খেজুর
খেজুর
: ২৬৬
أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَنْ تَكُونَ لَهُ جَنَّةٌ مِنْ نَخِيلٍ وَأَعْنَابٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ لَهُ فِيهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَأَصَابَهُ الْكِبَرُ وَلَهُ ذُرِّيَّةٌ ضُعَفَاءُ فَأَصَابَهَا إِعْصَارٌ فِيهِ نَارٌ فَاحْتَرَقَتْ ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ

তোমাদের কেউ কি চায় যে, তাদের খেজুর ও আঙ্গুরের একটি বাগান থাকবে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত থাকবে এবং যেটাতে তার জন্য সবরকমের ফলমূল থাকবে। আর সে ব্যাক্তিকে বার্ধক্য অবস্থা পেয়ে বসবে এবং তার কিছু দুর্বল সন্তান-সন্ততি থাকবে , তারপর তার (এ বাগানের) উপর এক অগ্নিঝরা ঘূর্ণিঝড় আপতিত হয়ে তা জ্বলে যাবে ? এভাবে আল্লাহ্‌ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন , যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পার [১]।

ফুটনোট

[১] এ আয়াতে বলা হয়েছেঃ তোমাদের কেউ পছন্দ করবে কি যে, তার একটি আঙ্গুর ও খেজুরের বাগান হবে, বাগানের নীচ দিয়ে পানির নহরসমূহ প্রবাহিত হবে, বাগানে সব রকম ফল থাকবে, সে নিজে বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং তার দুর্বল ও শক্তিহীন ছেলেসন্তানও বর্তমান থাকবে, এমতাবস্থায় বাগানে দাবানল আঘাত হানবে এবং বাগানটি জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাবে? আল্লাহ্‌ তা'আলা এমনিভাবে তোমাদের জন্য নয়ীর বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।

এ উদাহরণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যোগ করা হয়েছে; অর্থাৎ সে বৃদ্ধ হয়ে গেল, তার সন্তান-সন্ততিও আছে এবং সন্তানগুলো অল্পবয়স্ক; ফলে দুর্বল ও শক্তিহীন। এসব শর্তের উদ্দেশ্য এই যে, যৌবনে কারো বাগান ও শষ্যক্ষেত্র জ্বলে গেলে সে পুনরায় বাগান করে নেয়ার আশা করতে পারে, কিংবা যার সন্তান-সন্ততি নেই এবং পুনরায় বাগান করে নেয়ার আশাও নেই, বাগান জ্বলে যাওয়ার পরও তার পক্ষে জীবিকার ব্যাপারে তেমন চিন্তিত হওয়ার কথা নয়। একটিমাত্র লোকের ভরণ-পোষণ, কষ্টে-সৃষ্টে হলেও চলে যায়। পক্ষান্তরে যদি সন্তান-সন্ততিও থাকে এবং পিতার কাছে সহযোগিতা ও সাহায্য করার মত বলিষ্ঠ যুবক ও সৎসন্তানসন্ততি থাকে, তবুও বাগান ধ্বংস হওয়ার দরুন তেমন বেশী চিন্তা ও ব্যথার কারণ নেই। কেননা, সে সন্তান-সন্ততির চিন্তা থেকে মুক্ত। বরং সন্তানেরা তার বোঝাও বহন করতে সক্ষম। মোটকথা এ তিনটি শর্তেই মুখাপেক্ষিতার তীব্রতা বর্ণনা করার জন্য যোগ করা হয়েছে। অর্থাৎ সে অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে বাগান করল, বাগান তৈরী হয়ে ফলও দিতে লাগল, এমতাবস্থায় সে বৃদ্ধ হয়ে পড়ল। তার সন্তান-সন্ততিও বর্তমান এবং সন্তানগুলো অল্প বয়স্ক ও দুর্বল। এহেন মুহুর্তে যদি তৈরী-বাগান জ্বলে-পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়, তবে তীব্র আঘাত ও অপরিসীম কষ্টেরই কথা। একদিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা কি জান এই আয়াতটি কি বিষয়ে নাযিল হয়েছে -“তোমাদের কেউ কি পছন্দ কর যে, তার একটি বাগান হবে”। [সূরা আল-বাকারাঃ ২৬৬]

এ কথা শুনে তারা বললেনঃ আল্লাহ্‌ই সবচাইতে ভাল জানেন। এ কথা শুনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রেগে গিয়ে বললেনঃ বরং (পরিস্কার করে) জানি অথবা জানিনা বলুন। তখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! এ ব্যাপারে আমার মনে একটি কথা জাগতেছে। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ হে আমার ভাতিজা, বল, এবং তুমি তোমাকে ছোট মনে করো না। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বললেনঃ এখানে আল্লাহ্‌ আমলের একটি উদাহরণ পেশ করেছেন। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ কোন উদাহরণ? ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বললেনঃ শুধুমাত্র আমলের উদাহরণ (হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে)। এ কথা শুনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি আল্লাহ্‌র বিধি-নিষেধ মেনে আমল করছে; অতঃপর আল্লাহ্‌ তার নিকট শয়তানকে প্রেরণ করলেন। তখন শয়তানের নির্দেশে নাফরমানী করতে লাগল। এমনকি তার সমস্ত নেক আমলকে সে বরবাদ করে ফেলল। [বুখারীঃ ৪৫৩৮]

