আল্লাহ পরম সহনশীল (সহিষ্ণু)
আল্লাহ পরম সহনশীল (সহিষ্ণু)
: ২২৫
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَٰكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا كَسَبَتْ قُلُوبُكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ

তোমাদের অনর্থক শপথের [১] আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না ; কিন্তু তিনি সেসব কসমের ব্যাপারে পাকড়াও করবেন, তোমাদের অন্তর যা সংকল্প করে অর্জন করেছে। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমাপরায়ণ, পরম সহিষ্ণু।

ফুটনোট

[১] ‘ইয়ামীনেলাগও’ বা ‘অনর্থক-কসম’-এর এক অর্থ হচ্ছে,কোন বিষয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ থেকে শপথ শব্দ বেরিয়ে পড়া। [বুখারী: ৪৬১৩]

কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে বলা বিষয়টিকে নিজের ধারণা মত সঠিক বলে মনে করেই শপথ করা। উদাহরণতঃ - নিজের জ্ঞান ও ধারণা অনুযায়ী কসম করে বসল যে, ‘যায়েদ এসেছে’। কিন্তু বাস্তবে সে আসেনি। [কুরতুবী:৪/১৭]

এ ধরনের শপথে কোন পাপ হবে না। আর সেজন্যই একে অহেতুক বলা হয়েছে। আখেরাতে এজন্য কোন জবাবদিহি করতে হবে না এবং এ ধরণের কসমের কোন কাফ্‌ফারাও নেই। যেসব কসমের জন্য জবাবদিহির কথা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে সে সব কসম যা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা জেনেই করা হয়। একে বলা হয় ‘গামুস’। এতে পাপ হয়। এ আয়াতে দু'রকমের কসম সম্পর্কেই আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও আরও এক প্রকারের কসম আছে, যাকে বলা হয় ‘মুন'আকেদাহ’। এর তাৎপর্য হলো যে, কেউ যদি ‘আমি অমুক কাজটি করব’ কিংবা 'অমুক বিষয়টি সম্পাদন করব’ বলে কসম খেয়ে তার বিপরীত কাজ করে, তাহলে এক্ষেত্রে তাকে কাফ্‌ফারা দিতেই হবে। [কুরতুবী ৪/১৯] সূরা আল-মায়িদাহ এর ৮৯ নং আয়াতে এর বিস্তারিত বর্ণনা ও বিধান বর্ণিত হয়েছে।

: ২৩৫
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُمْ بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنْتُمْ فِي أَنْفُسِكُمْ ۚ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَٰكِنْ لَا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَنْ تَقُولُوا قَوْلًا مَعْرُوفًا ۚ وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنْفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ

আর যদি তোমরা আকার ইঙ্গিতে (সে) নারীদের বিয়ের প্রস্তাব দাও বা তোমাদের অন্তরে গোপন রাখো তবে তোমাদের কোন পাপ নেই। আল্লাহ্‌ জানেন যে , তোমরা তাদের সম্বন্ধে অবশ্যই আলোচনা করবে ; কিন্তু বিধিমত কথাবার্তা ছাড়া গোপনে তাদের সাথে কোন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখো না ; এবং নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনের সংকল্প করো না। আর জেনে রাখো , নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদের অন্তরে যা আছে তা জানেন। কাজেই তাঁকে ভয় কর এবং জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল , পরম সহনশীল।
ফুটনোট

: ২৬৩
قَوْلٌ مَعْرُوفٌ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِنْ صَدَقَةٍ يَتْبَعُهَا أَذًى ۗ وَاللَّهُ غَنِيٌّ حَلِيمٌ

যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে ভাল কথা ও ক্ষমা উত্তম। আর আল্লাহ্‌ অভাবমুক্ত ও পরম সহনশীল।
ফুটনোট

: ১৫৫
إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا ۖ وَلَقَدْ عَفَا اللَّهُ عَنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ

যেদিন দু’দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল সেদিন তোমাদের মধ্য থেকে যারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল, তাদের কোন কৃতকর্মের ফলে শয়তানই তাদের পদস্খলন ঘটিয়েছিল। অবশ্য আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করেছেন [১]। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ ও পরম সহনশীল।

