আল্লাহ তা'আলা কারো অংশীদারিত্ব (শিরক) থেকে পবিত্র
আল্লাহ তা'আলা কারো অংশীদারিত্ব (শিরক) থেকে পবিত্র
: ১১৬
وَقَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۖ بَلْ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ كُلٌّ لَهُ قَانِتُونَ

আর তারা বলে, ‘আল্লাহ্‌ সন্তান গ্রহন করেছেন’। তিনি (তা থেকে) অতি পবিত্র [১]। বরং আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ্‌র। সবকিছু তাঁরই একান্ত অনুগত।

ফুটনোট

[১] নাসারারা বলে থাকে আল্লাহ্‌ রাববুল আলামীন সন্তান গ্রহণ করেছেন। অথচ এটা সম্পূর্ণ একটি অপবাদ। কুরআনের অন্যত্র এসেছে, তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের শোভন নয়! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের কাছে বান্দারূপে উপস্থিত হবে না। [সূরা মারইয়ামঃ ৯১-৯৩]

এ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ বলেন, মানুষ আমার উপর মিথ্যারোপ করে, অথচ তাদের এটা উচিত নয়। মানুষ আমাকে গালি দেয়, অথচ তাও তাদের জন্য উচিত নয়। মিথ্যারোপ করার অর্থ হলো, তারা বলে, আমি তাদের মৃত্যুর পর জীবিত করে পূর্বের ন্যায় করতে সক্ষম নই। আর গালি দেয়ার অর্থ হলো, তারা বলে যে, আমার পুত্র আছে। অথচ স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করা থেকে আমি পবিত্র। " [বুখারীঃ ৪৪৮২]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, “কষ্টদায়ক কথা শুনার পর আল্লাহ্‌র চেয়ে বেশী ধৈর্যশীল আর কেউ নেই, মানুষ তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে, তারপরও তিনি তাদেরকে নিরাপদে রাখেন ও রিফিক দেন। " [বুখারী: ৭৩৭৮, মুসলিম: ২৮০৪]

: ৬৪
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ ۚ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ

আপনি বলুন। ‘হে আহ্‌লে কিতাবগণ! এস সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা একমাত্র আল্লাহ্‌ ছাড়া কারো ইবাদাত না করি, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করি এবং আমাদের কেউ আল্লাহ্‌ ছাড়া একে অন্যকে রব হিসেবে গ্রহণ না করি। ’ তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তোমরা বল, তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম [১]। ’

ফুটনোট

সপ্তম রুকু‘

[১] এ আয়াত থেকে দ্বীনের প্রতি আমন্ত্রণ জানানোর একটি মূলনীতি জানা যায়। তা এই যে, ভিন্ন মতাবলম্বী কোন দলকে দ্বীনের প্রতি আমন্ত্রণ জানাতে হলে প্রথমে তাকে শুধু এমন বিষয়ের প্রতিই আহবান জানানো উচিত, যে বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রোম সম্রাটকে ইসলামের দাওয়াত দেন, তখন এমন বিষয়ের প্রতি আহবান জানান, যাতে উভয়েই একমত ছিলেন। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলার একত্ববাদ। আমন্ত্রণ লিপিতে লিখা হয়েছিলঃ ‘আমি আল্লাহ্‌র নামে আরম্ভ করছি- যিনি পরম করুণাময় ও দয়ালু। এ পত্র আল্লাহ্‌র বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি। যে হেদায়াতের পথ অনুসরণ করে, তার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর আমি আপনাকে ইসলামের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। মুসলিম হয়ে যান; শান্তি লাভ করবেন। আল্লাহ্‌ আপনাকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেবেন। আর যদি বিমুখ হন, তবে আপনার প্রজা সাধারণের গোনাহ আপনার উপর পতিত হবে। “হে আহলে কিতাবগণ! এমন এক বিষয়ের দিকে আস, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে অভিন্ন। তা এই যে, আমরা আল্লাহ্‌ ছাড়া কারো ইবাদাত করব না। তার সাথে অংশীদার করব না এবং আল্লাহ্‌কে ছেড়ে অন্যকে পালনকর্তা সাব্যস্ত করব না। " [বুখারীঃ ৭]

: ৩৬
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا

আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর ও কোন কিছুকে তাঁর শরীক করো না [১]; এবং পিতা-মাতা [২]; আত্মীয়-স্বজন [৩], ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত [৪], নিকট প্রতিবেশী [৫], দূর-প্রতিবেশী [৬], সঙ্গী-সাথী [৭], মুসাফির [৮] ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের [৯] প্রতি সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীকে [১০]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদাত কর এবং ইবাদাতের বেলায় তাঁর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করো না। মু’আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে তার বাহনে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি বললেন, তুমি কি জান, বান্দার উপর আল্লাহর কি হক? আমি বললামঃ আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ বান্দার উপর আল্লাহর হক হল, একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা। তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক না করা। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো অনেক পথ চলার পর আবার বললেনঃ হে মুআয ইবন জাবাল! তুমি কি জান, বান্দা যদি এ কাজটি করে তাহলে আল্লাহর উপর বান্দার কি হক রয়েছে? আমি বললামঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর উপর বান্দার হক হল, তাদেরকে শাস্তি না দেয়া। [বুখারীঃ ৬৫০০]

[২] আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তাওহীদের পর সমস্ত আপনজন-আত্মীয় ও সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পিতা-মাতার অধিকার সর্বাগ্রে। আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় ইবাদাত বন্দেগী ও হকসমূহের পর পরই পিতা-মাতার হক সম্পর্কিত বিবরণ দানের মাধ্যমে ইঙ্গিত করেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে সমস্ত নেয়ামত ও অনুগ্রহ একান্তই আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে, কিন্তু বাহ্যিক উপকরণের দিক দিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আল্লাহর পরে মানুষের প্রতি সর্বাধিক ইহসান বা অনুগ্রহ থাকে পিতা-মাতার। সাধারণ উপকরণসমূহের মাঝে মানুষের অস্তিত্বের পিছনে পিতা-মাতাই বাহ্যিক কারণ। তাছাড়া জন্ম থেকে যৌবন প্রাপ্তি পর্যন্ত যে সমস্ত কঠিন ও বন্ধুর পথ ও স্তর রয়েছে, পিতা-মাতাই তাকে সেগুলোতে সাহায্য করেন এবং তার প্রতিপালন ও পরিবর্ধনের জামানতদার হয়ে থাকেন। সে জন্যই আল্লাহ তা’আলা অন্যান্য জায়গায়ও পিতামাতার হকসমূহকে তাঁর ইবাদাত ও আনুগত্যের সাথে যুক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ “আমার এবং তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর”। [সূরা লুকমান: ১৪]

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীসমূহে যেমন পিতা-মাতার আনুগত্য এবং তাদের সাথে সদ্ব্যবহারের তাকিদ রয়েছে, তেমনিভাবে তার সীমাহীন ফযীলত, মর্তবা ও সওয়াবের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই নিহিত রয়েছে”। [তিরমিযী: ১৮৯৯]

[৩] এখানে সমস্ত আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করার তাকিদ দেয়া হয়েছে। কুরআনুল কারীমের প্রসিদ্ধ এক আয়াতে বিষয়টি এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়শঃই বিভিন্ন ভাষণের পর তেলাওয়াত করতেন। তা হলো, “আল্লাহ সবার সাথে ন্যায় ও সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নির্দেশ দিচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করার জন্য”। [সূরা আন-নাহল: ৯০]

এতে সামর্থ্যানুযায়ী আত্মীয়-আপনজনদের কায়িক ও আর্থিক সেবা-যত্ন করা, তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা এবং তাদের খবরা-খবর নেয়াও অন্তর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সদকার মাল সাধারণ গরীব-মিসকীনকে দান করলে তাতে তো শুধু সদকার সওয়াবই পাওয়া যায়, অথচ তা যদি নিজের রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়-আপনজনকে দান করা হয়, তাহলে তাতে দুটি সওয়াব পাওয়া যায়। একটি হল সদকার সওয়াব এবং আরেকটি হল সেলায়ে-রেহমীর সওয়াব। [মুসনাদে আহমাদ ৪/২১৪, নাসায়ী: ২৫৮২] অর্থাৎ আত্মীয়তার হক আদায় করার সওয়াব।

[৪] অর্থাৎ লাওয়ারিশ তথা অনাথ শিশু এবং অসহায় মানুষের সাহায্য-সহযোগিতাও এমনি গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী বিবেচনা করবে, যেমন আত্মীয়-আপনজনদের বেলায় করে থাক ।