সবগুলো আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করলে আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় ও দান-সদকা গ্রহণীয় হওয়ার জন্য ছয়টি শর্ত জানা যাবে।

প্রথমতঃ যে ধন-সম্পদ আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করা হয়, তা হালাল হতে হবে। দ্বিতীয়তঃ সুন্নাহ অনুযায়ী ব্যয় করতে হবে। তৃতীয়তঃ বিশুদ্ধ খাতে ব্যয় করতে হবে। চতুর্থতঃ খয়রাত দিয়ে অনুগ্রহ প্রকাশ করা যাবে না। পঞ্চমতঃ যাকে দান করা হবে,তার সাথে এমন ব্যবহার করা যাবে না, যাতে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। ষষ্টতঃ যা কিছু ব্যয় করা হবে, খাঁটি নিয়্যতের সাথে এবং আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির সাথেই করতে হবে - নাম-যশের জন্য নয়। অর্থাৎ ব্যয় করতে হবে ইখলাসের সাথে।

: ৫৩
أَمْ لَهُمْ نَصِيبٌ مِنَ الْمُلْكِ فَإِذًا لَا يُؤْتُونَ النَّاسَ نَقِيرًا

তবে কি রাজশক্তিতে তাদের কোন অংশ আছে? সে ক্ষেত্রেও তো তারা কাউকে এক কপর্দকও দেবে না [১]।

ফুটনোট

[১] ইবনে আব্বাস বলেন, খেজুরের দানার উপরে বিন্দুর মত যে ছিদ্র থাকে তাকেই আরবীতে (نقير) ‘নাকীর’ বলা হয়। [তাবারী] মোটকথা: সামান্যতম জিনিস বোঝানোর জন্যই এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

: ১২৪
وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا

আর পুরুষ বা নারীর মধ্যে কেউ মুমিন অবস্থায় সৎ কাজ করলে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও যুলুম করা হবে না।
ফুটনোট

: ৯৯
وَهُوَ الَّذِي أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ نَبَاتَ كُلِّ شَيْءٍ فَأَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًا نُخْرِجُ مِنْهُ حَبًّا مُتَرَاكِبًا وَمِنَ النَّخْلِ مِنْ طَلْعِهَا قِنْوَانٌ دَانِيَةٌ وَجَنَّاتٍ مِنْ أَعْنَابٍ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُشْتَبِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ۗ انْظُرُوا إِلَىٰ ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَيَنْعِهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكُمْ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

আর তিনিই আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, তারপর তা দ্বারা আমারা সব রকমের উদ্ভিদের চারা উদগম করি; অতঃপর তা থেকে সবুজ পাতা উদ্গত করি। যা থেকে আমারা ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি। আরও (নির্গত করি) খেজুর গাছের মথি থেকে ঝুলন্ত কাঁদি , আংগুরের বাগান , যায়তুন ও আনার। একটার সাথে অন্যটার মিল আছে, আবার নেইও। লক্ষ্য করুন, ওগুলো ফলবান হয় এবং সেগুলো পেকে উঠার পদ্ধতির প্রতি। নিশ্চয় মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য এগুলোর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে [১]।

ফুটনোট

[১] উপরোক্ত ৯৫- ৯৯ আয়াতসমূহে প্রথমে অধঃজগতের বস্তুসমূহ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে। কারণ এগুলো আমাদের অধিক নিকটবর্তী। এরপর এগুলোর বর্ণনাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে, এক. মাটি থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদ, বৃক্ষ ও বাগানের বর্ণনা এবং দুই. মানব ও জীবজন্তুর বর্ণনা। এরপর শূন্য জগতের উল্লেখ করা হয়েছে; অর্থাৎ সকাল ও বিকাল। এরপর উর্ধ্ব জগতের সৃষ্ট বস্তু বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি। অতঃপর অধঃজগতের বস্তুসমূহ অধিক প্রত্যক্ষ হওয়ার কারণে এগুলোর পূর্ণ বর্ণনা দ্বারা আলোচনা সমাপ্ত করা হয়েছে।

: ১৪১
وَهُوَ الَّذِي أَنْشَأَ جَنَّاتٍ مَعْرُوشَاتٍ وَغَيْرَ مَعْرُوشَاتٍ وَالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا أُكُلُهُ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ۚ كُلُوا مِنْ ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ ۖ وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ

আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন বাগানসমূহ যার কিছু মাচানির্ভর অপর কিছু মাচানির্ভর নয় এবং খেজুর বৃক্ষ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, আর যায়তুন ও আনার, এগুলো একটি অন্যটির মত, আবার বিভিন্ন রূপেরও। যখন ওগুলো ফলবান হবে তখন সেগুলোর ফল খাবে এবং ফসল তোলার দিন সে সবের হক প্রদান করবে [১]। আর অপচয় করবে না; নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।

