দাওয়াহ
দাওয়াহ
১২ : ১০৮
قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ

বলুন, ‘এটাই আমার পথ, আল্লাহ্‌র প্রতি মানুষকে আমি ডাকি জেনে-বুঝে, আমি [১] এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও [২]। আর আল্লাহ্‌ কতই না পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই [৩]।’

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ আপনি তাদেরকে বলে দিন, আমার তরীকা এই যে, মানুষকে সম্পূর্ণ জেনে-বুঝে আল্লাহ্‌র দিকে দাওয়াত দিতে থাকব -আমি এবং আমার অনুসারীরাও। এটাই আমার পথ, পদ্ধতি ও নিয়ম যে আমি আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই একমাত্র তিনিই মা’বুদ, তাঁর কোন শরীক নেই, এ সাক্ষ্য দানের দিকে মানুষকে আহ্বান জানাব। জেনে বুঝে, বিশ্বাস ও প্রমাণের উপর নির্ভরশীল হয়ে এ পথে আহ্বান জানাবো। অনুরূপভাবে যারা আমার অনুসরণ করবে তারা সবাই এ পথের দাওয়াত দিবে। যে পথে তাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত দিয়েছেন। তারাও এটা করবে সম্পূর্ণরূপে জেনে-বুঝে, শরী’আত ও বিবেক অনুমোদিত পদ্ধতিতে। [ইবন কাসীর] উদ্দেশ্য এই যে, আমার দাওয়াত আমার কোন চিন্তাধারার উপর ভিত্তিশীল নয়; বরং এটা পরিপূর্ণ জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার ফলশ্রুতি। আমার উপর যারা ঈমান আনবে এবং আমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে তারাও এ দাওয়াতের কাজ করবে। [বাগভী]

[২] ‘যারা আমার অনুসরণ করেছে’ এখানে তার অনুসরণকারী কারা তা নির্ধারণে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, এতে সাহাবায়ে কেরামকে বোঝানো হয়েছে, যারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জ্ঞানের বাহক। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ সাহাবায়ে কেরাম এ উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তিবর্গ। তাদের অন্তর পবিত্র এবং জ্ঞান সুগভীর। তাদের মধ্যে লৌকিকতার নাম-গন্ধও নেই। আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে স্বীয় রাসূলের সংসর্গ ও সেবার জন্য মনোনীত করেছেন। তোমরা তাদের চরিত্র অভ্যাস ও তরীকা আয়ত্ত কর। কেননা, তারা সরল পথের পথিক। কলবী ও ইবনে যায়েদ বলেনঃ এ আয়াত থেকে আরো জানা গেল যে, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণের দাবী করে, তার অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে তার দাওয়াতকে ঘরে ঘরে পৌঁছানো এবং কুরআনের শিক্ষাকে ব্যাপকতর করা। [বাগভী; কিওয়ামুস সুন্নাহ আল-ইস্ফাহানী, আল-হূজ্জাহ ফী বায়ানিল মাহাজ্জাহঃ ৪৯৮]

[৩] অর্থাৎ আল্লাহ্ শির্ক থেকে পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। উপরে বর্ণিত হয়েছিল যে, অধিকাংশ লোক ঈমানের সাথে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য শির্ককেও যুক্ত করে দেয়। তাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম শির্ক থেকে নিজের সম্পূর্ণ পবিত্রতার প্রকাশ করেছেন। সারকথা এই যে, আমার দাওয়াতের উদ্দেশ্য মানুষকে নিজের দাসে পরিণত করা নয়; বরং আমি নিজেও আল্লাহ্‌র দাস এবং মানুষকেও তাঁর দাসত্ব স্বীকার করার দাওয়াত দেই।

১৩ : ৩৬
وَالَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَفْرَحُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ ۖ وَمِنَ الْأَحْزَابِ مَنْ يُنْكِرُ بَعْضَهُ ۚ قُلْ إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ وَلَا أُشْرِكَ بِهِ ۚ إِلَيْهِ أَدْعُو وَإِلَيْهِ مَآبِ

