আনন্দ
আনন্দ
: ৩৬
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ ۖ وَقُلْنَا اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ

অতঃপর শয়তান সেখান থেকে তাদের পদস্থলন ঘটালো [১] এবং তারা যেখানে ছিলো সেখান থেকে তাদের কে বের করলো [২]। আর আমরা বললাম, ‘তোমরা একে অন্যের শ্ত্রু রুপে নেমে যাও; এবং কিছু দিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল যমীনে’।

ফুটনোট

[১] (زَلَّةٌ) শব্দের অর্থ বিচ্যুতি বা পদস্থলন। অর্থাৎ শয়তান আদম ও হাওয়া ‘আলাইহিমাস সালামকে পদস্খলিত করেছিল বা তাদের বিচ্যুতি ঘটিয়েছিল। কুরআনের এসব শব্দে পরিস্কার এ কথা বোঝা যায় যে, আদম ও হাওয়া ‘আলাইহিস সালাম কর্তৃক আল্লাহ্ তা'আলার হুকুম লংঘন সাধারণ পাপীদের মত ছিল না, বরং শয়তানের প্রতারণায় প্রতারিত হয়েই তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পরিণামে যে গাছের ফল নিষিদ্ধ ছিল, তা খেয়ে বসলেন। এ বর্ণনার দ্বারা বোঝা গেল যে, আদম '‘আলাইহিস সালামকে বিশেষ গাছ বা তার ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং এ ব্যাপারেও সাবধান করে দেয়া হয়েছিল যে, শয়তান তোমাদের শক্র। কাজেই সে যেন তোমাদেরকে পাপে লিপ্ত করে না দেয়। এরপরও আদম '‘আলাইহিস সালাম এর তা খাওয়া বাহ্যিকভাবে পাপ বলে গণ্য। অথচ নবীগণ পাপ থেকে বিমুক্ত ও পবিত্র। সঠিক তথ্য এই যে, এখানে কয়েকটি ব্যাপারে আলেমদের ইজমা তথা ঐক্যমত সংঘটিত হয়েছেঃ

১) নবীগণ উম্মতের নিকট আল্লাহ্‌র নির্দেশ পৌছানোর ব্যাপারে যাবতীয় ভুল-ত্রুটি বা পাপ হতে মুক্ত।

২) অনুরূপভাবে মর্যাদাহানিকর নিম্নমানের কর্মকাণ্ড থেকেও মুক্ত।

৩) তাদের দ্বারা মর্যাদাহানিকর নয় এমন সগীরা গোনাহ হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে কোন প্রকার গোনাহ বা ভুলের উপর অবস্থান করতে দেননা। অর্থাৎ তাদের দ্বারা কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে তাদেরকে সাবধান করা হয়, যাতে তারা তাওবা করে সংশোধন করে নেন। ফলে তাদের মর্যাদা পূর্বের চেয়ে আরও বেশী বৃদ্ধি পায়।

[২] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সূর্য যে দিনগুলোতে উদিত হয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে জুম'আর দিন। এতে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এতেই জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। আর এ দিনই তাকে জান্নাতে থেকে বের করা হয়েছে "[মুসলিম: ৮৫৪] এখানে এ বিতর্ক অনাবশ্যক যে, শয়তান জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর আদম '‘আলাইহিস সালামকে প্রতারিত করার জন্য কিভাবে আবার সেখানে প্রবেশ করলো? কারণ, শয়তানের প্রবঞ্চনার জন্য জান্নাতে প্রবেশের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা শয়তান ও জীন জাতিকে দূর থেকেও প্রবঞ্চনা ও প্রতারণা করার ক্ষমতা দিয়েছেন।

: ১৪
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ۗ ذَٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الْمَآبِ

নারী, সন্তান, সোনারুপার স্তূপ, বাছাই কড়া ঘোড়া, গবাদি পশু এবং খেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য বস্তু [১]। আর আল্লাহ্‌, তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।

ফুটনোট

[১] আয়াতের সারমর্ম এই যে, আল্লাহ্‌ তা'আলা মানুষের মনে এসব বস্তুর প্রতি স্বভাবগতভাবেই আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে যে, কে এগুলোর আকর্ষণে মত্ত হয়ে আখেরাতকে ভুলে যায় এবং কে এসবের আসল স্বরূপ ও ধ্বংসশীল হওয়ার বিষয় অবগত হয়ে শুধু যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু অর্জনে সচেষ্ট হয় ও আখেরাতের কল্যাণ আহরণের লক্ষ্যে তার সুচারু ব্যবহার করে। আল্লাহ্ তা'আলা যেসব বস্তুকে মানুষের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে দিয়েছেন, শরীয়ত অনুযায়ী সেগুলো পরিমিত উপার্জন করলে এবং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সঞ্চয় করলে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবী হাসিল হবে। পক্ষান্তরে অবৈধ পন্থায় সেগুলো ব্যবহার করলে অথবা বৈধ পন্থায় হলেও এগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত নিমজ্জিত হয়ে আখেরাত বিস্মৃত হয়ে গেলে ধবংস অনিবার্য হয়ে পড়বে। [সা’দী] অর্থাৎ এসব হচ্ছে পার্থিব জীবনে ব্যবহার করার জন্য; মন বসাবার জন্য নয়। আর আল্লাহ্‌র কাছে রয়েছে উত্তম ঠিকানা। সেখানে চিরকাল থাকতে হবে এবং যার নেয়ামত ধবংস হবে না, হ্রাসও পাবে না। আখেরাতে আল্লাহ্‌ তা'আলা মুমিনের জন্য যে নেয়ামত রেখেছেন, তার তুলনা দুনিয়ার জীবনের সামগ্ৰীসমূহের কোন কিছু দিয়েই দেয়া যায় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দুনিয়া অভিশপ্ত এবং যা কিছু এতে আছে তা অভিশপ্ত। তবে যা আল্লাহ্‌র যিক্‌র বা স্মরণে করা হয় ও তার সাথে সম্পৃক্ত হয় এবং দ্বীনী জ্ঞানে আলেম ও দ্বনী জ্ঞান অর্জনকারী। [তিরমিয়ী: ২৩২২; ইবন মাজাহ: ৪১১২]