ফুটনোট

সতেরতম রুকূ’

[১] বিভিন্ন বৃক্ষ ও ফল সম্পর্কে উল্লেখ করার পর মানুষের প্রতি দু’টি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রথম নির্দেশ মানুষের বাসনা ও প্রবৃত্তির দাবীর পরিপূরক। বলা হয়েছেঃ এসব বৃক্ষের ও শস্যক্ষেত্রের ফল ভক্ষন কর, যখন এগুলো ফলন্ত হয়। এতে ইঙ্গিত আছে যে, এসব বিভিন্ন প্রকার বৃক্ষ সৃষ্টি করে সৃষ্টিকর্তা নিজের কোন প্রয়োজন মেটাতে চান না; বরং তোমাদেরই উপকারের জন্য এগুলো সৃষ্টি করেছেন। অতএব, তোমরা খাও এবং উপকৃত হও। ‘ফলন্ত হয়’ একথা বলে এদিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, বৃক্ষের ডাল থেকে ফল বের করা তোমাদের সাধ্যাতীত কাজ। কাজেই আল্লাহর নির্দেশে যখন ফল বের হয়ে আসে, তখনই তোমরা তা খেতে পার- পরিপক্ক হোক বা না হোক।

দ্বিতীয় নির্দেশ হলোঃ এ সমস্ত জমীনের ফসল কাটার সময় তার হক্ব আদায় কর। ফসল কাটা কিংবা ফল নামানোর সময়কে (حصاد) বলা হয়। (حصاد) শব্দের পরে ব্যবহৃত (هِ) সর্বনাম পূর্বোল্লেখিত প্রত্যেকটি খাদ্যবস্তুর দিকে যেতে পারে। বাক্যের অর্থ এই যে, এমন বস্তু খাও, পান কর এবং ব্যবহার কর; কিন্তু মনে রাখবে যে, ফসল কাটা কিংবা ফল নামানোর সময় এদের হকও আদায় করতে হবে। ‘হক’ বলে ফকীর-মিসকীনকে দান করা বুঝানো হয়েছেঃ

(وَفِيْٓ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّاىِٕلِ وَالْمَحْرُوْمِ)

অর্থাৎ সৎ লোকদের ধন-সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে ফকীর-মিসকীনদের।

এখানে সাধারণ দান-সদকা বোঝানো হয়েছে, না ক্ষেতের যাকাত ও ওশর বোঝানো হয়েছে, এ সম্পর্কে মুফাসসিরীন সাহাবা ও তাবেয়ীগণের দু'রকম উক্তি রয়েছে। কেউ কেউ প্রথমোক্ত মত প্রকাশ করে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে, আয়াতটি মক্কায় নাযিল হয়েছে আর যাকাত মদীনায় হিজরত করার দুই বছর পর ফরজ করা হয়েছে।তাই এখানে ‘হক’-এর অর্থ ক্ষেতের যাকাত হতে পারে না। পক্ষান্তরে কেউ কেউ আয়াতটিকে মদীনায় নাযিল বলেছেন এবং (حق) -এর অর্থ যাকাত ও ওশর নিয়েছেন। তাদের মতে যেসব ক্ষেতে পানি সেচনের ব্যবস্থা নেই, শুধু বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতে হয়, সেসব ক্ষেতের উৎপন্ন ফসলের দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে দান করা ওয়াজিব এবং যেসব ক্ষেত কৃপ, নদী-নালা, পুকুর ইত্যাদির পানি দ্বারা সেচ করা হয়, সেগুলোর উৎপন্ন ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ ওয়াজিব। এটাও বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।

১৩ :
وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُتَجَاوِرَاتٌ وَجَنَّاتٌ مِنْ أَعْنَابٍ وَزَرْعٌ وَنَخِيلٌ صِنْوَانٌ وَغَيْرُ صِنْوَانٍ يُسْقَىٰ بِمَاءٍ وَاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الْأُكُلِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

আর যমীনে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড [১], আঙ্গুর বাগান, শস্যক্ষেত্র, একই মূল থেকে উদগত বা ভিন্ন ভিন্ন মূল থেকে উদগত খেজুর গাছ [২] যেগুলো একই পানি দ্বারা সেচ করা হয়, আর স্বাদ-রূপের ক্ষেত্রে সেগুলোর কিছু সংখ্যককে আমরা কিছু সংখ্যকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি [৩]। নিশ্চয় বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন [৪]।