আর আমরা যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা যা আপনার প্রতি নাযিল হয়েছে তাতে আনন্দ পায় [১]। আর দলগুলোর [২] মধ্যে কেউ কেউ তার কিছু অংশকে অস্বীকার করে। বলুন, ‘আমি তো আল্লাহ্‌র ইবাদাত করতে ও তাঁর কোন শরীক না করতে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি। আমি তাঁরই দিকে ডাকি এবং তাঁরই কাছে আমার ফিরে যাওয়া।’

ফুটনোট

[১] আল্লাহ্ তা’আলা এখানে জানাচ্ছেন যে, যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে, তারা যা নাযিল হয়েছে তা দেখে খুশী হয়। এখানে ‘যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে’ বলে কি বোঝানো হয়েছে সে ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে। এক. কিতাবধারী বলে আহলে কিতাব তথা ইয়াহূদী ও নাসারাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। তখন অর্থ হবে, কিতাবীদের মধ্যে যারা কিতাবের বিধানকে আঁকড়ে আছে, তার উপর প্রতিষ্ঠিত, তারা আপনার কাছে যা নাযিল হয়েছে অর্থাৎ কুরআন সেটা দেখলে খুশী হয়। কারণ, তাদের কিতাবে এ রাসূলের সত্যতা ও সুসংবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশিত আছে। [ইবন কাসীর] যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম, সালমান প্রমুখ। [কুরতুবী] দুই. কাতাদা বলেন, এখানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথী তথা সাহাবীদের কথা বলা হয়েছে। তারা কুরআনের আলো নাযিল হতে দেখলেই খুশী হত। [তাবারী; কুরতুবী]

[২] দলগুলো বলে এখানে কাদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে, এক. তারা মক্কার মুশরিক কুরাইশরা এবং ইয়াহূদী ও নাসারাদের মধ্যে যারা ঈমান আনেনি তারা। [কুরতুবী] দুই. অথবা এখানে শুধু ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর] তিন. অথবা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যারা জোট বেঁধেছিল তারা সবাই এখানে উদ্দেশ্য। [কুরতুবী]

১৪ :
أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَبَأُ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ قَوْمِ نُوحٍ وَعَادٍ وَثَمُودَ ۛ وَالَّذِينَ مِنْ بَعْدِهِمْ ۛ لَا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا اللَّهُ ۚ جَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَرَدُّوا أَيْدِيَهُمْ فِي أَفْوَاهِهِمْ وَقَالُوا إِنَّا كَفَرْنَا بِمَا أُرْسِلْتُمْ بِهِ وَإِنَّا لَفِي شَكٍّ مِمَّا تَدْعُونَنَا إِلَيْهِ مُرِيبٍ

‘তোমাদের কাছে কি সংবাদ আসেনি তোমাদের পূর্ববর্তীদের, নূহের সম্প্রদায়ের, ‘আদের ও সামূদের এবং যারা তাদের পরের? যাদেরকে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তাদের রাসূলগণ এসেছিলেন, অতঃপর তারা তাদের হাত তাদের মুখে স্থাপন করেছিল [১] এবং বলেছিল, ‘যা সহ তোমরা প্রেরিত হয়েছ তা আমরা অবশ্যই অস্বীকার করলাম। আর নিশ্চয় আমরা বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছি সে বিষয়ে [২], যার দিকে তোমরা আমাদেরকে ডাকছ।’