ফুটনোট

[১] সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা ও বিশ্বাস এই যে, যদিও সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম নিস্পাপ নন, তাদের দ্বারা বড় কোন পাপ সংঘটিত হয়ে যাওয়া সম্ভব, কিন্তু তা সত্ত্বেও উম্মতের জন্য তাদের কোন দোষচর্চা কিংবা দোষ আরোপ করা জায়েয নয়। আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাদের এত বড় পদস্থলন ও অপরাধ মার্জনা করে তাদের প্রতি দয়া ও করুণাপূর্ণ ব্যবহার করেছেন এবং তাদের

(رَّضِيَ اللّٰهُ عَنْھُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ)

অর্থাৎ “তাদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহ্‌র উপর সন্তুষ্ট” [সূরা আত-তাওবাহঃ ১০০, সূরা আল-মুজাদালাহঃ ২২]

-এ মহাসম্মানজনক মর্যাদায় ভূষিত করেছেন, তখন তাদেরকে কোন প্রকার অশালীন উক্তিতে স্মরণ করার কোন অধিকার অপর কারো পক্ষে কেমন করে থাকতে পারে? সে জন্যই এক সময় কোন এক সাহাবী যখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অন্যান্য কয়েকজন সাহাবী সম্পর্কে ওহুদ যুদ্ধের এই ঘটনার আলোচনায় বলেছেন যে, এরা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বললেনঃ আল্লাহ নিজে যে বিষয়ের ক্ষমা ঘোষণা করে দিয়েছেন, সে বিষয়ে সমালোচনা করার কোন অধিকার কারো নেই। [দেখুন, বুখারী ৪০৬৬]

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আহলে-সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আকীদা হলো সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে যেসব মতবিরোধ এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ ঘটেছে, সে সম্পর্কে কারো প্রতি কোন আপত্তি উত্থাপন কিংবা প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকা । কারণ, ইতিহাসে যেসব বর্ণনায় তাদের ক্রটি-বিচূতিসমূহ তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই মিথ্যা ও ভ্রান্ত; যা শক্ররা রটিয়েছে। আর কোন কোন ব্যাপার রয়েছে যে গুলোতে কম-বেশী করা হয়েছে এবং যেগুলো প্রকৃতই শুদ্ধ সেগুলোও একান্তই সাহাবীগণের স্ব স্ব ইজতিহাদের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়েছে বিধায় তাদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করা সমীচীন নয়। বস্তুতঃ ঘটনা বিশেষের মধ্যে যদি তারা সীমালঙ্ঘন করেও থাকেন, তবুও আল্লাহ তা’আলার রীতি হলো

(اِنَّ الْحَسَنٰتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّاٰتِ)

সৎকাজের মাধ্যমে অসৎ কর্মের কাফফারা হয়ে যায়। বলাবাহুল্য সাহাবায়ে কেরামের সৎকর্মের সমান অন্য কারো কর্মই হতে পারে না। কাজেই তারা আল্লাহ্ তা’আলার ক্ষমার যতটুকু যোগ্য, তেমন অন্য কেউ নয়। সে জন্যই তাদের আমল সম্পর্কে প্রশ্ন করার অধিকার অন্য কারো নেই। তাদের ব্যাপারে কটুক্তি বা অশালীন মন্তব্য করার অধিকারও অন্য কারো নেই। [আল-আকিদাতুল ওয়াসেতিয়্যা]

: ১০১
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ وَإِنْ تَسْأَلُوا عَنْهَا حِينَ يُنَزَّلُ الْقُرْآنُ تُبْدَ لَكُمْ عَفَا اللَّهُ عَنْهَا ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ

হে মুমিনগণ! তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না যা তোমাদের কাছে প্রকাশ হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে [১]। আর কুরআন নাযিলের সময় তোমরা যদি সেসব বিষয়ে প্রশ্ন কর তবে তা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হবে [২]। আল্লাহ সেসব [৩] ক্ষমা করেছেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল।

ফুটনোট

চৌদ্দতম রুকূ‘

[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, কিছু সংখ্যক লোক আল্লাহর বিধি-বিধানে অনাবশ্যক চুলচেরা ঘাটাঘাটি করতে আগ্রহী হয়ে থাকে এবং যেসব বিধান দেয়া হয়নি সেগুলো নিয়ে বিনা প্রয়োজনে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন তুলতে থাকে। আয়াতে তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন এরূপ প্রশ্ন না করে, যার ফলশ্রুতিতে তারা কষ্টে পতিত হবে কিংবা গোপন রহস্য ফাঁস হওয়ার কারণে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী ঐ ব্যক্তি যে এমন বস্তু সম্পর্কে প্রশ্ন করেছে, যা হারাম করা হয়নি। অতঃপর তার প্রশ্ন করার কারণে তা হারাম করে দেয়া হয়েছে।’ [বুখারীঃ ৭২৮৯, মুসলিমঃ ২৩৫৮]