ফুটনোট

[১] এখানে আল্লাহ্ তা'আলা নতুন করে অন্য আরেক প্রকার নিদর্শন পেশ করছেন। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ সারা পৃথিবীকে তিনি একই ধরনের একটি ভূখণ্ড বানিয়ে রেখে দেননি। বরং তার মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য ভূখণ্ড, এ ভূখণ্ডগুলো পরস্পর সংলগ্ন থাকা সত্ত্বেও আকার-আকৃতি, রং, গঠন, উপাদান, বৈশিষ্ট্য, শক্তি ও যোগ্যতা এবং উৎপাদনে পরস্পরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। এগুলোর কোনটি এমন যে, তাতে শস্য উৎপন্ন হয় আবার কোন কোনটি একেবারে অকেজো ভূমি যাতে কোন কিছুই উৎপন্ন হয়না অথচ এ দু'ধরনের ভূমিই পাশাপাশি অবস্থিত। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] এ বিভিন্ন ভূখণ্ডের সৃষ্টি এবং তাদের মধ্যে নানা প্রকার বিভিন্নতার অস্তিত্ব এত বিপুল পরিমান জ্ঞান ও কল্যাণে পরিপূর্ণ যে, তা গণনা করে শেষ করা যেতে পারে না। এ ভূখণ্ড লাল, অপরটি সাদা, কোনটি হলুদ, কোনটি কালো, কোনটি পাথুরে, কোনটি সমতল, কোনটি বালুময়, কোনটি দো-আঁশ, কোনটি মিহি, অথচ সবগুলোই পাশাপাশি। প্রতিটি তার গুণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আছে। এসব কিছুই প্রমাণ করছে যে, একজন ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন ক্ষমতাধর সত্তা রয়েছেন যিনি এগুলো করেছেন। তিনিই একমাত্র ইলাহ, তাঁর কোন শরীক নেই। তিনিই একমাত্র রব, তিনি ব্যতীত আর কোন রব নেই। [ইবন কাসীর] তাছাড়া কোন কোন ভূমি পাশাপাশি নয় অথচ তাদের মধ্যে একই ধরণের শক্তি, যোগ্যতা পাওয়া যায়। এখানে ‘পাশাপাশি নয়’ এ কথাটি উহ্য থাকতে পারে। [ফাতহুল কাদীর]

[২] কিছু কিছু খেজুর গাছের মূল থেকে একটি খেজুর গাছ বের হয় আবার কিছু কিছুর মূল থেকে একাধিক গাছ বের হয়। [ফাতহুল কাদীর]

[৩] এ আয়াতে আল্লাহ্‌র তাওহীদ এবং তাঁর শক্তি ও জ্ঞানের নিদর্শনাবলী দেখানো ছাড়া আরো একটি সত্যের দিকেও সূক্ষ্ম ইশারা করা হয়েছে। এ সত্যটি হচ্ছে, আল্লাহ্ এ বিশ্ব-জাহানের কোথাও এক রকম অবস্থা রাখেননি। একই পৃথিবী কিন্তু এর ভূখণ্ডগুলোর প্রত্যেকের বর্ণ, আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। একই জমি ও একই পানি, কিন্তু তা থেকে বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। একই গাছ কিন্তু তার প্রত্যেকটি ফল একই জাতের হওয়া সত্বেও তাদের আকৃতি, আয়তন, স্বাদ, গন্ধ, রূপ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। একই মূল থেকে দু’টি ভিন্ন গাছ বের হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যেকেই নিজের একক বৈশিষ্টের অধিকারী। যে ব্যক্তি এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে সে অবশ্যই এতে একজন ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন সত্তার কার্য সক্রিয় আছে দেখতে পাবে। যিনি তার অসীম ক্ষমতায় এগুলোর মধ্যে পার্থক্য করেছেন। তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেছেন সেভাবে সৃষ্টি করেছেন। এজন্যই আল্লাহ্ তা’আলা সবশেষে বলেছেন যে, নিশ্চয় বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য এতে রয়েছে প্রচুর নিদর্শন। [ইবন কাসীর]

[৪] বলা হচ্ছে, এই যে পরস্পর পাশাপাশি দু’টি ভূমিতে আল্লাহ্ তা'আলা বিভিন্ন প্রকার ফল-ফলাদি উৎপন্ন করেন, তন্মধ্যে একই ফল একই জমিতে একই পানি দ্বারা উৎপন্ন করি তারপরও সেটার স্বাদ দু'রকমের হয়। একটি মিষ্ট অপরটি টক। একটি অত্যন্ত উন্নতমানের অপরটি অনুন্নত পর্যায়ের। একটি চিত্তাকর্ষক অপরটি তেমন নয়। এসব কিছুতে কেউ চিন্তা, গবেষণা ও বিবেক খাটালে যে কেউ অবশ্যই মেনে নিতে বাধ্য হবে যে, এর বিভিন্নতার প্রকৃত কারণ এক মহান প্রজ্ঞাময় সত্তার শক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। কেননা, সাধারণত: যে কারণে ফল-ফলাদিতে পার্থক্য সূচিত হয় তা দু’টি। এক. উৎপন্নস্থানের ভিন্নতা, দুই. পানির গড়মিল। কিন্তু যদি জমি ও পানি একই প্রকার হয়, তারপর যদি সেটাতে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা ও ফল পরিলক্ষিত হয় তবে বিবেকবান মাত্রই এটা বলতে বাধ্য হবে যে, এটা সেই অপার শক্তি ও আশ্চর্যজনক কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। [ফাতহুল কাদীর]

