আরবি কুরআন
আরবি কুরআন
১২ :
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

নিশ্চয় আমরা এটা নাযিল করেছি [১] কুরআন হিসেবে আরবি ভাষায় যাতে তোমরা বুঝতে পারো [২]।

ফুটনোট

[১] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুরআন নাযিল হয়েছে রামাদান মাসের চব্বিশ দিন গত হওয়ার পর। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/১০৭]

[২] অর্থাৎ আমি একে আরবী কুরআন হিসেবে নাযিল করেছি, হয়ত এতে তোমরা বুঝতে পারবে। আল্লাহ্ তা'আলা আরবদের ভাষায় এ কাহিনী নাযিল করেছেন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সততা ও সত্যতায় বিশ্বাস স্থাপন করে এবং কাহিনীতে বর্ণিত বিধান ও নির্দেশাবলীকে চলার পথের আলোকবর্তিকা হিসেবে গ্রহণ করে। আরবী ভাষায় নাযিল হওয়ার পেছনে একটি কারণ হচ্ছে, আরবী ভাষা সবচেয়ে প্রাঞ্জল ভাষা এবং সবচেয়ে প্রশস্ত ভাষা। তাই আল্লাহ্ চাইলেন যে, তার সবচেয়ে সম্মানিত কিতাবটি সবচেয়ে মহৎ মাধ্যমে। আর তাও সংঘটিত হয়েছিল সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ভূমিতে। অনুরূপভাবে তার নাযিল হওয়াও শুরু হয়েছিল বছরের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মাসে। আর তা হচ্ছে রামাদান। তাই এ কুরআন সবদিক থেকেই পরিপূর্ণ। তাই এরপরই আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন যে, “আমরা আপনার কাছে উত্তম কাহিনী বর্ণনা করছি, ওহীর মাধ্যমে আপনার কাছে এ কুরআন পাঠিয়ে” অর্থাৎ এ কুরআন আপনার কাছে ওহী করার কারণেই তা বলা সম্ভব হয়েছে। [ইবন কাসীর]

১৩ : ৩৭
وَكَذَٰلِكَ أَنْزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا ۚ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُمْ بَعْدَمَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا وَاقٍ

আর এভাবেই [১] আমরা কুরআনকে নাযিল করেছি আরবী ভাষায় বিধানরূপে। আর জ্ঞান পাওয়ার পরও যদি আপনি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেন তবে আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে [২] আপনার কোন অভিভাবক ও রক্ষক থাকবে না [৩]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ যেভাবে আপনার পূর্বে আমরা অনেক নবী-রাসূল পাঠিয়েছি এবং আপনার পূর্বে যখনই প্রয়োজন মনে করেছি তখনই কিতাব পাঠিয়েছি সেভাবে আমরা আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি এবং আমরা আপনাকে কুরআন নামক গ্রন্থখানি দিয়েছি, তাকে আরবী ভাষায় নাযিল করেছি। [ইবন কাসীর; মুয়াসসার]

এ কিতাব আপনার উপর নাযিল করে আমি আপনাকে সম্মানিত করেছি এবং অন্যদের উপর আপনার শ্ৰেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছি। কারণ, এ কুরআনের বৈশিষ্ট্য অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। এটি এমন যে, “বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না-সামনে থেকেও না, পিছন থেকেও না। এটা প্রজ্ঞাময়, স্বপ্রশংসিতের কাছ থেকে নাযিলকৃত।” [সূরা ফুসসিলাতঃ ৪২] [ইবন কাসীর]

অথবা আয়াতের অর্থ যেভাবে প্রত্যেক নবী ও রাসূলকে তাদের নিজস্ব ভাষায় কিতাব দিয়েছি তেমনি আপনাকে আরবী ভাষায় এ কুরআন প্রদান করলাম। [কুরতুবী]

[২] অর্থাৎ আল্লাহ্‌র শাস্তি ও পাকড়াও এর বিপরীতে আপনার কোন সাহায্যকারী থাকবে না। [মুয়াসসার]

[৩] তাদের খেয়ালখুশীর কোন শেষ নেই। তবে বিশেষ করে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করা। [কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই কারও খেয়াল-খুশী ও কোন মনগড়া মতের অনুসারী হতে পারেন না। এখানে রাসূলের উম্মতদেরকে সাবধান করা হচ্ছে। বিশেষ করে এ উম্মতের আলেম সম্প্রদায়কেই এখানে বেশী উদ্দেশ্য করা হয়েছে। তারা যেন আল্লাহ্‌র নির্দেশ, কুরআন ও সুন্নাহ বোঝার পর অন্য কোন কারণে সেটা বাস্তবায়ন করতে পিছপা না হয়। অন্য কোন মত ও পথের অনুসারী না হয়। অন্যথা তাদের পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের কোন সাহায্যকারী, উদ্ধারকারী ও অভিভাবক থাকবে না। [দেখুন, ইবন কাসীর]