: ১৮৫
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবলমাত্র কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদেরকে কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হবে। অতঃপর যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলকাম [১]। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয় [২]।

ফুটনোট

[১] পৃথিবীর এমন কোন মানুষ নেই যে সফলতা চায় না। এ সফলতা একেকজন একেক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ধারণ করে। কেউ দুনিয়ার প্রচুর সম্পদ, নারী, গাড়ী-বাড়ী, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদির মাধ্যমে নির্ধারণ করে। কেউ আবার সুস্বাস্থ্যকে নির্ধারণ করে। কেউ আবার অন্যকিছু। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানুষের সফলতা কিসে তা আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতে বলে দিয়েছেন। তিনি বলছেন যে, যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে সেই সফলকাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতে এক বেত পরিমান জায়গা দুনিয়া ও তাতে যা আছে তার থেকে উত্তম”। তারপর তিনি উপরোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন। [তিরমিযী: ৩০১৩]

[২] এ আয়াতে বলে দেয়া হয়েছে যে, প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর আখেরাতে নিজের কৃতকর্মের প্রতিদান ও শাস্তি প্রাপ্ত হবে, যা কঠিনও হবে আবার দীর্ঘও হবে। সুতরাং বুদ্ধিমানের পক্ষে সে চিন্তা করাই উচিত। এ পরিপ্রেক্ষিতে সে লোকই সত্যিকার কৃতকার্য, যে জাহান্নাম থেকে অব্যাহতি লাভ করবে এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট হবে। তা প্রাথমিক পর্যায় হোক- যেমন, সৎকর্মশীল আবেদগণের সাথে যেরূপ আচরণ করা হবে- অথবা কিছু শাস্তি ভোগের পরেই হোক- যেমন, পাপী মুসলিমদের অবস্থা। কিন্তু সমস্ত মুসলিমই শেষ পর্যন্ত জাহান্নাম থেকে অব্যাহতি লাভ করে অনন্ত কালের জন্য জান্নাতের আরাম-আয়েশ ও সুখ-শান্তির অধিকারী হবে। পক্ষান্তরে কাফেরদের চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম। কাজেই তারা যদি সামান্য কয়েকদিনের পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে গর্বিত হয়ে ওঠে, তবে সেটা একান্তই ধোঁকা। সেজন্যই আয়াতে বলা হয়েছে “দুনিয়ার জীবন তো হলো ধোঁকার উপকরণ।” তার কারণ এই যে, সাধারণতঃ এখানকার ভোগ-বিলাসই হবে আখেরাতের কঠিন যন্ত্রণার কারণ। পক্ষান্তরে এখানকার দুঃখ-কষ্ট হবে আখেরাতের সঞ্চয়।

: ৭৭
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً ۚ وَقَالُوا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا الْقِتَالَ لَوْلَا أَخَّرْتَنَا إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ ۗ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَىٰ وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا

আপনি তাদেরকে দেখেননি যাদেরকে বলা হয়েছিল, ‘তোমরা তোমাদের হস্ত সংবরণ কর, সালাত কায়েম কর [১] এবং যাকাত দাও [২] ?’ অতঃপর যখন তাদেরকে যুদ্ধের বিধান দেয়া হল তখন তাদের একদল মানুষকে ভয় করছিল আল্লাহকে ভয় করার মত অথবা তারচেয়েও বেশী এবং বলল, ‘হে আমাদের রব! আমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান কেন দিলেন? আমাদেরকে কিছু দিনের অবকাশ কেন দিলেন না?’ [৩] বলুন, ‘পার্থিব ভোগ সামান্য [৪] এবং যে তাকওয়া অবলম্বন করে তার জন্য আখেরাতই উত্তম [৫]। আর তোমাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না’।

ফুটনোট

এগারতম রুকূ‘

[১] ইমাম যুহরী বলেন, সালাত কায়েম করার অর্থ, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের প্রত্যেকটিকে তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করা। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

[২] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আব্দুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং তার কয়েকজন সাথী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা যখন মুশরিক ছিলাম তখন আমরা সম্মানিত ছিলাম। কিন্তু যখন ঈমান আনলাম তখন আমাদেরকে অসম্মানিত হতে হচ্ছে। একথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘আমি ক্ষমা করতে নির্দেশিত হয়েছি, সুতরাং তোমরা যুদ্ধ করো না। তারপর যখন আল্লাহ তাকে মদীনায় হিজরত করালেন এবং যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হল তখন তাদের কেউ কেউ যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকল। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন। [নাসায়ী: ৩০৮৬; মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ২/৬৭, ৩০৬]

[৩] সুদ্দী বলেন, তারা ‘কিছুদিনের অবকাশ’ বলে মৃত্যু পর্যন্ত সময় চাচ্ছিল। অর্থাৎ তারা যেন বলছে যে, তাদের মৃত্যু হয়ে গেলে তারপর এ আয়াত নাযিল হওয়ার দরকার ছিল। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

[৪] হাসান বসরী এ আয়াত পাঠ করে বলেন, ঐ বান্দাকে আল্লাহ রহমত করুন, যে দুনিয়াকে এ আয়াত অনুযায়ী সঙ্গী বানিয়েছে। দুনিয়ার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উদাহরণ হচ্ছে, সে ব্যক্তির ন্যায়, যে একটি ঘুম দিল, ঘুমের মধ্যে সে কিছু ভাল স্বপ্ন দেখল, তারপর তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আত-তাফসীরুস সহীহ]

[৫] আয়াতে দুনিয়ার নেয়ামতের তুলনায় আখেরাতের নেয়ামতসমূহকে উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার কয়েকটি কারণ রয়েছে:

দুনিয়ার নেয়ামত অল্প এবং আখেরাতের নেয়ামত অধিক।
দুনিয়ার নেয়ামত ক্ষণস্থায়ী এবং আখেরাতের নেয়ামত অনন্ত-অফুরন্ত।
দুনিয়ার নেয়ামতসমূহের সাথে নানা রকম অস্থিরতাও রয়েছে, কিন্তু আখেরাতের নেয়ামত এ সমস্ত জঞ্জালমুক্ত।