[৫] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আবু যর, যখন তরকারী রান্না করবে তখন তাতে বেশী পরিমাণে পানি দিও এবং এর দ্বারা তোমার পড়শীর খোজখবর নিও। [মুসলিমঃ ২৬২৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে সে যেন তার পড়শীর সম্মান করে, তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান আনে সে যেন তার মেহমানের পুরস্কার দিয়ে তাকে সম্মানিত করে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, মেহমানের পুরস্কার কি? তিনি বললেন, একদিন ও রাত্রি। আর মেহমান তিন দিন এর পরের যা সময় তাতে ব্যয় করা সদকাস্বরূপ। তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও শেষ দিনে উপর ঈমান আনে সে যেন ভাল বলে অথবা চুপ থাকে। [বুখারী: ৬০১৯]

অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম সংগী হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সংগীগণ। আর আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম পড়শী হচ্ছেন ঐ পড়শী, যে তার পড়শীর জন্য উত্তম। [তিরমিযী: ১৯৪৪]

[৬] এ আয়াতে দু’রকমের প্রতিবেশীর কথা বলা হয়েছে। এ উভয় প্রকার প্রতিবেশীর বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরামের বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, (جَارِذِى القُرْبٰى) বলতে সেসব প্রতিবেশীকে বোঝায়, যারা প্রতিবেশী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয়ও বটে। এভাবে এতে দু’টি হক সমন্বিত হয়ে যায়। আর (وَالْجَارِ الْجُنُبِ) বলতে শুধু সে প্রতিবেশীকে বোঝায় যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। আর সে জন্যই তার উল্লেখ করা হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে । [তাবারী] কোন কোন মনীষী বলেছেন, ‘জারে-যিলকোরবা’ এমন প্রতিবেশীকে বলা হয়, যে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত এবং মুসলিম। আর ‘জারে-জুনুব’ বলা হয় অমুসলিম প্রতিবেশীকে। কুরআনে ব্যবহৃত শব্দে অবশ্য এ সমুদয় সম্ভাব্যতাই বিদ্যমান। অবশ্য প্রতিবেশী হওয়া ছাড়াও যার অন্যান্য হক রয়েছে, অন্যান্য প্রতিবেশীদের তুলনায় তাকে মর্যাদাগত অগ্রাধিকার দিতে হবে।

[৭] যদিও এর শাব্দিক অর্থ হল সহকর্মী। এতে সেসব সফর সঙ্গীরাও অন্তর্ভুক্ত যারা রেল, জাহাজ, বাস, মোটর প্রভৃতিতে পাশাপাশি বসে ভ্রমণ করে এবং সে সমস্ত লোকও অন্তর্ভুক্ত যারা কোন সাধারণ বা বিশেষ বৈঠক বা অধিবেশনে আপনার সাথে উপবেশন করে থাকে। ইসলামী শরী’আত নিকটবর্তী ও দূরবর্তী স্থায়ী প্রতিবেশীদের অধিকার সংরক্ষণকে যেমন ওয়াজিব করে দিয়েছে, তেমনিভাবে সে ব্যক্তির সাহচর্যের অধিকার বা হককেও অপরিহার্য করে দিয়েছে, যে সামান্য সময়ের জন্য হলেও কোন মজলিস, বৈঠক অথবা সফরের সময় আপনার সমপর্যায়ে উপবেশন করে। তাদের মধ্যে মুসলিম, অমুসলিম, আত্মীয়, অনাত্মীয় সবাই সমান -সবার সাথেই সদ্ব্যবহার করার হেদায়াত করা হয়েছে। এর সর্বনিম্ন পর্যায় হচ্ছে এই যে, আপনার কোন কথায় বা কাজে যেন সে কোন রকম কষ্ট না পায়। এমন কোন কথা বলবেন না, যাতে সে মৰ্মাহত হতে পারে। এমন কোন আচরণ করবেন না, যাতে তার কষ্ট হতে পারে। যেমন, ধুমপান করে তার দিকে ধোঁয়া ছাড়া, পান খেয়ে তার দিকে পিক ফেলা এবং এমনভাবে বসা যাতে তার বসার জায়গা সংকুচিত হয়ে যায় প্রভৃতি। যানবাহনে অন্য কোন যাত্রী পাশে বসতে গেলে এ কথা ভাবা উচিত যে, এখানে তার ততটুকুই অধিকার রয়েছে যতটা রয়েছে আমার। কোন কোন তাফসীরকার বলেছেন, এমন প্রতিটি লোকই ‘সাহেবে-বিল-জাম্ব’-এর অন্তর্ভুক্ত যে কোন কাজে, কোন পেশায় বা কোন বিষয়ে আপনার সাথে জড়িত বা আপনার অংশীদার; তা শিল্প-শ্রমেই হোক অথবা অফিস-আদালতের চাকরিতেই হোক অথবা কোন সফরে বা স্থায়ী বসবাসেই হোক। [রুহুল মা’আনী]

[৮] আয়াতে এমন লোককে বোঝানো হয়েছে যে সফরের অবস্থায় আপনার নিকট এসে উপস্থিত হয় কিংবা আপনার মেহমান হয়ে যায়। যেহেতু এই অজানা-অচেনা লোকটির কোন আত্মীয় বা সম্পৰ্কীয় লোক এখানে উপস্থিত থাকে না, সেহেতু কুরআন ইসলামী তথা মানবীয় সম্পর্কের প্রেক্ষিতে তার হকও আপনার উপর অপরিহার্য বলে সাব্যস্ত করে দিয়েছে। তা হল, সামর্থ্য ও সাধ্যানুযায়ী তার সাথে সদ্ব্যবহার করা।

[৯] এতে অধিকারভুক্ত দাস-দাসীকে বোঝানো হয়েছে। তাদের ব্যাপারেও এ হক সাব্যস্ত ও অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে যে, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। সাধ্যানুযায়ী তাদের খাওয়া পরার ব্যাপারে কার্পণ্য করবে না। তাছাড়া তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কাজ তাদের দ্বারা করাবে না। এখানে আয়াতের বাক্যগুলো যদিও সরাসরিভাবে অধিকারভুক্ত দাস-দাসীকেই বোঝাচ্ছে, কিন্তু কারণ-উপকরণের সামঞ্জস্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন বক্তব্যের ভিত্তিতে আলোচ্য নির্দেশ ও বিধি-বিধান দাস-দাসী, চাকর-চাকরানী ও অন্যান্য কর্মচারীর ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য। তাদের হকও একই রকম। নির্ধারিত বেতন-ভাতা, খানাপিনা প্রভৃতির ব্যাপারে কার্পণ্য বা বিলম্ব করা যাবে না এবং তাদের উপর সাধ্যাতীত কোন কাজও চাপানো যাবে না। যদি শরীআত মত তাদেরকে পরিচালনা করা হয় তবে তাদের যাবতীয় খরচও সদকার অন্তর্ভুক্ত। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি নিজে যা খাও তা তোমার জন্য সদকা এবং যা তোমার ছেলেকে খাওয়াও তাও তোমার জন্য সদকা, যা তোমার স্ত্রীকে খাওয়াও তাও তোমার জন্য সদকা। অনুরূপভাবে যা তোমার খাদেমকে খাওয়াও সেটাও তোমার জন্য সদকা হিসাবে গণ্য হবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/১৩১]

অপর বর্ণনায় এসেছে, মা’রূর ইবন সা’য়ীদ বলেন, আমি আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুর গায়ে একটি চাদর দেখলাম, অনুরূপ আরেকটি চাদর তার দাসের গায়ে দেখলাম। এ ব্যাপারে আমরা আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, একদিন এক লোককে গালি দিয়েছিলাম। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ ব্যাপারে গালি দিলে রাসূল আমাকে বললেন, তুমি কি তাকে তার মায়ের ব্যাপার উল্লেখ করে অপমান করলে? তারপর তিনি বললেন, “এরা তোমাদের ভাই, তোমাদের অনুগামী। আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে তোমাদের কর্তৃত্বাধীন করেছেন। অতএব যার কোন ভাই তার কর্তৃত্বাধীন থাকে, তবে সে যা খায় তা থেকে যেন তাকে খাওয়ায়, যা পরিধান করে তা থেকে যেন তাকে পরিধান করায়। তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কোন দায়িত্ব তাদেরকে দিবে না, যদি সাধ্যের অতিরিক্ত কোন দায়িত্ব দাও তবে তাদেরকে সাহায্য কর।” [বুখারী: ২৫৪৫; মুসলিম: ১৬৬২]