মুজাহিদ বলেন, এটা মূলত: আদম সন্তানদের জন্য একটি উদাহরণ, তাদের মধ্যে নেককার ও বদকার হয়েছে অথচ তাদের পিতা একজনই। হাসান বসরী বলেন, এ উদাহরণটি আল্লাহ্ তা'আলা আদম সন্তানদের হৃদয়ের জন্য পেশ করেছেন। কারণ, যমীন মহান আল্লাহ্র হাতে একটি কাদামাটির পিণ্ড ছিল। তিনি সেটাকে বিছিয়ে দিলেন, ফলে সেটা পরস্পর পাশাপাশি টুকরায় পরিণত হলো, তারপর তাতে আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হলো, ফলে তা থেকে বের হলো, ফুল, গাছ, ফল ও উদ্ভিদ। আর এ মাটির কোনটি হল খারাপ, লবনাক্ত ও অস্বচ্ছ। অথচ এগুলো সবই একই পানি দিয়ে সিক্ত হয়েছে। অনুরূপভাবে মানুষও আদম ‘আলাইহিস্ সালাম থেকে সৃষ্টি হয়েছে। অতঃপর আসমান থেকে তাদের জন্য স্মরণিকা (কিতাব) নাযিল হলো, কিছু অন্তর নরম হলো এবং বিনীত হলো, আর কিছু অন্তর কঠোর হলো এবং গাফেল হলো। হাসান বসরী বলেন, কুরআনের কাছে কেউ যখন বসে তখন সে সেখান থেকে বেশী বা কম কিছু না নিয়ে বের হয় না। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “আর আমরা নাযিল করি কুরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে" [সূরা আল-ইসরাঃ ৮২] এতে অবশ্যই বিবেকবানদের জন্য প্রচুর নিদর্শন রয়েছে। [বাগভী]

১৬ : ১১
يُنْبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالْأَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

তিনি তোমাদের জন্য তা [১] দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তূন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সব রকমের ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন [২]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ একই পানি দিয়ে আল্লাহ তা'আলা বহু প্রকার ফল-ফলাদি, ভিন্ন ভিন্ন স্বাদে ও গন্ধে, ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতিতে উৎপন্ন করেন এটা নিশ্চয়ই এক বিস্ময়কর ব্যাপার। [এ ব্যাপারে আরো দেখুন সূরা আন-নামলঃ ৬০]

[২] এসব আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলার নেয়ামত ও অভিনব রহস্য সহকারে জগত সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। যারা এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে, তারা এমন সাক্ষ্য-প্রমাণ পায়, যার ফলে আল্লাহ্ তা'আলার তাওহীদ যেন চোখের সামনে ফুটে উঠে। এ কারণেই নেয়ামতগুলোর উল্লেখ করে বার বার এ বিষয়ের প্রতি হুশিয়ার করা হয়েছে। এ আয়াতের শেষে বলা হয়েছে যে,

এতে চিন্তাশীলদের জন্য প্রমাণ রয়েছে। কেননা, ফসল ও বৃক্ষ এসবের ফল ও ফুলের যে সম্পর্ক আল্লাহ্ তা'আলার কারিগরি ও রহস্যের সাথে রয়েছে তা কিছুটা চিন্তা-ভাবনার দাবী রাখে। মানুষের চিন্তা করা দরকার যে, শস্য কণা কিংবা আটি মাটির নিচে ফেলে রাখলে এবং পানি দিলে আপনা-আপনি বিরাট মহীরূহে পরিণত হতে পারে না এবং তা থেকে রঙ-বেরঙয়ের ফুল-ফল উৎপন্ন হতে পারে না। যা হয়, তাতে কোন কৃষক-ভূস্বামীর কর্মের দখল নেই। বরং সবই সর্বশক্তিমানের কারিগরি ও রহস্য। তিনি একই পানি দ্বারা সেগুলোকে উৎপন্ন করেন, অথচ সেগুলোর প্রকার, স্বাদ, গন্ধ, রং, প্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এগুলো সবই প্রমান করছে যে, তিনি ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

“নাকি তিনি, যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও যমীন এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেন বৃষ্টি, তারপর আমরা তা দ্বারা মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি, তার গাছ উদগত করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? তবুও তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা (আল্লাহর) সমকক্ষ নির্ধারণ করে " [সূরা আন-নামল: ৬০]

১৬ : ৬৭
وَمِنْ ثَمَرَاتِ النَّخِيلِ وَالْأَعْنَابِ تَتَّخِذُونَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

আর খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক [১]; নিশ্চয় এতে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন [২]।

ফুটনোট

[১] এ আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন, খেজুর ও আঙ্গুরের ফলসমূহের মধ্য থেকেও মানুষ তার খাদ্য ও লাভজনক সামগ্রী তৈরী করে। এর একটি হলো- মাদকদ্রব্য, যাকে মদ্য ও শরাব বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয়টি হলো উত্তম জীবনোপকরণ অর্থাৎ উত্তম রিযক। যেমন, খেজুর ও আঙ্গুরের তাজা খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায় অথবা শুকিয়ে তাকে মজবুতও করে নেয়া যায়। সুতরাং মর্মার্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর অপার শক্তিবলে খেজুর ও আঙ্গুর ফল মানুষকে দান করেছেন এবং তদ্বারা খাদ্য ইত্যাদি প্রস্তুত করার ক্ষমতাও দিয়েছেন। [দেখুন, সা’দী]