ফুটনোট

[১] এ শব্দগুলোর ব্যাখ্যার ব্যাপারে তাফসীরকারদের মধ্যে বেশ কিছু মত দেখা গেছে। কারো কারো মতে, এর অর্থ তারা নবীদেরকে চুপ থাকতে বলেছে। [ইবন কাসীর] অথবা মুখ দিয়ে সেগুলো উড়িয়ে দিয়েছে। [ইবন কাসীর] আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি এর অর্থ করেছেনঃ ‘তারা তাদের আঙ্গুলে কামড় দিয়েছে।’ অর্থাৎ তারা যাতে বিশ্বাসী ছিল তাতে কামড়ে পড়ে ছিল, নবী-রাসূলদের কথা শুনেনি। [কুরতুবী] কাতাদা ও মুজাহিদ এখানে এর অর্থঃ ‘রাসূলগণ যা নিয়ে এসেছে তারা তাদের কথা প্রত্যাখ্যান করেছে আর মুখে তাদের উপর মিথ্যারোপ করেছে’। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ এমন সংশয় যার ফলে প্রশান্তি বিদায় নিয়েছে। অর্থাৎ তোমরা যা নিয়ে এসেছ তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করবো না। কারণ, তোমাদের দাওয়াতের ব্যাপারে আমরা শক্তিশালী সন্দেহে নিপতিত। [ইবন কাসীর] আমরা মনে করছি তোমরা রাজত্ব অথবা দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টায় আছ। [কুরতুবী] কিন্তু পরবর্তী আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, তারা সম্ভবত: ঈমান ও তাওহীদের ব্যাপারেই সন্দেহ করছিল। [দেখুন, মুয়াসসার] কারণ, রাসূলগণ তাদের কথার উত্তরে বলেছিলেন যে, তোমরা কি আল্লাহ্‌র ব্যাপারে সন্দেহ করতে পার? অথচ তিনিই আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন।

১৪ : ২২
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ إِنَّ اللَّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ ۖ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ إِلَّا أَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي ۖ فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوا أَنْفُسَكُمْ ۖ مَا أَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَمَا أَنْتُمْ بِمُصْرِخِيَّ ۖ إِنِّي كَفَرْتُ بِمَا أَشْرَكْتُمُونِ مِنْ قَبْلُ ۗ إِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

আর যখন বিচারের কাজ সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, ‘আল্লাহ্ তো তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি [১], আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। আমার তো তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না, আমি শুধু তোমাদেরকে ডাকছিলাম তাতে তোমরা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলে। কাজেই তোমরা আমাকে তিরস্কার করো না, তোমরা নিজেদেরই তিরস্কার কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। তোমরা যে আগে আমাকে আল্লাহ্‌র শরীক করেছিলে [২] আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ আল্লাহ্ সত্যবাদী ছিলেন এবং আমি ছিলাম মিথ্যেবাদী। অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন, “সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনামাত্র।” [সূরা আন-নিসাঃ ১২০]

আরও বলেন, “আর তোমার কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো পদস্খলিত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদেরকে আক্রমণ কর এবং তাদের ধনে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যাও, আর তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও।’ আর শয়তান ছলনা ছাড়া তাদেরকে কোন প্রতিশ্রুতিই দেয় না।” [সূরা আল-ইসরা: ৬৪]

[২] এখানে আবার বিশ্বাসগত শির্কের মোকাবিলায় শির্কের একটি স্বতন্ত্র ধারা অর্থাৎ কর্মগত শির্কের অস্তিত্বের একটি প্রমাণ পাওয়া যায়। যাকে ‘শির্ক ফিত তা’আহ’ বা আনুগত্যের ক্ষেত্রে শির্ক বলা হয়। একথা সুস্পষ্ট, বিশ্বাসগত দিক দিয়ে শয়তানকে কেউই আল্লাহ্‌র সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে শরীক করে না এবং কেউ তার পূজা, আরাধনা ও বন্দেগী করে না। সবাই তাকে অভিশাপ দেয়। তবে তার আনুগত্য ও দাসত্ব এবং চোখ বুজে বা খুলে তার পদ্ধতির অনুসরণ অবশ্যি করা হচ্ছে। এটিকেই এখানে শির্ক বলা হয়েছে। কুরআনে কর্মগত শির্কের একাধিক প্রমাণ রয়েছে। যেমন, ইয়াহূদী ও নাসারাদের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে, “তারা আল্লাহ্‌ ছাড়া নিজেদের “আহবার” (উলামা) ও “রাহিব” (সংসার বিরাগী সন্ন্যাসী) দেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে।” [সূরা আত-তাওবাঃ ৩১] প্রবৃত্তির কামনা বাসনার পূজারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ তারা নিজেদের প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে। [সূরা আল ফুরকানঃ ৪৩]