[১০] আল্লাহ্‌ এমন লোককে পছন্দ করেন না, যে দাম্ভিক এবং নিজেকে অন্যের চাইতে বড় প্রতিপন্ন করে। আয়াতের এই শেষ বাক্যটি পূর্ববর্তী সমস্ত বক্তব্যের উপসংহার। কারণ, পূর্ববতী আটটি পর্যায়ে যে সমস্ত লোকের হক সম্পর্কে তাকীদ করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সে সমস্ত লোকই শৈথিল্য প্রদর্শন করে যাদের মন-মানসিকতায় আত্মগৰ্ব, অহমিকা, তাকাববুর ও দাম্ভিকতা বিদ্যমান। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে ওসীয়ত করে বলেছেনঃ কাউকে গালি দিও না। সাহাবী বললেনঃ এরপর আমি কোন স্বাধীন, দাস, উট বা ছাগল কাউকেই গালি দেইনি। তিনি আরো বললেনঃ সামান্য কোন নেক কাজকেও হেয় করে দেখবে না যদিও তোমার কোন ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে কথা বলা হোক। আর তোমার কাপড়কে টাখনুর অর্ধেক পর্যন্ত উঠাবে, যদি তা করতে না চাও তবে দুই গিরা পর্যন্ত নামাতে পার। কাপড়কে ‘ইসবাল’ বা গিরার নীচে পরা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ কর। কেননা, এটাই অহংকারের চিহ্ন। আল্লাহ তা’আলা অহংকারীকে পছন্দ করেন না। যদি কোন লোক তোমাকে গালি দেয় অথবা তোমার কোন ক্রটি জানতে পেরে তা নিয়ে উপহাস করে, তুমি তার সেরকম কিছু জেনেও তাকে উপহাস করো না। কারণ, এর প্রতিফল তাকেই ভোগ করতে হবে। [আবু দাউদঃ ৪০৮৪, তিরমিযীঃ ২৭২২]

: ৪৮
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ ۚ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক [১] করাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন [২]। আর যে-ই আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে এক মহাপাপ রটনা করে।

ফুটনোট

[১] আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলার সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে যেসব বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে, যে কোন সৃষ্ট বস্তুর ব্যাপারে তেমন কোন বিশ্বাস পোষণ করাই হল শির্ক। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন সৃষ্ট বস্তুকে ইবাদাত কিংবা মহব্বত ও সম্মান প্রদর্শনে আল্লাহর সমতুল্য মনে করাই শির্ক। জাহান্নামে পৌঁছে মুশরিকরা যে উক্তি করবে, আল্লাহ তা’আলা তা উল্লেখ করেছেন যে, “আল্লাহর শপথ, আমরা প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত ছিলাম যখন আমরা তোমাদেরকে বিশ্ব-পালনকর্তার সমতুল্য স্থির করেছিলাম।” সূ[রা আশ-শু’আরাঃ ৯৭-৯৮]

শির্কের প্রকারভেদ সম্পর্কে সূরা আল-বাকারাহ এর ২২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, যুলুম ও অবিচার তিন প্রকার। এক প্রকার যুলুম যা আল্লাহ্ তা’আলা কখনো ক্ষমা করবেন না। দ্বিতীয় প্রকার যুলুম যা মাফ হতে পারে। আর তৃতীয় প্রকার যুলুমের প্রতিশোধ আল্লাহ তা’আলা না নিয়ে ছাড়বেন না। প্রথম প্রকার যুলুম হচ্ছে শির্ক, দ্বিতীয় প্রকার আল্লাহর হকে ক্রটি করা এবং তৃতীয় প্রকার বান্দার হক বিনষ্ট করা। [ইবন কাসীর] এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তিনি তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করবেন না। এর বাইরে যত গোনাহ আছে সবই তিনি যার জন্যে ইচ্ছে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে সে অবশ্যই এক বড় মিথ্যা অপবাদ রটনা করল। অন্য আয়াতে অবশ্য আল্লাহ তা’আলা শির্ককারীদের মধ্যে যারা তাওবা করবে তাদেরকে ক্ষমা করার কথা ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডাকে না, ...তবে যদি তারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে” [সূরা আল-ফুরকান:৭০] সুতরাং তাওবাহ্‌ করলে শির্কও মাফ হয়ে যায়।

[২] আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ আমরা কবীরা গোনাহকারীর জন্য ইস্তেগফার করা থেকে বিরত থাকতাম। শেষ পর্যন্ত যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ আয়াত শুনলাম এবং আরো শুনলাম যে, তিনি বলছেনঃ ‘আমি আমার দো’আকে গচ্ছিত রেখেছি আমার উম্মতের কবীরা গোনাহ্‌গারদের সুপারিশ করার জন্য। ইবন উমর বলেনঃ এরপর আমাদের অন্তরে যা ছিল, তা অনেকটা কেটে গেল ফলে আমরা ইস্তেগফার করতে থাকলাম ও আশা করতে থাকলাম। [মুসনাদে আবি ইয়া'লাঃ ৫৮১৩]

: ১১৬
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ ۚ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না; আর তার থেকে ছোট যাবতীয় গোনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেবেন, আর যে কেউ আল্লাহর সাথে শির্ক করে সে ভীষণভাবে পথ ভ্রষ্ট হয়।

ফুটনোট

আঠারতম রুকূ‘

: ১৭
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ ۚ قُلْ فَمَنْ يَمْلِكُ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا إِنْ أَرَادَ أَنْ يُهْلِكَ الْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ۗ وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

যারা বলে, ‘নিশ্চয় মারইয়াম-তনয় মসীহই আল্লাহ’, তারা অবশ্যই কুফরী করেছে [১]। বলুন, ‘আল্লাহ যদি মারইয়াম-তনয় মসীহ, তাঁর মাতা এবং দুনিয়ার সকলকে ধ্বংস করতে ইচ্ছে করেন তবে তাঁকে বাঁধা দেবার শক্তি কার আছে?’ আর আসমানসমূহ ও যমীন এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন [২] এবং আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

ফুটনোট

[১] আলোচ্য আয়াতে নাসারাদের একটি উক্তির খণ্ডন করা হয়েছে- যা তাদের একদলের বিশ্বাসও ছিল। অর্থাৎ তাদের একদলের বিশ্বাস ছিল যে, ঈসা মসীহ হুবহু আল্লাহ। কিন্তু আয়াতে যে যুক্তি দ্বারা বিষয়টির খণ্ডন করা হয়েছে, তাতে নাসারাদের সব দলের একত্ববাদ বিরোধী ভ্রান্ত বিশ্বাসেরই খণ্ডন হয়ে যায়, তা মসীহ ‘আলাইহিস সালামের আল্লাহর সন্তান হওয়া সংক্রান্ত বিশ্বাসই হোক অথবা তিন ইলাহর অন্যতম ইলাহ হওয়ার বিশ্বাসই হোক। আল্লাহ তা’আলা বলছেন যে, যদি তিনি ঈসা ও তার মা মারইয়ামকে মারতে ইচ্ছা করেন, তবে কি এমন কেউ আছে যে তাদেরকে মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারে? তারা নিজেরাও সেটা করতে সক্ষম নয়। সুতরাং তারা কিভাবে ইলাহ হতে পারে? আল্লাহ তা'আলার সামনে মসীহ ‘আলাইহিস সালাম এতই অক্ষম যে, তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারেন না এবং যে জননীর খেদমত ও হেফাযত তার কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয়, সে জননীকেও রক্ষা করতে পারেন না। সুতরাং তিনিই কিভাবে ইলাহ হতে পারেন। আর তার মা যেহেতু মারা গেছেন সেহেতু কিভাবেই বা তিনি তিন ইলাহর অন্যতম ইলাহ বলে বিবেচিত হবেন? [তাফসীর মুয়াস্সার ও সা’দী]