[২] অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে (سَكْر) এর অর্থ মাদকদ্রব্য, যা নেশা সৃষ্টি করে। আলোচ্য আয়াতটি সর্বসম্মতিক্রমে মক্কায় নাযিল হয়েছে। মদের নিষেধাজ্ঞা এর পরে মদীনায় নাযিল হয়েছে। আয়াতটি নাযিল হওয়ার সময় মদ নিষিদ্ধ ছিল না। মুসলিমরা সাধারণভাবে তা পান করত। [ইবন কাসীর]

১৭ : ৯১
أَوْ تَكُونَ لَكَ جَنَّةٌ مِنْ نَخِيلٍ وَعِنَبٍ فَتُفَجِّرَ الْأَنْهَارَ خِلَالَهَا تَفْجِيرًا

‘অথবা তোমার খেজুরের ও আঙ্গুরের এক বাগান হবে যার ফাঁকে ফাঁকে তুমি অজস্র ধারায় প্রবাহিত করে দেবে নদী-নালা।
ফুটনোট

১৮ : ৩২
وَاضْرِبْ لَهُمْ مَثَلًا رَجُلَيْنِ جَعَلْنَا لِأَحَدِهِمَا جَنَّتَيْنِ مِنْ أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمَا زَرْعًا

<b> পঞ্চম রুকু’ </b>

ফুটনোট

আর আপনি তাদের কাছে পেশ করুন দু’ব্যক্তির উপমাঃ তাদের একজনকে আমরা দিয়েছিলাম দু’টি আঙ্গুরের বাগান এবং এ দু’টিকে আমরা খেজুর গাছ দিয়ে পরিবেষ্টিত করেছিলাম ও এ দু’টির মধ্যবর্তী স্থানকে করেছিলাম শস্যক্ষেত্র।

১৯ : ২৩
فَأَجَاءَهَا الْمَخَاضُ إِلَىٰ جِذْعِ النَّخْلَةِ قَالَتْ يَا لَيْتَنِي مِتُّ قَبْلَ هَٰذَا وَكُنْتُ نَسْيًا مَنْسِيًّا

অতঃপর প্রসব-বেদনা তাকে এক খেজুর-গাছের নীচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। সে বলল, ; ‘হায়। এর আগে যদি আমি মরে যেতাম [১] এবং মানুষের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে যেতাম।

ফুটনোট

[১] বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ যেন বিপদে পড়ে অধৈর্য হয়ে মৃত্যু কামনা না করে” [বুখারীঃ ৫৯৮৯, মুসলিমঃ ২৬৮০, ২৬৮১, আবুদাউদঃ ৩১০৮] সম্ভবত: মারইয়াম ধর্মের দিক চিন্তা করে মৃত্যু কামনা করেছিলেন। অর্থাৎ মানুষ দুনাম রটাবে এবং সম্ভবতঃ এর মোকাবেলায় আমি ধৈর্যধারণ করতে পারব না, ফলে অধৈর্য হওয়ার গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ব। মৃত্যু হলেও গোনাহ থেকে বেঁচে যেতাম, তাই এখানে মৃত্যু কামনা মূল উদ্দেশ্য নয়, গোনাহ থেকে বাঁচাই উদ্দেশ্য। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

১৯ : ২৫
وَهُزِّي إِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا

‘আর তুমি তোমার দিকে খেজুর-গাছের কাণ্ডে নাড়া দাও, সেটা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে।
ফুটনোট

২০ : ৭১
قَالَ آمَنْتُمْ لَهُ قَبْلَ أَنْ آذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّهُ لَكَبِيرُكُمُ الَّذِي عَلَّمَكُمُ السِّحْرَ ۖ فَلَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ مِنْ خِلَافٍ وَلَأُصَلِّبَنَّكُمْ فِي جُذُوعِ النَّخْلِ وَلَتَعْلَمُنَّ أَيُّنَا أَشَدُّ عَذَابًا وَأَبْقَىٰ

ফির’আউন বলল, ‘আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা মূসার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে ! সে তো তোমাদের প্রধান যে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়েছে [১]। কাজেই আমি তো তোমাদের হাত-পা বিপরিত দিক থেকে কাটবই [২] এবং আমি তোমাদেরকে খেজুর গাছের কাণ্ডে শুলিবিদ্ধ করবই [৩] আর তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী [৪]।