দুনিয়ার নেয়ামত লাভ অনিশ্চিত, কিন্তু আখেলাতের নেয়ামত প্রত্যেক মুত্তাকী ব্যক্তির জন্য একান্ত নিশ্চিত। [তাফসীরে কাবীর]

: ২৪
قَالَ اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ

তিনি বললেন, ‘তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অন্যের শক্র এবং যমীনে কিছুদিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল।’
ফুটনোট

১০ : ২৩
فَلَمَّا أَنْجَاهُمْ إِذَا هُمْ يَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۗ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا بَغْيُكُمْ عَلَىٰ أَنْفُسِكُمْ ۖ مَتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُكُمْ فَنُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখন তারা যমীনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করতে থাকে [১]। হে মানুষ! তোমাদের সীমালঙ্ঘন কেবলমাত্র তোমাদের নিজেদের প্রতিই হয়ে থাকে [২]; দুনিয়ার জীবনের সুখ ভোগ করে নাও [৩], পরে আমাদেরই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমরা তোমাদেরকে জানিয়ে দেব তোমরা যা করতে।

ফুটনোট

[১] এর সমার্থে আরো আয়াত দেখুন, সূরা আল-ইসরাঃ ৬৭।

[২] অর্থাৎ তোমাদের অন্যায়-অনাচারের বিপদ তোমাদেরই উপর পড়ছে। এতে বুঝা যাচ্ছে, যুলুমের কারণে বিপদ অবশ্যম্ভাবী এবং দুনিয়াতেও তা ভোগ করতে হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ অন্যায়-অনাচার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি আখেরাতের পূর্বে দুনিয়াতেই আল্লাহর পক্ষ থেকেই প্রাপ্ত হওয়া উপযুক্ত। তদুপরি আখেরাতে তার শাস্তি তো রয়েছেই। [আবু দাউদঃ ৪৯০২, তিরমিযীঃ ২৫১১, ইবনে মাজাহঃ ৪২১১] অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ দু'টি গোনাহর শাস্তি তাড়াতাড়ি দেয়া হয়, দেরী করা হয় না। অন্যায়-অনাচার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা’। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৩৬, বুখারী আদাবুল মুফরাদঃ ৮৯৫, হাকেম মুস্তাদরাকঃ ৪/১৭৭] তাছাড়া হাদীসে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “সীমালঙ্ঘন বা যুলুম করো না, আল্লাহ যুলুমকারীকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের যুলুম তো তোমাদের নিজের নফস বা আত্মার উপরই”। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/৩৩৮]

[৩] এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক. তোমাদের সীমালঙ্ঘন তো দুনিয়ার ভোগ অর্জনের জন্যই। দুই সীমালঙ্ঘন করে তোমরা দুনিয়ার ভোগ অর্জন করতে পারবে। তিন. তোমাদের সীমালঙ্ঘনের মাধ্যমে কেবল দুনিয়ার জীবনের সময়টুকুতেই উপকৃত হতে পারবে। চার. তোমরা যে সীমালঙ্ঘন করছ তার উদাহরণ হচ্ছে দুনিয়ার জীবনে ভোগ অর্জনের মত। [ফাতহুল কাদীর]

১০ : ৭০
مَتَاعٌ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ نُذِيقُهُمُ الْعَذَابَ الشَّدِيدَ بِمَا كَانُوا يَكْفُرُونَ

দুনিয়াতে তাদের জন্য আছে কিছু সুখ-সম্ভোগ; পরে আমাদেরই কাছে তাদের ফিরে আসা। তারপর তাদেরকে কঠোর শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করাব; কারণ তারা কুফরী করত।
ফুটনোট

১১ :
وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَتَاعًا حَسَنًا إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ ۖ وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ

আরো যে, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তাঁরদিকে ফিরে আস [১], তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট কালের এক উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন [২] এবং তিনি প্রত্যেক গুণীজনকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দান করবেন [৩]। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর মহাদিনের শাস্তির আশংকা করি।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে পূর্ববর্তী যাবতীয় গুণাহ হতে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর দরবারে ফিরে আসার আহবান জানাই। এবং ভবিষ্যতে একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকার প্রচেষ্টা চালাতে বলি। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো, কারণ আমি দিনে একশত বার তার কাছে তাওবা করি। [মুসলিম: ২৭০২]

[২] অর্থাৎ দুনিয়ায় তোমাদের অবস্থান করার জন্য যে সময় নির্ধারিত রয়েছে সেই সময় পর্যন্ত তিনি তোমাদের খারাপভাবে নয় বরং ভালোভাবেই রাখবেন। তাঁর নিয়ামতসমূহ তোমাদের ওপর বর্ষিত হবে। তাঁর বরকত ও প্রাচুর্য লাভে তোমরা ধন্য হবে। তোমরা সচ্ছল ও সুখী-সমৃদ্ধ থাকবে। তোমাদের জীবন শান্তিময় ও নিরাপদ হবে। তোমরা লাঞ্ছনা, হীনতা ও দীনতার সাথে নয় বরং সম্মান ও মর্যাদার সাথে জীবন যাপন করবে। এ বক্তব্যটিই সূরা নাহ্‌লের ৯৭নং আয়াতে এভাবে বলা হয়েছেঃ “যে ব্যক্তিই ঈমান সহকারে সৎকাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো।” অনুরূপভাবে এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যাই খরচ করবে তাতেই আল্লাহ্‌র কাছ থেকে এর জন্য সওয়াব পাবে। এমনকি যা তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তাতেও"। [বুখারীঃ ৫৬, মুসলিমঃ ১৬২৮] আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ "যদি কেউ গুণাহর কাজ করে তখন তার জন্য একটি গুণাহ লিখা হয়। পক্ষান্তরে যদি সওয়াবের কাজ করে তবে তার জন্য দশটি সওয়াব লিখা হয়। তারপর যদি দুনিয়াতে তার গুণাহের শাস্তি পেয়ে যায় তবে তার জন্য আখেরাতে দশটি সওয়াবই বাকী থাকে, কিন্তু যদি দুনিয়াতে শাস্তি না পায় তবে আখেরাতে একটি গুণাহের বিনিময়ে একটি সওয়াব চলে গেলেও তার আরও নয়টি সওয়াব অবশিষ্ট থাকে। সুতরাং যার একক দশকের উপর প্রাধান্য পায় তার তো ধ্বংসই অনিবার্য। [তাবারী]। এরপর আয়াতে বলা হয়েছে, তাদেরকে আল্লাহ উত্তম জীবন সামগ্রী প্রদান করবেন। এ হচ্ছে ইস্তেগফার ও তাওবার ফল। [কুরতুবী] উন্নত অবস্থা, দুনিয়াতে সার্বিক নিরাপত্তা বোঝানো হয়েছে। আর ‘নির্দিষ্ট সময়’ বলে মৃত্যুকে বোঝানো হয়েছে। অন্য আয়াতেও সেটা বলা হয়েছে, যেমন হুদ আলাইহিস সালাম তার কাওমকে বলেছিলেন, “হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তার দিকেই ফিরে আস। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না” [সূরা হুদ: ৫২] অনুরূপ নূহ আলাইহিস সালামের সাথে তার কাওমের কথোপকথন সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “অতঃপর বলেছি, জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, এবং তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা" [সূরা নূহ ১০-১২] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো, কারণ আমি দিনে একশত বার তার কাছে তাওবা করি। [মুসলিম: ২৭০২]