[২] ‘তিনি যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন’ এ বাক্যে নাসারাদের পূর্বোক্ত ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণকে খণ্ডন করা হয়েছে। কেননা, মসীহকে আল্লাহ মনে করার আসল কারণ তাদের মতে এই ছিল যে, তিনি জগতের সাধারণ নিয়মের বিপরীতে পিতা ছাড়া শুধুমাত্র মায়ের গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি মানুষ হলে নিয়মানুযায়ী পিতা-মাতা উভয়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করতেন। আলোচ্য বাক্যে এর উত্তর দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা যাকে ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা সৃষ্টি করার পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন। যেমন অন্যত্র বলেছেন যে, “ঈসার উদাহরণ তো আদমের মত” [সূরা আলে-ইমরানঃ ৫৯] এ আয়াতেও উক্ত সন্দেহের নিরসন করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর সাধারণ নিয়মের বাইরে মসীহ ‘আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা তার ইলাহ হওয়ার প্রমাণ হতে পারে না। লক্ষণীয় যে, আদমকে আল্লাহ তা’আলা পিতা ও মাতা উভয়ের মাধ্যম ছাড়াই সৃষ্টি করেছিলেন। সুতরাং আল্লাহ সবকিছুই করতে পারেন। তিনিই স্রষ্টা, রব ও উপাসনার যোগ্য। অন্য কেউ তার অংশীদার নয়। [সা’দী; মুয়াস্সার; ইবন কাসীর]

: ৭২
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ ۖ وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ ۖ إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ

যারা বলে, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তিনি তো মার্‌ইয়াম-তনয় মসীহ’, অবশ্যই তারা কুফরী করেছে [১]। অথচ মসীহ বলেছিলেন, ‘হে ইসরাঈল-সন্তানগণ! তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর’। নিশ্চয় কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করে দিয়েছেন [২] এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।

ফুটনোট

[১] পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে বনী-ইসরাঈলের ঔদ্ধত্য ও তাদের অত্যাচার-উৎপীড়ন বর্ণনা করা হয়েছিল যে, আল্লাহ প্রেরিত রাসূল- যারা তাদের অক্ষয় জীবনের বার্তা এবং তাদের দুনিয়া ও আখেরাত সংশোধনের কার্যবিধি নিয়ে আগমন করেছিলেন, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পরিবর্তে তারা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। কতক নবীকে তারা মিথ্যারোপ করে এবং কতককে হত্যা করে ফেলে। আলোচ্য আয়াতে বনী-ইসরাঈলের কুটিলতার আরেকটি দিক উল্লেখ করা হয়েছে যে, মূৰ্খরা যেমন ঔদ্ধত্য ও অবাধ্যতার এক প্রান্তে থেকে আল্লাহর নবীদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে এবং কতককে হত্যা করেছে, তেমনি এরাই বক্রতার অপর প্রান্তে পৌঁছে নবীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে বাড়াবাড়ি করে তাদেরকে আল্লাহ্‌তে পরিণত করে দিয়েছে। তারা বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তিনি তো মারইয়াম তনয় মসীহ’ এ কথা বলে তারা কুফরী করল এবং কাফের হয়ে গেল। ইতিহাস বলে যে, যারা এ ধরণের উক্তি করত তারা হচ্ছে, নাসারাদের মালেকিয়্যা, ইয়া’কুবিয়্যা এবং নাসতুরিয়্যাহ সম্প্রদায়। [ইবন কাসীর] আলোচ্য আয়াতে যদিও এ উক্তিটি শুধু নাসারাদের বলে বর্ণিত হয়েছে। অন্যত্র এ ধরণের বাড়াবাড়ি ও পথভ্রষ্টতা ইয়াহুদী এবং নাসারা উভয়ের ব্যাপারেও বর্ণনা করা হয়েছে,

(وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ عُزَيْرُۨ ابْنُ اللّٰهِ وَقَالَتِ النَّصٰرَى الْمَسِيْحُ ابْنُ اللّٰهِ ۭ ذٰلِكَ قَوْلُهُمْ بِاَفْوَاهِهِمْ ۚ يُضَاهِــــُٔـوْنَ قَوْلَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَبْلُ ۭ قٰتَلَهُمُ اللّٰهُ اَنّٰى يُؤْفَكُوْنَ )

অর্থাৎ “আর ইয়াহুদীরা বলে, ‘উযায়র আল্লাহর পুত্র’, এবং খৃস্টানরা বলে, ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র’। ওটা তাদের মুখের কথা। আগে যারা কুফরী করেছিল ওরা তাদের মত কথা বলে। আল্লাহ ওদেরকে ধ্বংস করুন। কোন্‌ দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে?” [সূরা আত-তাওবাহঃ ৩০]

[২] অর্থাৎ নাসারারা যতই বাড়াবাড়ি করুক এবং ঈসাকে তাদের ইলাহ ঘোষণা করুক, ঈসা এতে কখনও সন্তুষ্ট নন। তিনি নিজেই এর বিপরীত ঘোষণা করেছিলেন। দুনিয়ায় আসার পর দোলনাতেই তার মুখের প্রথম কথা ছিল, (اِنِّىْ عَبْدُ اللّٰهِ) অর্থাৎ আমি তো আল্লাহর বান্দা বা দাস। [সূরা মারইয়াম: ৩০]

তিনি আরও বলেছিলেন, আমার ও তোমাদের রব একমাত্র আল্লাহ। তাঁরই ইবাদাত কর। সরল সঠিক পথ এটিই। [সূরা আলে ইমরান: ৫১; মারইয়াম: ৩৬; আযযুখরুফ: ৬৪]

তাছাড়া যৌবনের পরবর্তী বয়সেও বলেছেন, তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত কর, যারা তাঁর সাথে অন্য কারও ইবাদাত করে তাদের জন্যে আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নামে । যেমন অন্য আয়াতেও আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ শির্কের গোনাহ কখনও ক্ষমা করবেন না” [সূরা আন-নিসা ৪৮, ১১৬]

অনুরূপভাবে জাহান্নামবাসীরা যখন জান্নাতবাসীদের কাছে খাদ্য ও পানি চাইবে, তখন তারা উত্তরে বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ এ দুটি জিনিস কাফেরদের উপর হারাম করে দিয়েছেন’। [সূরা আল-আরাফ: ৫০]

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করতে বলেছেন যে, ‘শুধু মুমিন মুসলিমরাই জান্নাতে যাবে’। [মুসলিম: ১১১]

আরও বলেছেন, ‘যতক্ষণ তোমরা ঈমানদার না হবে ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’। [মুসলিম: ৫৪] সুতরাং ঈসা ‘আলাইহিস সালাম কখনোও ইলাহ হওয়ার দাবী করেন নি এবং এটা তার পক্ষে শোভনীয়ও নয়। [ইবন কাসীর]

: ৭৩
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ ثَالِثُ ثَلَاثَةٍ ۘ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۚ وَإِنْ لَمْ يَنْتَهُوا عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

তারা অবশ্যই কুফরী করেছে –যারা বলে, ‘আল্লাহ তো তিনের মধ্যে তৃতীয় [১], অথচ এক ইলাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আর তারা যা বলে তা থেকে বিরত না হলে তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে, তাদের উপর অবশ্যই কষ্টদায়ক শাস্তি আপতিত হবে।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ ঈসা মসীহ ‘আলাইহিস সালাম, রূহুল কুদস ও আল্লাহ, কিংবা মসীহ, মারইয়াম ও আল্লাহ -সবাই আল্লাহ। তাদের মধ্যে একজন অংশীদার হলেন আল্লাহ। এরপর তারা তিনজনই এক এবং একজনই তিন। এ হচ্ছে নাসারাদের সাধারণ বিশ্বাস। নাসারাদের মালেকিয়্যা, ইয়াকুবিয়্যা ও নাসতুরিয়্যা এ তিনটি দলই উপরোক্ত বিশ্বাস পোষণ করে। [ইবন কাসীর]

এ যুক্তিবিরোধী ধর্মবিশ্বাসকে তারা জটিল ও দ্ব্যর্থবোধক ভাষায় ব্যক্ত করে। অতঃপর বিষয়টি যখন কারো বোধগম্য হয় না, তখন একে বুদ্ধি বহির্ভূত সত্য' বলে আখ্যা দিয়ে ক্ষান্ত হয়। সুদ্দি বলেন, এখানে তিনের এক ইলাহ বলা হয়েছে। তিনজন বলতে, ঈসা, তার মা মারইয়াম এবং আল্লাহকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, অন্য আয়াতে কোন কোন নাসারাদের দ্বারা ঈসা ও তার মাকে ইলাহ হিসেবে গণ্য করার কথা উল্লেখ করে তা খণ্ডন করা হয়েছে। [আল-মায়েদাহ: ১১৬]

ইবন কাসীর বলেন, এ মতটি অধিক প্রাধান্যপ্রাপ্ত। [ইবন কাসীর]

: ৭৬
فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ رَأَىٰ كَوْكَبًا ۖ قَالَ هَٰذَا رَبِّي ۖ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَا أُحِبُّ الْآفِلِينَ

তারপর রাত যখন তাঁকে আচ্ছন্ন করল তখন তিনি তারকা দেখে বললেন , ‘এ আমার রব ।’ তারপর যখন সেটা অস্তমিত হল তখন তিনি বললেন, ‘যা আন্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না।’
ফুটনোট