ফুটনোট

[১] সূরা আল-আ’রাফে বলা হয়েছেঃ “এটি একটি ষড়যন্ত্ৰ, তোমরা শহরে বসে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে লোকদেরকে এখান থেকে হটিয়ে দেবার জন্য এ ষড়যন্ত্র করেছো।” এখানে এ উক্তিটির বিস্তারিত বর্ণনা আবার এভাবে দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের মধ্যে যে শুধু পারস্পরিক যোগসাজশ আছে তাই নয় বরং মনে হচ্ছে এ মূসা তোমাদের দলের গুরু। তোমরা মু'জিযার কাছে পরাজিত হওনি বরং নিজেদের গুরুর জাদুর পাতানো খেলার কাছে পরাজিত হয়েছো। বুঝা যাচ্ছে, তোমরা নিজেদের মধ্যে এ মর্মে পরামর্শ করে এসেছে যে, নিজেদের গুরুর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে এবং একে তার নবুওয়াতের প্রমাণ হিসেবে পেশ করবে। [দেখুন, ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ ফির’আউন জাদুকরদেরকে কঠোর শাস্তির হুমকি দিল যে, তোমাদের হস্তপদ এমনভাবে কাটা হবে যে, ডান হাত কেটে বাম পা কাটা হবে। সম্ভবতঃ ফিরআউনী আইনে শাস্তির এই পন্থাই প্রচলিত ছিল অথবা এভাবে হস্তপদ কাটা হলে মানুষের শিক্ষার একটা নমুনা হয়ে যায়। তাই ফির’আউন এই ব্যবস্থাই প্রস্তাব হিসেবে দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে সেই সর্বপ্রথম এটা প্ৰচলন করেছে। [ইবন কাসীর]

[৩] শূলিবিদ্ধ করার প্রাচীন পদ্ধতি ছিল নিম্নরূপঃ একটি লম্বা কড়িকাঠ মাটিতে গেড়ে দেয়া হতো। অথবা পুরাতন গাছের গুড়ি একাজে ব্যবহৃত হতো। এর মাথার উপর একটি তখতা আড়াআড়িভাবে বেঁধে দেয়া হতো। অপরাধীকে উপরে উঠিয়ে তার দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে তখতার গায়ে পেরেক মেরে আটকে দেয়া হতো। এভাবে অপরাধী তখতার সাথে ঝুলতে থাকতো এবং ঘন্টার পর ঘন্টা কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুবরণ করতো। লোকদের শিক্ষালাভের জন্য শূলিদণ্ডপ্রাপ্তকে এভাবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বুলিয়ে রাখা হতো। ফির’আউনও তাই বলছিল যে, হস্তপদ কাটার পর তোমাদেরকে খর্জুর বৃক্ষের শূলে চড়ানো হবে। ক্ষুধা ও পিপাসায় না মরা পর্যন্ত তোমরা ঝুলে থাকবে। মুফাসসিরগণ বলেন, এ জন্যই في শব্দ ব্যবহার করেছে। কারণ, في দ্বারা স্থায়িত্ব বোঝায়। [ফাতহুল কাদীর]

[৪] অর্থাৎ মূসা বেশী শাস্তি দিতে পারে নাকি আমি বেশী শাস্তি দিতে পারি। এখানে মূসাকে শাস্তিদাতা হিসেবে উল্লেখ করা এক ধরনের প্রহসন। মূসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে শাস্তি দান কেন করবেন? অথবা মূসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে কুফরি ও শির্কের উপর থাকলে যে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বলেছিলেন এটাকে নিয়েই সে ঠাট্টা করতে আরম্ভ করছিল। অথবা এখানে মূসা বলে মূসার রব বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]

২৩ : ১৯
فَأَنْشَأْنَا لَكُمْ بِهِ جَنَّاتٍ مِنْ نَخِيلٍ وَأَعْنَابٍ لَكُمْ فِيهَا فَوَاكِهُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ

তারপর আমরা তা দিয়ে তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি; এতে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল; আর তা থেকে তোমরা খেয়ে থাক [১];

ফুটনোট

[১] এখানে হিজাযবাসীদের মেজায ও রুচি অনুযায়ী এমন কিছুসংখ্যক বস্তুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো পানি দ্বারা উৎপন্ন। বলা হয়েছে, খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান পানি সেচের দ্বারাই সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর এ দু’টি ছাড়া অন্যান্য ফলের কথাও আলোচনা করা হয়েছে, অর্থাৎ এসব বাগানে তোমাদের জন্যে খেজুর ও আঙ্গুর ছাড়া হাজারো প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছি। এগুলো তোমরা শুধু মুখরোচক হিসেবেও খাও এবং কোন কোন ফল গোলাজাত করে খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ কর। [দেখুন, ইবন কাসীর]

২৬ : ১৪৮
وَزُرُوعٍ وَنَخْلٍ طَلْعُهَا هَضِيمٌ

‘ও শস্যক্ষেত্রে এবং সুকোমল গুচ্ছ বিশিষ্ট খেজুর বাগানে?
ফুটনোট

৩৫ : ১৩
يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ ۚ وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِنْ قِطْمِيرٍ

তিনি রাতকে দিনে প্রবেশ করান এবং দিনকে প্রবেশ করান রাতে, তিনি সূর্য ও চাঁদকে করেছেন নিয়মাধীন; প্রত্যেকে পরিভ্রমণ করে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তিনিই আল্লাহ্ তোমাদের রব। আধিপত্য তাঁরই। আর তোমরা তাঁর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা তো খেজুর আঁটির আবরণেরও অধিকারী নয় [১]।