[৩] মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ, তার যে সমস্ত কাজ সে সওয়াবের আশায় করেছে। চাই তা সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে হোক অথবা হাত বা পা দ্বারা কোন ভাল আমল করেছে, অথবা কোন ভাল কথা বলেছে, অথবা তার যে সমস্ত ভাল কাজ অতিরিক্ত করেছে সে সবই তাকে প্রদান করা হবে। [তাবারী] কাতাদা বলেন, তা আখেরাতে প্রদান করা হবে [তাবারী]

১৩ : ১৭
أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَابِيًا ۚ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِثْلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ

তিনি আকাশ হতে বৃষ্টিপাত করেন, ফলে উপত্যকাসমূহ তাদের পরিমান অনুযায়ী প্লাবিত হয় এবং প্লাবন তার উপরের আবর্জনা বহন করে। এরূপে আবর্জনা উপরিভাগে আসে যখন অলংকার বা তৈজসপত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে কিছু আগুনে উত্তপ্ত করা হয় [১]। এভাবে আল্লাহ্‌ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকেন। যা আবর্জনা তা ফেলে দেয়া হয় এবং যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়। এভাবে আল্লাহ্ উপমা দিয়ে থাকেন [২]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ নির্ভেজাল ধাতু গলিয়ে কাজে লাগাবার জন্য স্বর্ণকারের চুলা গরম করা হয়। কিন্তু যখনই এ কাজ করা হয় তখনই অবশ্যি ময়লা আর্বজনা ওপরে ভেসে ওঠে এবং এমনভাবে তা ঘূর্ণিত হতে থাকে যাতে কিছুক্ষণ পর্যন্ত উপরিভাগে শুধু আর্বজনারাশিই দৃষ্টিগোচর হতে থাকে।

[২] এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা মূলত দু’টি উদাহরণ পেশ করেছেন। একটি পানির, অপরটি আগুনের। এ দু’টি উদাহরণে আল্লাহ্ তা’আলা হক্ব যে স্থায়ী এবং বাতিল যে ক্ষণস্থায়ী তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। উদাহরণ দু’টির মধ্যে প্রথমটি হল, আল্লাহ্ তা’আলা যখন আকাশ হতে বৃষ্টিপাত করেন তখন উপত্যকাসমূহ তাদের নিজের পরিমাণ অনুযায়ী পানি ধারণ করে। যদি উপত্যকাটি বড় হয়, তবে বেশী পানি ধারণ করে। আর যদি ছোট হয় তবে তার নিজের পরিমাণ অনুযায়ী পানি ধারণ করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ওহীর মাধ্যমে যে জ্ঞান নাযিল করা হয়েছিল এ উপমায় তাকে বৃষ্টির সাথে তুলনা করা হয়েছে। আর ঈমানদার, সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ স্বাভাবিক বৃত্তির অধিকারী মানুষদেরকে এমনসব নদীনালার সাথে তুলনা করা হয়েছে যেগুলো নিজ নিজ ধারণক্ষমতা অনুযায়ী রহমতের বৃষ্টি ধারায় নিজেদেরকে পরিপূর্ণ করে প্রবাহিত হতে থাকে। তাদের মধ্যে জ্ঞানের তারতম্য আছে। একজনের মনে অনেক জ্ঞান ধারণ করে। আরেক জনের মন বেশী জ্ঞান ধারণ করতে পারে না। অন্যদিকে সত্য অস্বীকারকারী ও সত্য বিরোধীরা ইসলামের বিরুদ্ধে যে হৈ-হাংগামা ও উপদ্রব সৃষ্টি করেছিল তাকে এমন ফেনা ও আবর্জনারাশির সাথে তুলনা করা হয়েছে যা হামেশা বন্যা হবার সাথে সাথেই পানির উপরিভাগে উঠে আসতে থাকে। প্লাবন তার উপরে আবর্জনা বহন করে বলে এ কথাই বুঝানো হয়েছে। এগুলো মূলতঃ সন্দেহ ও কুপ্রবৃত্তির সমষ্টি। হকের সাথে এগুলোও মানুষের মনে প্রবেশ করে মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রতারিত করতে চায় কিন্তু অন্তরের আল্লাহ্‌র ওহীর পরিমাণ অনুসারে দ্রুত অথবা ধীরে ধীরে তারা তাদের ঈমানী জোরে সে সমস্ত সন্দেহ ও কুপ্রবৃত্তিকে দূরীভূত করে দিতে পারে। তখন শুধুমাত্র ঈমান বাকী থাকে। আর যা কুফরী ও সন্দেহ সেগুলো অপসৃত হয়ে যায়।

দ্বিতীয় উদাহরণটি হল, আগুণে পুড়ে খাঁটি হওয়ার উদাহরণ। সোনা, রূপা এবং এ জাতীয় ধাতব বস্তু যখনই পোড়ানো হয় তখন তার মধ্যস্থিত যাবতীয় ময়লা ও খাদ আলাদা হয়ে যায়। শুধু খাঁটি অংশই বাকী থাকে। তেমনিভাবে ঈমান যখন মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে তখন যৎসামান্য তাতে ময়লা-আবর্জনা সহ অবস্থান করতে থাকে। তারপর ঈমান ও দলীল-প্রমাণাদি পরপর তার কাছে আসতে থাকে। ধীরে ধীরে তার সমস্ত সন্দেহ ও কুপ্রবৃত্তি দূরীভূত হয়ে সে খাঁটি হয়ে যায়। তার মনে আর কোন পংকিলতা স্থান পায় না।