: ৭৭
فَلَمَّا رَأَى الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هَٰذَا رَبِّي ۖ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَئِنْ لَمْ يَهْدِنِي رَبِّي لَأَكُونَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّالِّينَ

অতঃপর যখন তিনি চাঁদকে সমুজ্জ্বলরূপে উঠতে দেখলেন তখন বললেন , ‘এটা আমার রব।’ যখন সেটাও অস্তমিত হল তখন বলেন, ‘ আমাকে আমার রব হিদায়াত না করলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের শামিল হব।’
ফুটনোট

: ৭৮
فَلَمَّا رَأَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هَٰذَا رَبِّي هَٰذَا أَكْبَرُ ۖ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ

‘অতঃপর যখন তিনি সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উঠতে দেখলেন তখন বললেন, ‘এটা আমার রব, এটা সবচেয়ে বড়।’ যখন এটাও অস্তমিল হল, তখন তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায় ! তোমারা যাকে আল্লাহ্‌র শরীক কর তার সাথে আমার কোন সংশ্রব নেই।
ফুটনোট

: ৭৯
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ۖ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ

‘ আমি একনিষ্টভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিককদের অন্তর্ভুক্ত নই [১]।’

ফুটনোট

[১] আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে যে, তারকাপুঞ্জ ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয়, যেমনিভাবে মূর্তি ও প্রতিমা উপাস্যের যোগ্য নয়। বলা হচ্ছে, এক রাত্রিতে যখন অন্ধকার সমাচ্ছন্ন হলো এবং একটি নক্ষত্রের উপর দৃষ্টি পড়ল, তখন তিনি স্বজাতিকে শুনিয়ে বললেন, এ নক্ষত্র আমার রব। উদ্দেশ্য এই যে, তোমাদের ধারণা ও বিশ্বাস অনুযায়ী এটিই আমার ও তোমাদের রব। এখন অল্পক্ষণের মধ্যেই এর স্বরূপ দেখে নেবে। কিছুক্ষণ পর নক্ষত্রটি অস্তমিত হয়ে গেলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম জাতিকে জদ করার চমৎকার সুযোগ পেলেন। তিনি বললেন, আমি অস্তগামী বস্তুসমূহকে ভালবাসি না। যে বস্তু ইলাহ কিংবা উপাস্য হবে, তার সর্বাধিক ভালবাসার পাত্র হওয়া উচিত। এরপর অন্য কোন রাত্রিতে চাদকে ঝলমল করতে দেখে পুনরায় জাতিকে শুনিয়ে পূর্বোক্ত পন্থা অবলম্বন করলেন এবং বললেন, (তোমাদের বিশ্বাস অনুযায়ী) এটি আমার রব। কিন্তু এর স্বরূপও কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুটে উঠবে। সেমতে চন্দ্র যখন অস্তাচলে ডুবে গেল, তখন বললেন, যদি আমার রব আমাকে পথ প্রদর্শন না করতে থাকেন, তবে আমিও তোমাদের মত পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম এবং চাদকেই স্বীয় পালনকর্তা এবং উপাস্য মনে করে বসতাম। কিন্তু এর উদয়াস্তের পরিবর্তনশীল অবস্থা আমাকে সতর্ক করেছে যে, এটিও আরাধনার যোগ্য নয়। এ আয়াতে এদিকেও ইঙ্গিত আছে যে, আমার রব অন্য কোন শক্তি, যার পক্ষ থেকে আমাকে সর্বক্ষণ পথ প্রদর্শন করা হয়। এরপর একদিন সূর্য উদিত হতে দেখে পুনরায় জাতিকে শুনিয়ে ঐভাবেই বললেনঃ (তোমাদের ধারণা অনুযায়ী)

এটি আমার রব এবং এটি বৃহত্তম। কিন্তু এ বৃহত্তমের স্বরূপও অতি সত্ত্বর দৃষ্টিগোচর হয়ে যাবে। সেমতে যথাসময়ে সূর্যও অন্ধকারে মুখ লুকালে জাতির সামনে সর্বশেষ প্রমাণ সম্পন্ন করার পর প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরলেন এবং বললেন, ‘হে আমার জাতি! আমি তোমাদের এসব মুশরিকসুলভ ধারণা থেকে মুক্ত। তোমরা আল্লাহ তা'আলার সৃষ্ট জীবকেই আল্লাহর অংশীদার স্থির করেছ। অতঃপর এ স্বরূপ উদঘাটন করলেন যে, আমার ও তোমাদের পালনকর্তা এসব সৃষ্টবস্তুর মধ্যে কোনটিই হতে পারে না। এরা স্বীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে অন্যের মুখাপেক্ষী এবং প্রতি মুহুর্তে উত্থান-পতন, উদয়-অস্ত ইত্যাদি পরিবর্তনের আবর্তে নিপতিত। বরং সেই সত্তা আমাদের সবার রব, যিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যে সৃষ্ট সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন। তাই আমি আমার চেহারা তোমাদের স্বনির্মিত প্রতিমা এবং পরিবর্তন ও প্রভাবের আবর্তে নিপতিত নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে ফিরিয়ে আল্লাহ ‘ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু’-এর দিকে করে নিয়েছি এবং আমি তোমাদের ন্যায় মুশরিক বা অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই। এ বিতর্কে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নবীসুলভ প্রজ্ঞা ও উপদেশ প্রয়োগ করে এমন এক পন্থা অবলম্বন করলেন, যাতে প্রত্যেক সচেতন মানুষের মন ও মস্তিস্ক প্রভাবান্বিত হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সত্যকে উপলব্ধি করে ফেলে। মনে রাখতে হবে যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এ তর্ক ছিল প্রতিপক্ষকে নিজের মত ও পথের পক্ষে যুক্তি দাড় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে। তিনি সম্পূর্ণ জেনে-বুঝেই প্রতিপক্ষের দাবী খণ্ডন করার জন্য এ প্রজ্ঞার আশ্রয় নিয়েছিলেন, যাতে তারা উপস্থিত সকল বস্তুর ইবাদতের অসারতা বুঝতে সক্ষম হয়। [দেখুন, সাদী]

: ১০১
بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ أَنَّىٰ يَكُونُ لَهُ وَلَدٌ وَلَمْ تَكُنْ لَهُ صَاحِبَةٌ ۖ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

তিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা ,তাঁর সন্তান হবে কিভাবে ? তাঁর তো কোন সঙ্গিনী নেই।আর তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বদ্ধে তিনি সবিশেষ অবগত।

ফুটনোট

তেরতম রুকু’

: ১৫১
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ ۖ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۖ وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ مِنْ إِمْلَاقٍ ۖ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ ۖ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ۖ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

বলুন [১], ‘এস [২], তোমাদের রব তোমাদের উপর যা হারাম করেছেন তোমাদেরকে তা তিলাওয়াত করি, তা হচ্ছে , ‘ তোমারা তাঁর সাথে কোন শরীক করবে না [৩], পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে [৪], দারিদ্রের ভয়ে তোমার তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমরাই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযক দিয়ে থাকি [৫]।প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজের ধারে-কাছেও যাবে না [৬]। আল্লাহ্‌ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করবে না [৭]।’ তোমাদেরকে তিনি এ নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা বুঝতে পার।

ফুটনোট

ঊনিশতম রুকূ’

[১] আগত আয়াতসমূহে সেসব বস্তু সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেগুলোকে আল্লাহ্ তা’আলা হারাম করেছেন। বিশদ বর্ণনায় নয়টি বস্তুর উল্লেখ হয়েছে। এরপর দশম নির্দেশ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “এ দ্বীনই হচ্ছে আমার সরল পথ। এ পথের অনুসরণ কর"। এতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দ্বীন যে বিষয়কে হালাল বলেছে, তাকে হালাল এবং যে বিষয়কে হারাম বলেছে, তাকে হারাম মনে করবে- নিজের পক্ষ থেকে হালাল-হারামের ফতোয়া জারি করবে না। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনীত পথকে অনুসরনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাঁর পথ ব্যতীত আরও বহু পথ রয়েছে সেগুলো মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। সঠিক পথ একটি, আর বাতিল পথ অনেক। যারা আল্লাহর পথে চলবে আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। [সা’দী]