আলোচ্য আয়াতসমূহের শানে-নুযুল এই যে, যখন হজ ফরয হওয়া সম্পর্কিত আদেশ নাযিল হয়, তখন আকরা ইবন হাবেস রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রশ্ন করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের জন্য কি প্রতি বছরই হজ করা ফরয? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। প্রশ্নকারী পুনর্বার প্রশ্ন করলেন। তিনি তবুও চুপ। প্রশ্নকারী তৃতীয় বার প্রশ্ন করলে তিনি শাসনের সুরে বললেন, যদি আমি তোমার উত্তরে বলে দিতাম যে, হ্যাঁ প্রতি বছরই হজ্জ ফরয, তবে তাই হয়ে যেত। কিন্তু তুমি এ আদেশ পালন করতে পারতে না। অতঃপর তিনি বললেন, যেসব বিষয় সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে কোন নির্দেশ দেইনা, সেগুলোকে সেভাবেই থাকতে দাও- ঘাটাঘাটি করে প্রশ্ন করো না। তোমাদের পূর্বে কোন কোন উম্মত বেশী প্রশ্ন করে সেগুলোকে ফরয করিয়ে নিয়েছিল এবং পরে সেগুলোর বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত হয়েছিল। আমি যে কাজের আদেশ দেই, সাধ্যানুযায়ী তা পালন করা এবং যে কাজ নিষেধ করি, তা পরিত্যাগ করাই তোমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত। [মুসলিম:১৩৩৭]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িয়ে এক অভূতপূর্ব ভাষণে বললেন, যদি তোমরা জানতে, যা আমি জানি তবে তোমরা অল্প হাসতে এবং বেশী করে কাঁদতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ মুখ ঢেকে কান্না আরম্ভ করলেন। তখন এক লোক ডেকে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার বাবা কে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অমুক। তখন এ আয়াত নাযিল হল।’ [বুখারীঃ ৪৬২১, মুসলিমঃ ২৩৫৯]

অপর আরেক বর্ণনায় এসেছে, কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে ঠাট্টা করে প্রশ্ন করত। কেউ কেউ বলতঃ আমার বাবা কে? কেউ বলতঃ আমার উট হারিয়ে গেছে, তা কোথায় আছে? এসব ব্যাপারে এ আয়াত নাযিল হয়। [বুখারীঃ ৪৬২২]

[২] বলা হয়েছে, কুরআন অবতরণকালে যদি তোমরা এরূপ প্রশ্ন কর, যাতে কোন বিধান বুঝতে তোমাদের সমস্যা হচ্ছে, তবে ওহীর মাধ্যমে উত্তর এসে যাবে, যা একান্তই সহজ বিষয়। কিন্তু যদি অন্য সময় হয়, তবে তোমাদের উচিত এ ব্যাপারে চুপ থাকা। [সা’দী, ইবন কাসীর] কোন কোন মুফাসসির বলেন, আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যখন কুরআন নাযিল হচ্ছে, তখন তোমাদের প্রশ্নের উত্তর আসবেই। কিন্তু তোমরা নিজেরা নতুন করে প্রশ্ন করতে যেও না; কারণ, এতে করে তোমাদের উপর কোন কঠিন বিধান এসে যেতে পারে। [ইবন কাসীর]

এতে ‘কুরআন অবতরণকাল’ বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কুরআন অবতরণ সমাপ্ত হলে নবুওয়াত ও ওহীর আগমনও বন্ধ করে দেয়া হবে। নবুওয়াতের আগমন খতম হয়ে যাওয়া ও ওহীর আগমন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ ধরনের প্রশ্নের ফলে যদিও নতুন কোন বিধান আসবে না এবং যা ফরয নয়, তা ফরয হবে না কিংবা ওহীর মাধ্যমে কারো গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে না, তথাপি অনাবশ্যক প্রশ্ন তৈরী করে সেগুলোর তথ্যানুসন্ধানে ব্যাপৃত হওয়া কিংবা অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা নবুওয়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও নিন্দনীয় ও নিষিদ্ধই থাকবে। কেননা, এতে করে নিজের ও অপরের সময় নষ্ট করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘মুসলিম হওয়ার একটি সৌন্দর্য এই যে, মুসলিম ব্যক্তি অনর্থক বিষয়াদি পরিত্যাগ করে।’ [তিরমিয়ীঃ ২৩১৭, ইবন মাজাহঃ ৩৯৭৬]