এ দু’টি উদাহরণের আরেকটি দিক হলো, আল্লাহ্‌র দরবারে যতক্ষণ কোন আমল খাঁটিভাবে তাঁর উদ্দেশ্যে না হবে ততক্ষণ গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। যতক্ষণ সন্দেহ ও কুপ্রবৃত্তির তাড়না থাকবে ততক্ষণ তা দূর করার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। [ইবন কাসীর; অনুরূপ আরও দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেম, ই’লামুল মুওয়াকে’য়ীনঃ ১/১১৭; ইগাসাতুল লাহফানঃ ১/২১; আল-আমসাল ফিল কুরআনঃ ১১]

১৩ : ২৬
اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ وَفَرِحُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مَتَاعٌ

আল্লাহ্ যার জন্য ইচ্ছে তার জীবনোপকরণ বৃদ্ধি করেন এবং সংকুচিত করেন; কিন্তু এরা দুনিয়ার জীবন নিয়েই আনন্দিত, অথচ দুনিয়ার জীবন তো আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র [১]।

ফুটনোট

[১] এ আয়াতের পটভূমি হচ্ছে, সাধারণ মূর্খ ও অজ্ঞদের মতো মক্কার কাফেররাও বিশ্বাস ও কর্মের সৌন্দর্য্য বা কদৰ্যতা দেখার পরিবর্তে ধনাঢ্যতা বা দারিদ্র্যের দৃষ্টিতে মানুষের মূল্য ও মর্যাদা নিরূপণ করতো। তাদের ধারণা ছিল, যারা দুনিয়ায় প্রচুর পরিমাণ আরাম আয়েশের সামগ্ৰী লাভ করছে তারা যতই পথভ্রষ্ট ও অসৎকর্মশীল হোক না কেন তারা আল্লাহ্‌র প্রিয়। আর অভাবী ও দারিদ্র পীড়িতরা যতই সৎ হোক না কেন তারা আল্লাহ্‌র অভিশপ্ত। এ ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করে বলা হচ্ছে, রিযিক কমবেশী হবার ব্যাপারটা আল্লাহ্‌র অন্য নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। সেখানে অন্যান্য অসংখ্য প্রয়োজন ও কল্যাণ-অকল্যাণের প্রেক্ষিতে কাউকে বেশী ও কাউকে কম দেয়া হয়। এটা এমন কোন মানদণ্ড নয় যার ভিত্তিতে মানুষের নৈতিক ও মানসিক সৌন্দর্য্য ও কদর্যতার ফায়সালা করা যেতে পারে। মানুষের মধ্যে কে চিন্তা ও কর্মের সঠিক পথ অবলম্বন করেছে এবং কে ভুল পথ, কে উন্নত ও সৎগুণাবলী অর্জন করেছে এবং কে অসৎগুণাবলী -এরি ভিত্তিতে তাদের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের আসল মানদণ্ড নির্ধারণ হওয়া উচিত। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়টি আল্লাহ্ তা’আলা বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। যেমন আল্লাহ্ বলেন, “তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সাহায্যস্বরূপ যে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করি, তা দ্বারা তাদের জন্য সকল মংগল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না।” [আল-মু’মিনূনঃ ৫৫-৫৬] আয়াতের শেষে আল্লাহ্ তা’আলা দুনিয়ার জীবনের যাবতীয় সামগ্ৰী যে আখেরাতের তুলনায় কিছুই নয় তা বর্ণনা করে বলেছেন যে, “দুনিয়ার জীবন তো আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র।” অন্যত্র এসেছে, “বলুন, পার্থিব ভোগ সামান্য এবং যে মুত্তাকী তার জন্য আখেরাতই উত্তম। তোমাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না।” [সূরা আন-নিসাঃ ৭৭] আরো এসেছে, “কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দাও, অথচ আখিরাতই উৎকৃষ্ট এবং স্থায়ী।” [সূরা আল-আ’লাঃ ১৬-১৭] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া হলো এমন যেন তোমাদের কেউ সমুদ্রে তার এই আঙ্গুল ঢুকিয়ে আনল”, তারপর তিনি নিজের তর্জনীর দিকে ইঙ্গিত করলেন। [মুসলিমঃ ২৮৫৮] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক মরা কান ছোট ছাগলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি তা দেখিয়ে সাহাবায়ে কিরামকে বললেন, “আল্লাহর শপথ! এ ছাগলটি যেমন তার মালিকের নিকট মূল্যহীন তেমনি দুনিয়ার মূল্য আল্লাহ্‌র নিকট তার চেয়েও সামান্য”। [মুসলিমঃ ২৯৫৭]

১৬ : ১১৭
مَتَاعٌ قَلِيلٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

তাদের সুখ-সম্ভোগ সামান্যই এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদয়ক শাস্তি।
ফুটনোট

২৪ : ৩৩
وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّىٰ يُغْنِيَهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ ۗ وَالَّذِينَ يَبْتَغُونَ الْكِتَابَ مِمَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ فَكَاتِبُوهُمْ إِنْ عَلِمْتُمْ فِيهِمْ خَيْرًا ۖ وَآتُوهُمْ مِنْ مَالِ اللَّهِ الَّذِي آتَاكُمْ ۚ وَلَا تُكْرِهُوا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَاءِ إِنْ أَرَدْنَ تَحَصُّنًا لِتَبْتَغُوا عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَمَنْ يُكْرِهْهُنَّ فَإِنَّ اللَّهَ مِنْ بَعْدِ إِكْرَاهِهِنَّ غَفُورٌ رَحِيمٌ