নাফরমান বান্দাদের সম্পর্কে এসেছে, “তারা শয়তানের ইবাদাত করতে থেকেছে।” [সূরা ইয়াসীনঃ ৬০]

এ থেকে একথা পরিষ্কার জানা যায় যে, আল্লাহ্‌র অনুমোদন ছাড়াই অথবা আল্লাহ্‌র হুকুমের বিপরীত কোন গাইরুল্লাহর অনুসরণ ও আনুগত্য করতে থাকাও শির্ক। শরী’আতের দৃষ্টিতে আকীদাগত মুশরিকদের জন্য যে বিধান তাদের জন্য সেই একই বিধান, কোন পার্থক্য নেই। [দেখুন, আশ-শির্ক ফিল কাদীম ওয়াল হাদীস, আশ-শির্ক ফিল উলুহিয়্যাহ ফিত তা’আহ অধ্যায়]

২৩ : ৭৩
وَإِنَّكَ لَتَدْعُوهُمْ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

আর আপনি তো তাদেরকে সরল পথের দিকেই আহ্বান করছেন।
ফুটনোট

৪১ : ৩৩
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে আহবান জানায় এবং সৎকাজ করে। আর বলে, 'অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত [১]।'

ফুটনোট

[১] এটা মুমিনদের দ্বিতীয় অবস্থা। তারা কেবল নিজেদের ঈমান ও আমল নিয়েই সস্তুষ্ট থাকে না, বরং অপরকেও দাওয়াত দেয়। বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে? মুমিনদের সান্তুনা দেয়া এবং মনোবল সৃষ্টির পর এখন তাদেরকে তাদের আসল কাজের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। আগের আয়াতে তাদের বলা হয়েছিলো, আল্লাহর বন্দেগীর ওপর দৃঢ়পদ হওয়া এবং এই পথ গ্রহণ করার পর পুনরায় তা থেকে বিচ্যুত না হওয়াটাই এমন একটা মৌলিক নেকী যা মানুষকে ফেরেশতার বন্ধু এবং জান্নাতের উপযুক্ত বানায়। এখন তাদের বলা হচ্ছে, এর পরবর্তী স্তর হচ্ছে, তোমরা নিজে নেক কাজ করো, অন্যদেরকে আল্লাহর বন্দেগীর দিকে ডাকো এবং ইসলামের ঘোষণা দেয়াই যেখানে নিজের জন্য বিপদাপদ ও দুঃখ-মুসিবতকে আহবান জানানোর শামিল এমন কঠিন পরিবেশেও দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করে: আমি মুসলিম। মানুষের জন্য এর চেয়ে উচ্চস্তর আর নেই। কিন্তু আমি মুসলিম বলে কোন ব্যক্তির ঘোষণা করা, পরিণামের পরোয়া না করে সৃষ্টিকে আল্লাহর বন্দেগীর দিকে আহ্বান জানানো এবং কেউ যাতে ইসলাম ও তার ঝাণ্ডাবাহীদের দোষারোপ ও নিন্দাবাদ করার সুযোগ না পায় এ কাজ করতে গিয়ে নিজের তৎপরতাকে সেভাবে পবিত্র রাখা হচ্ছে পূর্ণ মাত্রার নেকী। এ থেকে বোঝা গেল যে, মানুষের সেই কথাই সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট যাতে অপরকে সত্যের দাওয়াত দেয়া হয়। এতে মুখে, কলমে, অন্য কোনভাবে সর্বপ্রকার দাওয়াতই শামিল রয়েছে। আযানদাতাও এতে দাখিল আছে। কেননা, সে মানুষকে সালাতের দিকে আহ্বান করে। এ কারণেই আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আলোচ্য আয়াত মুয়াযযিন সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে دَعَآاِلَى اللهِ বাক্যের পর وَعَمِلَ صِالِحًا বলে আযান-ইকামতের মধ্যস্থলে দুরাকাআত সালাত বোঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আযান ও একমাতের মাঝখানে যে দো’আ হয়, তা প্রত্যাখ্যাত হয় না। [আবু দাউদ: ৫২১]

0:00
0:00