ইসলামের অন্যতম শিক্ষা এই যে, কোন দ্বীনী কিংবা জাগতিক উপকার লক্ষ্য না হলে যে কোন জ্ঞানানুশীলন, কর্ম অথবা কথায় ব্যাপৃত হওয়া উচিত নয়। তবে যদি কোন বিধানের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে কোন সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এসে থাকে, তবে সেটার বিস্তারিত জ্ঞান জেনে নেয়ার জন্য প্রশ্ন করা হলে সে ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা দেয়া হবে। আর যদি কোন বিষয়ে কোন বর্ণনাই না এসে থাকে, তবে সেটার ব্যাপারে নিরবতা পালন করাই হচ্ছে সঠিক নীতি। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি যতক্ষণ কোন বিষয় পরিত্যাগ করি ততক্ষণ তোমরা আমাকে ছাড় দাও; কেননা তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণ তাদের নবীদেরকে বেশী প্রশ্ন এবং বেশী বাদানুবাদের কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে’। [মুসলিম: ১৩৩৭] [ইবন কাসীর]

[৩] আয়াতের দুটি অর্থ হতে পারে, এক. আল্লাহ তোমাদের অতীতের প্রশ্নগুলোর কারণে পাকড়াও করা ক্ষমা করেছেন। [জালালাইন] দুই. যে সমস্ত বিষয়ে তোমরা প্রশ্ন করছ আল্লাহ তা’আলা সেগুলোর বর্ণনা করা ছেড়ে দিয়েছেন, যাতে বান্দাদেরকে এর পরিণতি থেকে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারেন। [মুয়াসসার]

১৭ : ৪৪
تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ ۚ وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَٰكِنْ لَا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ ۗ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا

সাত আসমান এবং যমীন এবং এগুলোর অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে [১] এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু তাঁদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা বুঝতে পার না; নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।

ফুটনোট

[১] ইচ্ছাগত তাসবীহ তো শুধু ফেরেশতা এবং ঈমানদার জিন ও মানবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে আল্লাহ্ তাআলা জগতের প্রত্যেকটি অণু-পরমাণুকে তাসবীহ পাঠ্যকারী বানিয়ে রেখেছেন। [ইবন কাসীর] কিন্তু তাদের এই সৃষ্টিগত ও বাধ্যতামূলক তাসবীহ সাধারণ মানুষের শ্রুতিগোচর হয়না। এ আয়াতেই বলা হয়েছে

, وَلَٰكِن لَّا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ ۗ

এ উক্তি এ কথা প্রমাণ করে যে, প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টিগত তাসবীহ এমন জিনিস, যা সাধারণ মানুষ বুঝতে সক্ষম নয়। অবস্থগত তাসবীহ তো বিবেকবান ও বুদ্ধিমানরা বুঝতে পারে। এ থেকে জানা গেল যে, এই তাসবীহ পাঠ শুধু অবস্থাগত নয়, সত্যিকারের; কিন্তু আমাদের বোধশক্তি ও অনুভূতির উর্ধের্ব। তাছাড়া মু'জেযা ও কারামত হিসেবে কখনও কখনও অচেতন বস্তু সমূহের তাসবীহও আল্লাহ তা'আলা মাঝে মধ্যে শুনিয়ে থাকেন। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাবার খেতাম, এমতাবস্থায় আমরা খাবারের তাসবীহও শুনতাম” [বুখারীঃ ৩৫৭৯]

অনুরূপভাবে মরা খেজুরগাছের কাঠের কান্না। [বুখারী: ৩৫৮৩]

মক্কার এক পাথর কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দেয়া। [মুসলিম: ২২৭৭]

