীর সাথে আর কাউকে অংশীদার না করা। দ্বিতীয়তঃ অনুগ্রহকারীর প্রতি ভালবাসা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের অনুভূতি নিজের হৃদয়ে ভরপুর থাকা এবং অনুগ্রহকারীর বিরোধীদের প্রতি এ প্রসঙ্গে বিন্দুমাত্র ভালবাসা, আন্তরিকতা, আনুগত্য ও বিশ্বস্ততার সম্পর্ক না থাকা। তৃতীয়তঃ অনুগ্রহকারীর আনুগত্য করা, তার হুকুম মেনে চলা, তার নেয়ামগুলোকে তার মর্জির বাইরে ব্যবহার না করা।

৩৫ : ৩০
لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ ۚ إِنَّهُ غَفُورٌ شَكُورٌ

যাতে আল্লাহ্ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ ভাবে দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশী দেন। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী।
ফুটনোট

৩৫ : ৩৪
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ ۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٌ شَكُورٌ

এবং তারা বলবে, 'প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূরিভূত করেছেন; নিশ্চয় আমাদের রব তো পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুনগ্রাহী;
ফুটনোট

৪২ : ২৩
ذَٰلِكَ الَّذِي يُبَشِّرُ اللَّهُ عِبَادَهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ۗ قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَىٰ ۗ وَمَنْ يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَزِدْ لَهُ فِيهَا حُسْنًا ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ شَكُورٌ

এটা হলো তা, যার সুসংবাদ আল্লাহ্ দেন তাঁর বান্দাদেরকে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে। বলুন, 'আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছ থেকে আত্মীয়তার সৌহার্দ্য ছাড়া অন্য কোন প্রতিদান চাই না [১]।' যে উত্তম কাজ করে আমরা তার জন্য এতে কল্যাণ বাড়িয়ে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, গুণগ্ৰাহী।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। তবে القربى এর ভালবাসা অবশ্যই প্রত্যাশা করি। এই শব্দটির ব্যাখ্যায় মুফাসসিরদের মধ্যে বেশ মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এক দল মুফাসসির এ শব্দটিকে আত্মীয়তা (আত্মীয়তার বন্ধন) অর্থে গ্ৰহণ করেছেন এবং আয়াতের অর্থ বর্ণনা করেছেন এই যে, “আমি এ কাজের জন্য তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক বা বিনিময় চাই না। তবে তোমাদের ও আমাদের মাঝে আত্মীয়তার যে বন্ধন আছে তোমরা (কুরাইশরা)' অন্তত সেদিকে লক্ষ্য রাখবে এতটুকু আমি অবশ্যই চাই। তোমাদের উচিত ছিল আমার কথা মেনে নেয়া। কিন্তু যদি তোমরা তা না মানো তাহলে গোটা আরবের মধ্যে সবার আগে তোমরাই আমার সাথে দুশমনী করতে বদ্ধপরিকর হবে তা অন্তত করো না। তোমাদের অধিকাংশ গোত্রে আমার আত্মীয়তা রয়েছে। আত্মীয়তার অধিকার ও আত্মীয় বাৎসল্যের প্রয়োজন তোমরা অস্বীকার কর না। অতএব, আমি তোমাদের শিক্ষা, প্রচার ও কর্ম সংশোধনের যে দায়িত্ব পালন করি, এর কোন পারিশ্রমিক তোমাদের কাছে চাই না। তবে এতটুকু চাই যে, তোমরা আত্মীয়তার অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখ। মানা না মানা তোমাদের ইচ্ছা। কিন্তু শক্ৰতা প্রদর্শনে তো কমপক্ষে আত্মীয়তার সম্পর্ক প্রতিবন্ধক হওয়া উচিত। বলাবাহুল্য, আত্মীয়তার অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখা স্বয়ং তাদেরই কর্তব্য ছিল। একে কোন শিক্ষা ও প্রচারকার্যের পারিশ্রমিক বলে অভিহিত করা যায় না। অর্থাৎ আমি তোমাদের কাছে এটা চাই। এটা প্রকৃতপক্ষে কোন পারিশ্রমিক নয়। তোমরা একে পারিশ্রমিক মনে করলে ভুল হবে। যুগে যুগে নবী রাসুলগণ নিজ নিজ সম্প্রদায়কে পরিস্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন, আমি তোমাদের মঙ্গলার্থে যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তার কোন বিনিময় তোমাদের কাছে চাই না। আমার প্রাপ্য আল্লাহ তা'আলাই দেবেন। অতএব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলের সেরা নবী হয়ে স্বজাতির কাছে কেমন করে বিনিময় চাইবেন? ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরাইশদের যে গোত্রের সাথে সম্পর্ক রাখতেন, তার প্রত্যেকটি শাখা-পরিবারের সাথে তাঁর আত্মীয়তার জন্মগত সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। [মুসনাদে আহমাদ: ১/২২৯] তাই আল্লাহ বলেছেন, আপনি মুশরিকদের বলুন, দাওয়াতের জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাই না। আমি চাই, তোমরা আত্মীয়তার খাতিরে আমাকে তোমাদের মধ্যে অবাধে থাকতে দাও এবং আমার হেফাযত কর। আরবের অন্যান্য লোক আমার হেফাযত ও সাহায্যে অগ্রণী হলে তোমাদের জন্যে তা গৌরবের বিষয় হবে না।

কোন কোন মুফাসসির القربى শব্দটিকে নৈকট্য (নৈকট্য অর্জন) অর্থে গ্রহণ করেন এবং আয়াতটির অর্থ করেছেন, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নৈকট্যের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া ছাড়া আমি তোমাদের কাছে এ কাজের জন্য আর কোন বিনিময় চাই না। অর্থাৎ তোমরা সংশোধিত হয়ে যাও। শুধু এটাই আমার পুরস্কার। এ ব্যাখ্যা হাসান বাসারী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে পবিত্র কুরআনের অন্য এক স্থানে বিষয়টি এ ভাষায় বলা হয়েছেঃ ‘এদের বলে দাও, এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। যার ইচ্ছা সে তার রবের পথ অনুসরণ করুক, (আমার পারিশ্রমিক শুধু এটাই)। [সূরা আল-ফুরকান: ৫৭] [দেখুন,তাবারী, ইবনে কাসীর, সা’দী]

৬৪ : ১৭
إِنْ تُقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۚ وَاللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ

যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর তিনি তোমাদের জন্য তা বহু গুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ গুণগ্ৰাহী, পরম সহিষ্ণু।
ফুটনোট

0:00
0:00