আর যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ্‌ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে [১] এবং তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি চাইলে, তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে বলে জানতে পার। আর আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তোমরা তাদেরকে দান কর। আর তোমাদের দাসীরা লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে দুনিয়ার জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না। আর যারা তাদেরকে বাধ্য করবে, নিশ্চয় তাদেরকে বাধ্য করার পর আল্লাহ্‌ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু [২]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ যারা অর্থ-সম্পদের দিক দিয়ে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না এবং বিয়ে করলে আশঙ্কা আছে যে, স্ত্রীর অধিকার আদায় না করার কারণে গোনাহগার হয়ে যাবে, তারা যেন পবিত্রতা ও ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করে, যে পর্যন্ত না আল্লাহ্‌ তা‘আলা স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে সম্পদশালী বানিয়ে দেন। বিয়ে করার কারণে আল্লাহ্‌ তা‘আলার পক্ষ থেকে ধনাঢ্যতা দান করার ওয়াদা তখন, যখন পবিত্ৰতা সংরক্ষণ ও সুন্নাত পালনের নিয়তে তা সম্পাদন করা হয়, অতঃপর আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল ও ভরসা করা হয়। [দেখুন-কুরতুবী] এই ধৈর্যের জন্য হাদীসে একটি কৌশলও বলে দেয়া হয়েছে যে, তারা বেশী পরিমানে সিয়াম পালন করবে। তারা এরূপ করলে আল্লাহ্‌ তা‘আলা স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে বিয়ের সামর্থ্য পরিমানে অর্থ-সম্পদ দান করবেন। এ প্রসংগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যে হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে সেগুলোই এ আয়াতগুলোর সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করতে পারে। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “হে যুবকগণ! তোমাদের মধ্য থেকে যে বিয়ে করতে পারে তার বিয়ে করে নেয়া উচিত। কারণ এটি হচ্ছে চোখকে কুদৃষ্টি থেকে বাঁচাবার এবং মানুষের সততা ও চারিত্রিক পবিত্ৰতা রক্ষার উৎকৃষ্ট উপায়। আর যার বিয়ে করার ক্ষমতা নেই তার সাওম পালন করা উচিত। কারণ সাওম মানুষের দেহের উত্তাপ ঠাণ্ডা করে দেয়।” [বুখারীঃ ১৯০৫, মুসলিমঃ ১০১৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ “তিন ব্যাক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্‌র দায়িত্ব। এক ব্যাক্তি হচ্ছে, যে চারিত্রিক বিশুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য বিয়ে করে। দ্বিতীয় ব্যাক্তি হচ্ছে, মুক্তিলাভের জন্য যে গোলাম লিখিতভাবে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং তার মুক্তিপণ দেবার নিয়ত রাখে। আর তৃতীয় ব্যাক্তি, যে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করার জন্য বের হয়।” [তিরমিযীঃ ১৬৫৫, নাসাঈঃ ৬/১৫, ইবনে মাজাহঃ ২৫১৮, আহমাদঃ ২/২৫১]

[২] এ আয়াতে বর্ণিত, “আর তোমাদের দাসীরা লজ্জাস্থানের পবিত্ৰতা রক্ষা করতে চাইলে দুনিয়ার জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না।” এখানে “লজ্জাস্থানের পবিত্ৰতা রক্ষা করতে চাইলে” কথাটি শর্ত হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি। বরং সাধারণ নিয়মের কথাই বলা হয়েছে। কারণ, সাধারণতঃ পবিত্ৰা মেয়েদেরকে জোর জবরদস্তি ছাড়া অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত করা যায় না। [ফাতহুল কাদীর] আয়াতে পরবর্তীতে বলা হয়েছে, “আর যারা তাদেরকে বাধ্য করবে, নিশ্চয় তাদেরকে বাধ্য করার পর আল্লাহ্‌ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” এখানেও এ মেয়েদেরকে ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে। যবরদস্তিকারীদেরকে নয়। যবরদস্তিকারীদের গোনাহ অবশ্যই হবে। তবে যাদের উপর যবরদস্তি করা হয়েছে আল্লাহ্‌ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল। [ফাতহুল কাদীর]

২৫ : ১৮
قَالُوا سُبْحَانَكَ مَا كَانَ يَنْبَغِي لَنَا أَنْ نَتَّخِذَ مِنْ دُونِكَ مِنْ أَوْلِيَاءَ وَلَٰكِنْ مَتَّعْتَهُمْ وَآبَاءَهُمْ حَتَّىٰ نَسُوا الذِّكْرَ وَكَانُوا قَوْمًا بُورًا

তারা বলবে, ‘পবিত্র ও মহান আপনি! আপনার পরিবর্তে আমরা অন্যকে অবিভাবকরূপে গ্রহণ করতে পারি না [১]; আপনিই তো তাদেরকে এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরকে ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলেন; পরিণামে তারা যিকর তথা স্মরণ ভুলে গিয়েছিল এবং পরিণত হয়েছিল এক ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ে [২]।

ফুটনোট

[১] কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়বস্তুটি এসেছে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ ‘‘যেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্র করবেন তারপর ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করবেন, এরা কি তোমাদেরই বন্দেগী করতো? তারা বলবেঃ পাক-পবিত্র আপনার সত্তা, আমাদের সম্পর্ক তো আপনার সাথে, এদের সাথে নয়। এরা তো জিনদের (অর্থাৎ শয়তান) ইবাদাত করতো। এদের অধিকাংশই তাদের প্রতিই ঈমান এনেছিল।” [সূরা সাবা ৪০-৪১] অনুরূপভাবে আরো বলা হয়েছেঃ “আর যখন আল্লাহ্‌ জিজ্ঞেস করবেন, হে মারইয়ামের ছেলে ঈসা! তুমি কি লোকদের বলেছিলে তোমরা আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে উপাস্যে পরিণত করো? সে বলবে, পাক-পবিত্র আপনার সত্তা, যে কথা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার জন্য কবে শোভন ছিল? আমি তো এদেরকে এমন সব কথা বলেছিলাম যা বলার হুকুম আপনি আমাকে দিয়েছিলেন, তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ্‌র বন্দেগী করো, যিনি আমার রব এবং তোমাদেরও রব।” [সূরা আল-মায়েদাহঃ ১১৭]