১৬ : ১০৩
وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّهُمْ يَقُولُونَ إِنَّمَا يُعَلِّمُهُ بَشَرٌ ۗ لِسَانُ الَّذِي يُلْحِدُونَ إِلَيْهِ أَعْجَمِيٌّ وَهَٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُبِينٌ

আর আমরা অবশ্যই জানি যে, তারা বলে, ‘তাকে তো কেবল একজন মানুষ [১] শিক্ষা দেয়’। তারা যার প্রতি এটাকে সম্পর্কযুক্ত করার জন্য ঝুঁকছে তার ভাষা তো আরবী নয় ; অথচ এটা (কুরআন) হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা।

ফুটনোট

[১] বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মক্কার কাফেররা তাদের মধ্য থেকে কারো সম্পর্কে এ ধারণা করতো। এক হাদীসে তার নাম বলা হয়েছে জাবর। সে ছিল আমের আল হাদরামীর রোমীয় ক্রীতদাস। অন্য এক বর্ণনায় খুয়াইতিব ইবনে আবদুল উয্যার এক গোলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তার নাম ছিল ‘আইশ বা ইয়াঈশ’। তৃতীয় এক বর্ণনায় ইয়াসারের নাম নেয়া হয়েছে। তার ডাকনাম ছিল আবু ফুকাইহাহ। সে ছিল মক্কার এক মহিলার ইহুদী গোলাম। অন্য একটি বর্ণনায় বিল’আম নামক একটি রোমীয় গোলামের কথা বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] মোটকথা: এদের মধ্য থেকে যেই হোক না কেন, মক্কার কাফেররা শুধুমাত্র এক ব্যক্তি তাওরাত ও ইন্জিল পড়ে এবং তার সাথে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাতও হয়েছে শুধুমাত্র এটা দেখেই নিসংকোচে এ অপবাদ তৈরী করে ফেললো যে, আসলে এ ব্যক্তিই এ কুরআন রচনা করছে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নামে নিজের পক্ষ থেকে এটিই পেশ করছেন। এভাবে মক্কার কুরাইশ কাফেররা সামান্য কিছু তাওরাত ও ইনজিল পড়তে পারতো এমন একজন অখ্যাত দাসকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত মহান ব্যক্তিত্বের মোকাবিলায় যোগ্যতর বিবেচনা করছিল। তারা ধারণা করছিল, এ দুর্লভ রত্নটি ঐ কয়লা খণ্ড থেকেই দ্যুতি লাভ করছে। কাফের কুরাইশদের এ ধারণাটি নিশ্চয় হাস্যকর। [দেখুন, ইবন কাসীর]

২০ : ১১৩
وَكَذَٰلِكَ أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا وَصَرَّفْنَا فِيهِ مِنَ الْوَعِيدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ أَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا

আর এভাবেই আমরা কুরআনকে নাযিল করেছি আরবি ভাষায় এবং তাতে বিশদভাবে বিবৃত করেছি সতর্কবাণী, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে অথবা এটা তাদের মধ্যে স্মরণিকার উৎপত্তি করে।
ফুটনোট

২৬ : ১৯৫
بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُبِينٍ

সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় [১]।

ফুটনোট

[১] আয়াত থেকে জানা গেল যে, আরবী ভাষায় লিখিত কুরআনই কুরআন। অন্য যে কোন ভাষায় কুরআনের কোন বিষয়বস্তুর অনুবাদকে কুরআন বলা হবে না। দেখুন- [ইবন কাসীর]

৩৯ : ২৮
قُرْآنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِي عِوَجٍ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ

আরবী ভাষায় এ কুরআন বক্রতামুক্ত, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।
ফুটনোট

৪১ :
كِتَابٌ فُصِّلَتْ آيَاتُهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

এক কিতাব, বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে এর আয়াতসমূহ, কুরআনরূপে আরবী ভাষায়, জ্ঞানী সম্পপ্রদায়ের জন্য,
ফুটনোট

৪৩ :
إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

নিশ্চয় আমরা এটাকে (অবতীর্ণ) করেছি আরবী (ভাষায়) কুরআন, যাতে তোমরা বুঝতে পার।
ফুটনোট

৪৪ : ৫৮
فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

অতঃপর নিশ্চয় আমরা আপনার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্ৰহণ করে।
ফুটনোট

0:00
0:00