আগত আয়াতসমূহে যে দশটি বিষয় বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে, (১) আল্লাহ্ তা'আলার সাথে কাউকে ইবাদাত ও আনুগত্যে অংশীদার স্থির করা, (২) পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার না করা, (৩) দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করা, (৪) অশ্লীল কাজ করা, (৫) কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, (৬) ইয়াতীমের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করা, (৭) ওজন ও মাপে কম দেয়া, (৮) সাক্ষ্য, ফয়সালা অথবা অন্যান্য কথাবার্তায় অবিচার করা, (৯) আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ না করা এবং (১০) আল্লাহ তা'আলার সোজা-সরল পথ ছেড়ে অন্য পথ অবলম্বন করা। মুফাসসির আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ সূরা আলে ইমরানের মুহকাম আয়াতের বর্ণনায় এ আয়াতগুলোকেই বোঝানো হয়েছে। আদম 'আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সমস্ত নবীগণের শরী’আতই এসব আয়াত সম্পর্কে একমত। কোন দ্বীন বা শরী’আতে এগুলোর কোনটিই মনসূখ বা রহিত হয়নি। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৩১৭] আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘যে কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ যে বিষয়ের উপর ছিলেন সেটা জানতে চায় সে যেন সূরা আল-আন’আমের এ আয়াতগুলো পড়ে নেয়। [ইবন কাসীর]

[২] আয়াতগুলোর প্রথমেই বলা হয়েছে (تعَالوا) যার অর্থঃ ‘এস’। মূলতঃ উচ্চস্থানে দণ্ডায়মান হয়ে নিম্নের লোকদেরকে নিজের কাছে ডাকা অর্থে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। [কাশশাফ; কুরতুবী] এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, এ দাওয়াত কবুল করার মধ্যেই তাদের জন্য শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাধান্য বিদ্যমান। এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, আপনি তাদেরকে বলুন, এস, যাতে আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শোনাতে পারি যেগুলো আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। এটা প্রত্যক্ষভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত
বার্তা। এতে কারো কল্পনা, আন্দাজ ও অনুমানের কোন প্রভাব নেই [বাগভী] যাতে তোমরা এসব বিষয় থেকে আত্মরক্ষা করতে যত্নবান হও এবং অনর্থক নিজের পক্ষ থেকে আল্লাহর হালালকৃত বিষয়সমূহকে হারাম না কর। এ আয়াতে যদিও সরাসরি মক্কার মুশরিকদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে, কিন্তু বিষয়টি ব্যাপক হওয়ার কারণে সমগ্র মানব জাতিই এর আওতাধীন- মুমিন হোক কিংবা কাফের, আরব হোক কিংবা অনারব, উপস্থিত লোকজন হোক কিংবা অনাগত বংশধর। [দেখুন, তাফসীর আল-মানার]

[৩] সর্বপ্রথম মহাপাপ শির্ক, যা হারাম করা হয়েছেঃ

সযত্ন সম্বোধনের পর হারাম ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের তালিকায় সর্বপ্রথম বলা হয়েছেঃ আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক বা অংশীদার করো না। আরবের মুশরিকদের মত দেব-দেবীদেরকে বা মূর্তিকে ইলাহ বা উপাস্য মনে করো না। ইয়াহুদী ও নাসারাদের মত নবীগণকে আল্লাহ কিংবা আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করো না। অন্যদের মত ফিরিশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা বলে আখ্যা দিও না। মূৰ্খ জনগণের মত নবী ও ওলীগণকে জ্ঞান ও শক্তি-সামর্থ্যে আল্লাহর সমতুল্য সাব্যস্ত করো না। আল্লাহর জন্য যে সমস্ত ইবাদাত করা হয়, তা অপর কাউকে দিও না; যেমন, দো’আ, যবেহ, মানত ইত্যাদি।

এখানে (شيئًا) এর অর্থ এরূপ হতে পারে যে, ‘জলী’ অর্থাৎ প্রকাশ্য শির্ক ও ‘খফী’ অর্থাৎ প্রচ্ছন্ন শিক- এ প্রকারদ্বয়ের মধ্য থেকে কোনটিতেই লিপ্ত হয়ো না। প্রকাশ্য শির্কের অর্থ সবাই জানে যে, ইবাদাত-আনুগত্য অথবা অন্য বিশেষ গুণে অন্যকে আল্লাহ তা'আলার সমতুল্য অথবা তাঁর অংশীদার সাব্যস্ত করা। প্রচ্ছন্ন শির্ক এই যে, নিজ কাজ-কর্মে দ্বীনী ও পার্থিব উদ্দেশ্যসমূহে এবং লাভ-লোকসানে আল্লাহ তা'আলাকে কার্যনির্বাহী বলে বিশ্বাস করেও কার্যতঃ অন্যান্যকে কার্যনির্বাহী মনে করা এবং যাবতীয় প্রচেষ্টা অন্যদের সাথেই জড়িত রাখা। এছাড়া লোক দেখানো ইবাদাত করা, অন্যদেরকে দেখানোর জন্য সালাত ইত্যাদি ঠিকমত আদায় করা, নাম-যশ লাভের উদ্দেশ্যে দান-সদকা করা অথবা কার্যতঃ লাভ-লোকসানের মালিক আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সাব্যস্ত করা ইত্যাদিও প্রচ্ছন্ন শির্কের অন্তর্ভুক্ত। [দেখুন, আল-মানার; সা’দী; আশ-শিক ফীল কাদীম ওয়াল হাদীস, ১৬৮-১৮০; ১২৯৫-১৩১০]

[৪] দ্বিতীয় গোনাহ পিতা-মাতার সাথে অসদ্ব্যবহারঃ

আয়াতে বলা হয়েছেঃ “পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা”। উদ্দেশ্য এই যে, পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ো না। তাদেরকে কষ্ট দিও না; কিন্তু বিজ্ঞজনোচিত ভঙ্গিতে বলা হয়েছে যে, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। অন্য আয়াতে তাদের আনুগত্য ও সুখবিধানকে আল্লাহ তা'আলার ইবাদাতের সাথে সংযুক্ত করে বলা হয়েছে, “আপনার রব নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে”। [সূরা আল-ইসরা: ২৩] অন্য জায়গায় বলা হয়েছে, “আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং পিতা-মাতার। তারপর আমার দিকেই প্রত্যাবর্তন”। [সূরা লুকমান:১৪] অর্থাৎ বিপরীত করলে শাস্তি পাবে। তাছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘সর্বোত্তম কাজ কোনটি’? তিনি উত্তরে বললেনঃ ‘সঠিক ওয়াক্তে সালাত আদায় করা', তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ ‘এরপর কোনটি’? উত্তর হলঃ ‘পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার'। আবার প্রশ্ন করলেনঃ ‘এরপর কোনটি? উত্তর হলঃ 'আল্লাহর পথে জিহাদ'। [বুখারীঃ ৫২৭, মুসলিমঃ ৮৫] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার বললেন, ‘লাঞ্ছিত হয়েছে, লাঞ্ছিত হয়েছে, লাঞ্ছিত হয়েছে’। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেনঃ ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! কে লাঞ্ছিত হয়েছে’? তিনি বললেনঃ ‘যে ব্যক্তি পিতা-মাতাকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে নি’। [মুসলিমঃ ২৫৫১]


[৫] তৃতীয় হারাম- সন্তান হত্যাঃ

আয়াতে বর্ণিত তৃতীয় হারাম বিষয় হচ্ছে সন্তান হত্যা। এখানে পূর্বাপর সম্পর্ক এই যে, ইতোপূর্বে পিতা-মাতার হক বর্ণিত হয়েছে, যা সন্তানের কর্তব্য। এখন সন্তানের হক বর্ণিত হচ্ছে, যা পিতা-মাতার কর্তব্য। জাহেলিয়াত যুগে সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা কিংবা হত্যা করার ব্যাপারটি ছিল সন্তানের সাথে অসদ্ব্যবহারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। আয়াতে তা নিষিদ্ধ করে বলা হয়েছেঃ “দারিদ্র্যের কারণে স্বীয় সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমরা তোমাদেরকে এবং তাদেরকে- উভয়কেই জীবিকা দান করব”। জাহেলিয়াত যুগে এ নিকৃষ্টতম নির্দয়-পাষণ্ড প্রথা প্রচলিত ছিল যে, কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে কাউকে জামাতা করার লজ্জা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো। মাঝে মাঝে জীবিকা নির্বাহ কঠিন হবে মনে করে পাষণ্ডরা নিজ হাতে সন্তানদেরকে হত্যা করত। কুরআনুল কারীম এ কু-প্রথা রহিত করে দিয়েছে। [ইবন কাসীর]