ফুটনোট

[১] মূলে “কিতমীর" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিতমীর বলা হয় খেজুরের আঁটির গায়ে জড়ানো পাতলা ঝিল্লি বা আবরণকে। [মুয়াসসার] উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা বলা যে, মুশরিকদের মাবুদ ও উপাস্যরা কোন তুচ্ছ ও নগণ্য জিনিসেরও মালিক নয়। [সা'দী] তারা যে সমস্ত মুর্তি, কতক নবী ও ফেরেশতার পূজা করে; বিপদ মুহুর্তে তাদেরকে আহবান করলে প্রথমত: তারা শুনতেই পারবে না। কেননা, তাদের মধ্যে শ্রবনের যোগ্যতাই নেই। নবী ও ফেরেশতাগণের মধ্যে যোগ্যতা থাকলেও তারা তোমাদের আবেদন পূর্ণ করার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহ্ তা'আলার অনুমতি ব্যতিরেকে তারা তাঁর কাছে কারও জন্যে সুপারিশও করতে পারে না।

৩৬ : ৩৪
وَجَعَلْنَا فِيهَا جَنَّاتٍ مِنْ نَخِيلٍ وَأَعْنَابٍ وَفَجَّرْنَا فِيهَا مِنَ الْعُيُونِ

আর সেখানে আমরা সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের উদ্যান এবং সেখানে উৎসারিত করি কিছু প্রস্রবণ,
ফুটনোট

৩৬ : ৩৯
وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ

আর চাঁদের জন্য নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মন্‌যিল; অবশেষে সেটা শুষ্ক বাঁকা, পুরোনো খেজুর শাখার আকারে ফিরে যায়।
ফুটনোট

৫০ : ১০
وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَهَا طَلْعٌ نَضِيدٌ

ও সমুন্নত খেজুর গাছ যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর---
ফুটনোট

৫৪ : ২০
تَنْزِعُ النَّاسَ كَأَنَّهُمْ أَعْجَازُ نَخْلٍ مُنْقَعِرٍ

তা মানুষকে উৎখাত করেছিল যেন তারা উৎপাটিত খেজুর গাছের কান্ড।
ফুটনোট

৫৫ : ১১
فِيهَا فَاكِهَةٌ وَالنَّخْلُ ذَاتُ الْأَكْمَامِ

এতে রয়েছে ফলমূল ও খেজুর গাছ যার ফল আবরণযুক্ত,
ফুটনোট

৫৫ : ৬৮
فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَنَخْلٌ وَرُمَّانٌ

সেখানে রয়েছে ফলমূল---খেজুর ও আনার।
ফুটনোট

৫৯ :
مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَىٰ أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللَّهِ وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ

তোমরা যে খেজুর গাছগুলো কেটেছ এবং যেগুলোকে কাণ্ডের উপর স্থিত রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহ্‌রই অনুমতিক্রমে [১]; এবং এ জন্যে যে, আল্লাহ ফাসিকদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।

ফুটনোট

[১] বনু নাদ্বীর এর বসতি খেজুর বাগানের ঘেরা ছিল। তারা যখন দুর্গের ভিতরে অবস্থান গ্ৰহণ করল, তখন কিছু কিছু মুসলিম তাদেরকে উত্তেজিত ও ভীত করার জন্যে তাদের কিছু খেজুর গাছ কর্তন করে অথবা অগ্নিসংযোগ করে খতম করে দিল। অপর কিছু সংখ্যক সাহাবী মনে করলেন, ইনশাআল্লাহ বিজয় তাদের হবে এবং পরিণামে এসব বাগ-বাগিচা মুসলিমদের অধিকারভুক্ত হবে। এই মনে করে তারা বৃক্ষ কর্তনে বিরত রইলেন। এটা ছিল মতের গরমিল। পরে যখন তাদের মধ্যে কথাবার্তা হল, তখন বৃক্ষ কর্তনকারীরা এই মনে করে চিন্তিত হলেন যে, যে বৃক্ষ পরিণামে মুসলিমদের হবে, তা কর্তন করে তারা অন্যায় করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াত নাযিল হল। এতে উভয় দলের কার্যক্রমকে আল্লাহর ইচ্ছার অনুকুলে প্রকাশ করা হয়েছে। [তিরমিয়ী: ৩৩০৩]

৬৯ :
سَخَّرَهَا عَلَيْهِمْ سَبْعَ لَيَالٍ وَثَمَانِيَةَ أَيَّامٍ حُسُومًا فَتَرَى الْقَوْمَ فِيهَا صَرْعَىٰ كَأَنَّهُمْ أَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِيَةٍ

যা তিনি তাদের উপর প্রবাহিত করেছিলেন সাতরাত ও আটদিন বিরামহীনভাবে; তখন আপনি উক্ত সম্প্রদায়কে দেখতেন--- তারা সেখানে লুটিয়ে পরে আছে সারশূন্য খেজুর কাণ্ডের ন্যায়।
ফুটনোট

৮০ : ২৯
وَزَيْتُونًا وَنَخْلًا

যায়তূন, খেজুরগাছ,
ফুটনোট

0:00
0:00