উদাহরণতঃ সূরা ছোয়াদে দাউদ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “আমি পাহাড়সমূহকে আজ্ঞাবহ করে দিয়েছি। তারা দাউদের সাথে সকাল-বিকাল তাসবীহ পাঠ করে”। [১৮] সূরা আল-বাক্কারায় পাহাড়ের পাথর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “কতক পাথর আল্লাহর ভয়ে নীচে পড়ে যায়” [৭৪]। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পাথরের মধ্যেও চেতনা, অনুভূতি ও আল্লাহর ভয় রয়েছে। সূরা মারইয়ামে নাসারা সম্প্রদায় কর্তৃক ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র আখ্যায়িত করার প্রতিবাদে বলা হয়েছেঃ “তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্ৰহণ করেছেন। তোমরা তো এমন এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করছ; যাতে আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতমণ্ডলী চূৰ্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্ৰহণ করা দয়াময়ের শোভন নয়!”। [৮৮-৯২] বলাবাহুল্য, এই ভয়-ভীতি তাদের চেতনা ও অনুভূতির পরিচায়ক। চেতনা ও অনুভূতি থাকলে তসবীহ পাঠ করা অসম্ভব নয়।

২২ : ৫৮
وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوا أَوْ مَاتُوا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

আর যারা হিজরত করেছে আল্লাহ্‌র পথে, তারপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গেছে, তাদেরকে আল্লাহ্‌ অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন; আর নিশ্চয় আল্লাহ্‌, তিনি তো সর্বোৎকৃষ্ট রিযিকদাতা।
ফুটনোট

২২ : ৫৯
لَيُدْخِلَنَّهُمْ مُدْخَلًا يَرْضَوْنَهُ ۗ وَإِنَّ اللَّهَ لَعَلِيمٌ حَلِيمٌ

তিনি তাদেরকে অবশ্যই এমন স্থানে প্রবেশ করাবেন, যা তারা পছন্দ করবে, আর আল্লাহ্‌ তো সম্যক জ্ঞানী [১], পরম সহনশীল।

ফুটনোট

[১] এ আয়াতের শেষে আল্লাহ্‌র দু’টি গুরুত্বপূর্ণ গুণসম্পন্ন নাম এসেছে, যার সাথে আয়াতের বক্তব্যের সম্পর্ক নির্ণয়ে বলা যায় যে, প্রথম গুণটি বলা হয়েছে যে তিনি হচ্ছেন عليم বা সর্বজ্ঞাত অর্থাৎ তিনি জানেন কে প্রকৃতপক্ষে তাঁর পথে ঘর-বাড়ি ত্যাগ করেছে এবং সে কোন ধরনের পুরষ্কার লাভের যোগ্য। দ্বিতীয় গুণটি বলা হয়েছে, তিনি حليم বা পরম সহিষ্ণু অর্থাৎ এ ধরনের ছোট ছোট ভুল-ভ্রান্তি ও দুর্বলতার কারণে তাদের বড় বড় কর্মকাণ্ড ও ত্যাগকে তিনি বিনষ্ট করে দেবেন না। তিনি সেগুলো উপেক্ষা করবেন এবং তাদের অপরাধ মাফ করে দেবেন। [ইবন কাসীর]

৩৫ : ৪১
إِنَّ اللَّهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ أَنْ تَزُولَا ۚ وَلَئِنْ زَالَتَا إِنْ أَمْسَكَهُمَا مِنْ أَحَدٍ مِنْ بَعْدِهِ ۚ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا

নিশ্চয় আল্লাহ্‌ আসমানসমূহ ও যমীনকে ধারণ করেন, যাতে তারা স্থানচ্যুত না হয়, আর যদি তারা স্থানচ্যুত হয়, তবে তিনি ছাড়া কেউ নেই যে, তাদেরকে ধরে রাখতে পারে [১]। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল, অসীম ক্ষমাপরায়ণ।

ফুটনোট

[১] অন্য আয়াতে এসেছে, “আপনি কি দেখতে পান না যে, আল্লাহ তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন পৃথিবীতে যা কিছু আছে সেসবকে এবং তাঁর নির্দেশে সাগরে বিচরণশীল নৌযানসমূহকে? আর তিনিই আসমানকে ধরে রাখেন যাতে তা পড়ে না যায়। যমীনের উপর তাঁর অনুমতি ছাড়া। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি স্নেহপ্রবণ, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-হাজ: ৬৫] [আত-তাফসীরুস সহীহ]

৬৪ : ১৭
إِنْ تُقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۚ وَاللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ

যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর তিনি তোমাদের জন্য তা বহু গুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ গুণগ্ৰাহী, পরম সহিষ্ণু।
ফুটনোট

0:00
0:00