[২] অর্থাৎ তারা ছিল সংকীর্ণমনা ও নীচ প্রকৃতির লোক। তিনি রিযিক দিয়েছিলেন যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কিন্তু তারা সবকিছু খেয়েদেয়ে নিমকহারাম হয়ে গেছে এবং তাঁর প্রেরিত নবীগণ তাদেরকে যেসব উপদেশ দিয়েছিলেন তা ভুলে গেছে। [দেখুন-ফাতহুল কাদীর, বাগভী]

২৬ : ২০৫
أَفَرَأَيْتَ إِنْ مَتَّعْنَاهُمْ سِنِينَ

আপনি ভেবে দেখুন, যদি আমরা তাদেরকে দীর্ঘকাল ভোগ-বিলাস করতে দেই [১],

ফুটনোট

[১] এ আয়াতে ইঙ্গিত আছে যে, দুনিয়াতে দীর্ঘ জীবন লাভ করাও আল্লাহ্‌ তা‘আলার একটি নেয়ামত। কিন্তু যারা এই নেয়ামতের না-শোকরী করে, বিশ্বাস স্থাপন করে না, তাদের দীর্ঘ জীবনের নিরাপত্তা ও অবকাশ কোন কাজে আসবে না। আর এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এক হাদীসে এসেছে, তিনি বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন কাফেরকে নিয়ে এসে জাহান্নামে এক প্রকার চুবিয়ে আনার পর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি তোমার জীবনে কখনো ভাল কিছু পেয়েছ? সে বলবেঃ হে প্ৰভূ! আপনার শপথ, কখনো পাইনি। অপরদিকে দুনিয়ার সবচেয়ে দূৰ্ভাগা ব্যাক্তিকে নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে তুমি কি দুনিয়াতে কখনো কষ্ট পেয়েছ? সে বলবে, আপনার শপথ, হে আমার প্রভূ! কখনো নয়। [মুসলিমঃ ২৮০৭]

২৬ : ২০৬
ثُمَّ جَاءَهُمْ مَا كَانُوا يُوعَدُونَ

তারপর তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল তা তাদের কাছে এসে পড়ে,
ফুটনোট

২৬ : ২০৭
مَا أَغْنَىٰ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يُمَتَّعُونَ

তখন যা তাদের ভোগ-বিলাসের উপকরণ হিসেবে দেয়া হয়েছিল তা তাদের কি উপকারে আসবে?
ফুটনোট

২৮ : ৬০
وَمَا أُوتِيتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَزِينَتُهَا ۚ وَمَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ

আর তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা তো দুনিয়ার জীবনের ভোগ ও শোভামাত্র। আর যা আল্লাহ্‌র কাছে আছে তা উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি অনুধাবন করবে না?
ফুটনোট

২৮ : ৬১
أَفَمَنْ وَعَدْنَاهُ وَعْدًا حَسَنًا فَهُوَ لَاقِيهِ كَمَنْ مَتَّعْنَاهُ مَتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ثُمَّ هُوَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْمُحْضَرِينَ

যাকে আমরা উত্তম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সে তো তা পাবেই, সে কি ঐ ব্যাক্তির সমান যাকে আমরা দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সম্ভার দিয়েছি, তারপর কিয়ামতের দিন সে হবে হাযিরকৃতদের [১] অন্তর্ভুক্ত?

ফুটনোট

[১] কিয়ামতের দিন সবাই হাযির হবে। তবে যাকে আল্লাহ্‌ ভাল ওয়াদা করেছেন, যাকে তার আনুগত্যের কারণে জান্নাতে যাওয়ার ফরমান আল্লাহ্‌ দিয়েছেন, সে তা অবশ্যই পাবে। কিন্তু যে দুনিয়ার জীবনে সবকিছু পেয়ে গেছে এবং আল্লাহ্‌র কাজ করেনি। সে তো হিসাব ও প্রতিফল পাওয়ার জন্য হাযির হবে। আর যার হিসাব নেয়া হবে সে তো ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং দু’দল কখনো সমান হতে পারে না। সুতরাং বুদ্ধিমানের উচিত জেনে বুঝে যা ভাল তা গ্ৰহণ করা। [মুয়াসসার] এভাবে প্রথম ব্যাক্তি হচ্ছে ঈমানদার, তার জন্য জান্নাত। আর দ্বিতীয় ব্যাক্তি হচ্ছে কাফের, সে জাহান্নামে হাযির হবে। [জালালাইন] মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ তারা জাহান্নামে শাস্তি পাবে। [ইবন কাসীর]

৩০ : ৩৩
وَإِذَا مَسَّ النَّاسَ ضُرٌّ دَعَوْا رَبَّهُمْ مُنِيبِينَ إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا أَذَاقَهُمْ مِنْهُ رَحْمَةً إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُونَ

আর মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন তারা তাদের রবকে ডাকে তাঁরই অভিমুখী হয়ে। তারপর তিনি যখন তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ আস্বাদন করান, তখন তাদের একদল তাদের রবের সাথে শির্ক করে;
ফুটনোট

৩০ : ৩৪
لِيَكْفُرُوا بِمَا آتَيْنَاهُمْ ۚ فَتَمَتَّعُوا فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ

ফলে তাদেরকে আমরা যা দিয়েছি, তাতে তারা কুফরী করে। কাজেই তোমরা ভোগ করে নাও, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে!
ফুটনোট

৩১ : ২৪
نُمَتِّعُهُمْ قَلِيلًا ثُمَّ نَضْطَرُّهُمْ إِلَىٰ عَذَابٍ غَلِيظٍ

আমরা তাদেরকে ভোগ করতে দেব স্বল্প [১]। তারপর আমরা তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব।

ফুটনোট

[১] স্বল্প পরিমানও হতে পারে। আবার স্বল্প সময়ের জন্যও উদ্দেশ্য হতে পারে। দুনিয়ায় কাফেররা যা-ই পায় তা আখেরাতের তুলনায় পরিমানে স্বল্প আবার আখেরাতের তুলনায় স্বল্প সময়ের জন্যেই পেয়ে থাকে। [তাবারী, কুরতুবী, বাগভী]

৩৩ : ১৬
قُلْ لَنْ يَنْفَعَكُمُ الْفِرَارُ إِنْ فَرَرْتُمْ مِنَ الْمَوْتِ أَوِ الْقَتْلِ وَإِذًا لَا تُمَتَّعُونَ إِلَّا قَلِيلًا