(৬) চতুর্থ হারাম নির্লজ্জ কাজঃ

আয়াতে বর্ণিত চতুর্থ হারাম বিষয় হচ্ছে নির্লজ্জ কাজ। এ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “প্রকাশ্য হোক কিংবা গোপন, যে কোন রকম অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না”। (فواحش) শব্দের সাধারণ অর্থঃ অশ্লীলতা ও নির্লজ্জ কাজ। যাবতীয় বড় গোনাহ (فحش) ও (فحشاء) এর অর্থের অন্তর্ভুক্ত। মোটকথা, এ আয়াত নির্লজ্জতার প্রকৃত অর্থের দিক দিয়ে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সমস্ত গোনাহকে এবং সাধারণের মধ্যে প্রসিদ্ধ অর্থের দিক দিয়ে ব্যভিচারের প্রকাশ্য ও গোপন সকল পন্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এ সম্পর্কে নির্দেশ এই যে, এগুলোর কাছেও যেও না। কাছে যাওয়ার অর্থ এরূপ মজলিশ ও স্থান থেকে বেঁচে থাকা যেখানে গেলে গোনাহে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং এরূপ কাজ থেকেও বেঁচে থাক, যা দ্বারা এসব গোনাহর পথ খুলে যায়। কারণ, যে লোক নিষিদ্ধ জায়গার আশেপাশে ঘোরাফেরা করে, সে তাতে প্রবেশ করার কাছাকাছি হয়ে যায়। [সা'দী] অন্য আয়াতেও বলা হয়েছে, “বলুন, নিশ্চয় আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা। " [সূরা আল-আ’রাফ: ৩৩] অনুরূপভাবে অন্যত্র এসেছে, “আর তোমরা প্রকাশ্য এবং প্রচ্ছন্ন পাপ বর্জন কর” [সূরা আল-আন’আমঃ ১২০] এ সব আয়াত একই অর্থবোধক। এসব আয়াতেই অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা পরিত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর চেয়ে বেশী আত্মাভিমানী কেউই নেই, সেজন্য তিনি প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতা হারাম ঘোষণা করেছেন।‘ [বুখারী ৪৬৩৪; মুসলিম: ২৭৬০]

[৭] পঞ্চম হারাম বিষয় অন্যায় হত্যাঃ

এ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “আল্লাহ্ তা'আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না, তবে ন্যায়ভাবে”। এ ন্যায়ভাবে’র ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘তিনটি কারণ ছাড়া কোন মুসলিমের খুন হালাল নয়। (এক) বিবাহিত হওয়া সত্বেও ব্যভিচারে লিপ্ত হলে, (দুই) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করলে তার কেসাস হিসাবে তাকে হত্যা করা যাবে এবং (তিন) সত্যদ্বীন ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলিমদের জামা'আত থেকে পৃথক হয়ে গেলে। [বুখারীঃ ৬৮৭৮, মুসলিমঃ ১৬৭৬]

বিনা কারণে মুসলিমকে হত্যা করা যেমন হারাম, তেমনিভাবে এমন কোন অমুসলিমকে হত্যা করাও হারাম, যে কোন ইসলামী দেশের প্রচলিত আইন মান্য করে বসবাস করে কিংবা যার সাথে মুসলিমের চুক্তি থাকে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন যিম্মী অমুসলিমকে হত্যা করে, সে আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। যে আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধী সত্তর বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যায়। [ইবন মাজাহ ২৬৮৭]

: ১৬২
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

বলুন, ‘আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই জন্য [১]।’

ফুটনোট

[১] এখানে (نسك) শব্দের অর্থ কুরবানী। হজের ক্রিয়াকর্মকেও (نسك) বলা হয়। মুজাহিদ বলেন, (نسك) বলতে সে প্রাণীকে বুঝায় যা হজ বা উমরাতে যবেহ করা হয়। [তাবারী] তবে এ শব্দটি সাধারণ ইবাদাত-উপাসনার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। তাই (ناسك) শব্দটি (عابد) বা ইবাদতকারী অর্থেও বলা হয়। [কুরতুবী] আয়াতে এ সবকটি অর্থই নেয়া যেতে পারে। মুফাসসিরীন সাহাবা ও তাবেয়ীগণের কাছ থেকেও এসব তাফসীর বর্ণিত রয়েছে। তবে এখানে সাধারণ ইবাদাত অর্থ নেয়াই অধিক সঙ্গত মনে হয়। আয়াতের অর্থ এই যে, আমার সালাত, আমার সমগ্র ইবাদাত, আমার জীবন, আমার মরণ- সবই বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত। এখানে দ্বীনের শাখাগত কাজকর্মের মধ্যে প্রথমে সালাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, এটি যাবতীয় সৎকর্মের প্রাণ ও দ্বীনের স্তম্ভ। এরপর অন্যান্য সব কাজ ও ইবাদাত সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর সমগ্র জীবনের কাজকর্ম ও অবস্থা এবং সবশেষে মরণের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, আমার এ সবকিছুই একমাত্র বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত- যার কোন শরীক নেই। এটিই হচ্ছে পূর্ণ বিশ্বাস ও পূর্ণ আন্তরিকতার ফল। মানুষ জীবনের প্রতিটি কাজে ও প্রতিটি অবস্থায় এ কথা মনে রাখবে যে, আমার এবং সমগ্র বিশ্বের একজন পালনকর্তা আছেন, আমি তার দাস এবং সর্বদা তাঁর দৃষ্টিতে রয়েছি।

: ১৬৩
لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ

‘তাঁর কোন শরীক নেই। আর আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে [১] এবং আমি মুসলিমদের মধ্যে প্রথম।’

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ আমাকে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে এরূপ ঘোষণা করার এবং আন্তরিকতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর আমি সর্বপ্রথম অনুগত মুসলিম। উদ্দেশ্য এই যে, এ উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম মুসলিম আমি আত-তাফসীরুস সহীহ কেননা, প্রত্যেক উম্মতের সর্বপ্রথম মুসলিম স্বয়ং ঐ নবীই হন, যার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়। আর প্রত্যেক নবীর দ্বীনই ছিল ইসলাম। [ইবন কাসীর]

: ১৯০
فَلَمَّا آتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آتَاهُمَا ۚ فَتَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ

আতঃপর তিনি (আলাহ) যখন তাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সুসন্তান দান করেন, তখন তারা তাদেরকে তিনি যা দিয়েছেন সেটাতে আল্লাহ্‌র বহু শরীক নির্ধারণ করে [১]; বস্তুত তারা যাদেরকে (তাঁর সাথে) শরীক করে আল্লাহ্‌ তার চেয়ে অনেক উর্ধ্বে [২]।

ফুটনোট

[১] কাতাদা বলেন, হাসান বসরী বলতেন, এর দ্বারা ইয়াহুদী ও নাসারাদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে সন্তান-সন্তুতি দান করেন, কিন্তু তারা সেগুলোকে ইয়াহুদী কিংবা নাসারা বানিয়ে ছাড়ে। [তাবারী; ইবন কাসীর]

[২] ইয়াহুদী ও নাসারা ছাড়াও বাস্তবে যারাই আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে অন্যের জন্য নির্দিষ্ট করে তারাও এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারে। কারণ মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহই সর্বপ্রথম মানব জাতিকে সৃষ্টি করেন। মুশরিকরাও এ কথা অস্বীকার করে না। তারপর পরবর্তী কালের প্রত্যেকটি মানুষকেও তিনি অস্তিত্ব দান করেন। আর একথাটিও মুশরিকরা জানে। তাই দেখা যায়, গর্ভাবস্থায় সুস্থ, সবল ও নিখুঁত অবয়বধারী শিশু ভূমিষ্ঠ হবার ব্যাপারে আল্লাহর উপরই পূর্ণ ভরসা করা হয়। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়ে যদি চাঁদের মত ফুটফুটে সুন্দর শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলেও জাহেলী কর্মকাণ্ড নবতর রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে কোন দেবী, অবতার, অলী ও পীরের নামে নজরানা ও শিন্নি নিবেদন করা হয় এবং শিশুকে এমন সব নামে অভিহিত করা হয় যেন মনে হয় সে আল্লাহর নয়, বরং অন্য কারোর অনুগ্রহের ফল। যেমন তার নামকরণ করা হয় হোসাইন বখশ, (হোসাইনের দান) পীর বখশ (পীরের দান), আব্দুর রাসূল (রাসূলের দাস), আবদুল উয্‌যা (উয্‌যার দাস), আবদে শামস (সূর্য দেবতার দাস) ইত্যাদি, ইত্যাদি।

আরবের মুশরিক সম্প্রদায়ের অপরাধ ছিল এই যে, তারা সুস্থ, সবল ও পূর্ণ অবয়ব সম্পন্ন সন্তান জন্মের জন্য আল্লাহর কাছে দো'আ করতো কিন্তু সন্তানের জন্মের পর আল্লাহর এ দানে অন্যদেরকে অংশীদার করতো। নিঃসন্দেহে তাদের এ অবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু বর্তমানে তাওহীদের দাবীদারদের মধ্যে আমরা যে শির্কের চেহারা দেখছি তা তার চাইতেও খারাপ। এ তাওহীদের তথাকথিত দাবীদাররা সন্তানও চায় আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের কাছে। গর্ভ সঞ্চারের পর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের নামে মানত মানে এবং সন্তান জন্মের পর তাদেরই আস্তানায় গিয়ে নজরানা নিবেদন করে। এরপর জাহেলী যুগের আরবরাই কেবল মুশরিক, আর এরা নাকি পাক্কা তাওহীদবাদী!!

: ১৯১
أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ

তারা কি এমন বস্তুকে শরীক করে যারা কিছুই সৃষ্টি করে না? বরং ওরা নিজেরাই সৃষ্ট [১],

ফুটনোট

[১] এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ঐ সমস্ত লোকদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করছেন, যার আল্লাহর সাথে মূর্তি, দেব-দেবী ইত্যাদিকে শরীক করে। অথচ তারা সৃষ্ট, মানুষের হাতের তৈরী। তারা কিছুরই মালিক নয়। ক্ষতি কিংবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না। উপাসনাকারীদের পক্ষে প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও তাদের নেই। বরং এগুলো হচ্ছে, মৃত। নড়াচড়া কিংবা শোনা বা দেখার ক্ষমতাও তাদের নেই। বরং উপাসনাকারীরা এগুলোর চেয়ে বেশী শক্তিশালী; কারণ তাদের চোখ আছে, কান আছে, তারা পাকড়াও করার ক্ষমতা রাখে। তাহলে তোমরা কিভাবে তাদের ইবাদত করছ যারা কোন কিছুই সৃষ্টি করেনি? কোন কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতাও যাদের নেই? [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা'আলা অনুরূপ বলেছেন, “হে মানুষ! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগের সাথে তা শোন: তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা তো কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, এ উদ্দেশ্যে তারা সবাই একত্র হলেও। এবং মাছি যদি কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের কাছ থেকে, এটাও তারা তার কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষনকারী ও অন্বেষনকৃত কতই না দুর্বল; তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি যেমন মর্যাদা দেয়া উচিত ছিল, আল্লাহ নিশ্চয় ক্ষমতাবান, পরাক্রমশালী।" [সূরা হজ-৭৩-৭৪] আল্লাহ বলেন, যে, তাদের উপাস্যগুলো সবাই একত্রিত হলেও কোন একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না। বরং যদি মাছি এ সমস্ত উপাস্যদের কোন নিকৃষ্ট খাবার নিয়ে উড়ে চলে যায়, তারা সেটাও মাছির কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। যার অবস্থা হচ্ছে এই, রিযক কিংবা সাহায্য লাভের জন্য কিভাবে ইবাদত তার করা হবে? [ইবন কাসীর]

: ১৯২
وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ نَصْرًا وَلَا أَنْفُسَهُمْ يَنْصُرُونَ

ওরা না তাদেরকে সাহায্য করতে করতে পারে আর না নিজেদেরকে সাহায্য করতে পারে [২]।

ফুটনোট

[১] এমনকি কেউ তাদের ক্ষতি করতে চাইলেও তারা নিজেদের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এ সমস্ত মা’বুদদেরকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিলেন এবং এ বিষয়টি নিয়ে মুশরিকদের উপাস্যদেরকে অপমান করতে ছাড়েন নি। আল্লাহ বলেন, “তারপর ইবরাহীম তাদের উপর সবলে আঘাত হানলেন।" [সূরা আস-সাফফাত: ৯৩] আরও বলেন, “তারপর তিনি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলেন মূর্তিগুলোকে, তাদের প্রধানটি ছাড়া ; যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ৫৮] [ইবন কাসীর]

: ৩০
وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللَّهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللَّهِ ۖ ذَٰلِكَ قَوْلُهُمْ بِأَفْوَاهِهِمْ ۖ يُضَاهِئُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَبْلُ ۚ قَاتَلَهُمُ اللَّهُ ۚ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ

আর ইয়াহূদীরা বলে, ‘উযাইর আল্লাহ্‌র পুত্র’ [১], এবং নাসারারা বলে, ‘ মসীহ্ আল্লাহ্‌র পুত্র।’ এটা তাদের মুখের কথা আগে যারা কুফরী করেছিল তারা তাদের মত কথা বলে। আল্লাহ্‌ তাদেরকে ধ্বংস করুন। কোন্ দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে [২]!

ফুটনোট

[১] আয়াতের ভাষ্য হতে বুঝা যায় যে, ইয়াহুদীদের সবাই এ কথা বলেছিল। কারও কারও মতে, এটি ইয়াহুদীদের এক গোষ্ঠী বলেছিল। সমস্ত ইয়াহুদীদের আকীদা বিশ্বাস নয়। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, সাল্লাম ইবন মিশকাম, নুমান ইবন আওফা, শাস ইবন কায়স ও মালেক ইবনুস সাইফ তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, আমরা কিভাবে আপনার অনুসরণ করতে পারি, অথচ আপনি আমাদের কেবলা ত্যাগ করেছেন, আপনি উযায়েরকে আল্লাহর পুত্র বলে মেনে নেন না? তখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করলেন। [তাবারী; সীরাতে ইবন হিশাম ১/৫৭০] উযায়ের সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, ইয়াহুদীরা যখন তাওরাত হারিয়ে ফেলেছিল তখন উযায়ের সেটা তার মুখস্থ থেকে পুণরায় জানিয়ে দিয়েছিল। তাই তাদের মনে হলো যে, এটা আল্লাহর পুত্র হবে, না হয় কিভাবে এটা করতে পারল [সা’দী; কুরতুবী; ইবন কাসীর] এটা নিঃসন্দেহে একটি মিথ্যা কথা যে, উযায়ের তাদেরকে মূল তাওরাত তার মুখস্থ শক্তি দিয়ে এনে দিয়েছিল। কারণ উযায়ের কোন নবী হিসেবেও আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়নি। এর মাধ্যমে ইয়াহুদীরা তাদের হারিয়ে যাওয়া গ্রন্থের ধারাবাহিকতা প্রমাণ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু সেটা তাদের দাবী মাত্র। ঐতিহাসিকভাবে এমন কিছু প্রমাণিত হয়নি। [দেখুন, ড. সাউদ ইবন আবদুল আযীয, দিরাসাতুন ফিল আদইয়ান-আল-ইয়াহুদিয়্যাহ ওয়ান নাসরনিয়্যাহ]

[২] এ আয়াতটি হলো পূর্বের আয়াতের ব্যাখ্যা। পূর্বে আয়াতে মোটামুটিভাবে বলা হয় যে, তারা আল্লাহর উপর ঈমান রাখে না। এখানে তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয় যে, ইহুদীরা উযাইরকে আর নাসারারা ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে আল্লাহ্‌র পুত্র সাব্যস্ত করে। [ইবন কাসীর] তাই তাদের ঈমান ও তাওহীদের দাবী নিরর্থক। এরপর বলা হয়ঃ “এটি তাদের মুখের কথা”। এর অর্থ তারা মুখে যে কুফর উক্তি করে যাচ্ছে তার পেছনে না কোন দলীল আছে, না কোন যুক্তি। কত মারাত্মক সে উক্তি যা তারা করে যাচ্ছে। অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা বলেছেন, “এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও ছিল না। তাদের মুখ থেকে বের হওয়া বাক্য কী সাংঘাতিক তারা তো শুধু মিথ্যাই বলে" [সূরা আল-কাহাফ: ৫] অতঃপর বলা হয়ঃ “এরা পূর্ববর্তী কাফেরদের মত কথা বলে, আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন। এরা কোন উল্টা পথে চলে যাচ্ছে। ইবন কাসীরা এর অর্থ হল ইয়াহুদী ও নাসারারা নবীগণকে আল্লাহর পুত্র বলে পুর্ববর্তী কাফের ও মুশরিকদের মতই হয়ে গেল, তারা ফেরেশতা ও লাত মানাত মূর্তিদ্বয়কে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করেছিল। [বাগভী]

0:00
0:00