বলুন, 'তোমাদের কোন লাভই হবে না পালিয়ে বেড়ানো, যদি তোমরা মৃত্যু অথবা হত্যার ভয়ে পালিয়ে যাও, তবে সে ক্ষেত্রে তোমাদেরকে সামান্যই ভোগ করতে দেয়া হবে।'
ফুটনোট

৪০ : ৩৯
يَا قَوْمِ إِنَّمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ

‘হে আমার সম্প্রদায়! এ দুনিয়ার জীবন কেবল অস্থায়ী ভোগের বস্তু, আর নিশ্চয় আখিরাত, তা হচ্ছে স্থায়ী আবাস।
ফুটনোট

৪২ : ৩৬
فَمَا أُوتِيتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَمَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ لِلَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

সুতরাং তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য সামগ্ৰী মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা উত্তম ও স্থায়ী, তাদের জন্য যারা ঈমান আনে এবং তাদের রবের উপর নির্ভর করে।
ফুটনোট

৪৩ : ২৯
بَلْ مَتَّعْتُ هَٰؤُلَاءِ وَآبَاءَهُمْ حَتَّىٰ جَاءَهُمُ الْحَقُّ وَرَسُولٌ مُبِينٌ

বরং আমি তাদেরকে এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরকে দিয়েছিলাম ভোগ করতে, অবশেষে তাদের কাছে আসল সত্য এবং স্পষ্ট বর্ণনাকারী রাসূল।
ফুটনোট

৪৩ : ৩৩
وَلَوْلَا أَنْ يَكُونَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً لَجَعَلْنَا لِمَنْ يَكْفُرُ بِالرَّحْمَٰنِ لِبُيُوتِهِمْ سُقُفًا مِنْ فِضَّةٍ وَمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُونَ

আর সব মানুষ এক মতাবলম্বী হয়ে পড়বে, এ আশংকা না থাকলে দয়াময়ের সাথে যারা কুফরী করে, তাদেরকে আমারা দিতাম তাদের ঘরের জন্য রৌপ্য-নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি যাতে তারা আরোহণ করে,
ফুটনোট

৪৩ : ৩৪
وَلِبُيُوتِهِمْ أَبْوَابًا وَسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِئُونَ

এবং তাদের ঘরের জন্য দরজা ও পালংক---যাতে তারা হেলান দেয়,
ফুটনোট

৪৩ : ৩৫
وَزُخْرُفًا ۚ وَإِنْ كُلُّ ذَٰلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَالْآخِرَةُ عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِينَ

আর (অনুরূপ দিতাম) স্বর্ণ নির্মিতও [১] ; এবং এ সবই তো শুধু দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সম্ভার। আর আখিরাত আপনার রবের নিকট মুত্তাকীদের জন্যই।

ফুটনোট

[১] কাফেররা বলেছিল, মক্কা ও তায়েফের কোন বড় ধনাঢ্য ব্যক্তিকে নবী করা হল না কেন? ৩৩ থেকে ৩৫ নং আয়াতসমূহে এর দ্বিতীয় জওয়াব দেয়া হয়েছে। এর সারমর্ম এই যে, নিঃসন্দেহে নবুওয়তের জন্যে কিছু যোগ্যতা ও শর্ত থাকা জরুরী। কিন্তু ধন-দৌলতের প্রাচুর্যের ভিত্তিতে কাউকে নবুওয়ত দেয়া যায় না। কেননা, ধন-দৌলত আমার দৃষ্টিতে এত নিকৃষ্ট ও হেয় যে, সব মানুষের কাফের হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকলে আমি সব কাফেরের উপর স্বর্ণ-রৌপ্যের বৃষ্টি বর্ষণ করতাম। এই সম্পদ তো এমন সব মানুষের কাছেও আছে যাদের ঘূণ্য কাজ-কর্মের পংকিলতায় গোটা সমাজ পূতিগন্ধময় হয়ে যায়। অথচ একেই তোমরা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড বানিয়ে রেখেছ। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "দুনিয়া আল্লাহর কাছে যদি মশার এক পাখার সমানও মর্যাদা রাখত, তবে আল্লাহ কোন কাফেরকে দুনিয়া থেকে এক ঢোক পানিও দিতেন না।” [তিরমিয়ী:২৩২০]

৪৭ : ১২
إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَهُمْ

নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আল্লাহ তাদেরকে প্ৰবেশ করাবেন জান্নাতে যার নীচে নহরসমূহ প্রবাহিত ; কিন্তু যারা কুফরী করেছে তারা ভোগ বিলাস করে এবং খায় যেমন চতুষ্পদ জন্তুরা খায় [১] ; আর জাহান্নামই তাদের নিবাস।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ জীবজন্তু খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কোনরূপ পরিমাণ-পরিমাপ মেনে চলে না। অনুরূপভাবে কাফেররাও খাদ্য-পানীয় গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতির ধার ধারে না। দেখুন- [ফাতহুল কাদীর, কুরতুবী] তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিন এক খাদ্যনালীতে খাবার গ্রহণ করে পক্ষান্তরে কাফের যেন সাতটি খাদ্যনালীর মাধ্যমে খাবার গলধকরণ করে। [বুখারী: ৫৩৯৩]

৫৭ : ২০
اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ ۖ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا ۖ وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ ۚ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

তোমারা জেনে রাখ, নিশ্চয় দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা, ক্রীড়া – কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক গর্ব –অহংকার, ধন-সম্পদ ও সন্তান –সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছু নয় [১]। এর উপমা হলো বৃষ্টি, যার উৎপন্ন শস্য–সম্ভার কৃষকদেরকে চমৎকার করে, তারপর সেগুলো শুকিয়ে যায়, ফলে আপনি ওগুলো পীতবর্ণ দেখতে পান, অবশেষে সেগুলো খড়–কুটোয় পরিণত হয়। আর আখেরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবন প্রতারণার সামগ্রী ছাড়া কিছু নয় [২]।

ফুটনোট

[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে বৰ্ণনা করা হয়েছে যে, ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া মোটেই ভরসা করার যোগ্য নয়। পার্থিব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু হয় এবং যাতে দুনিয়াদার ব্যক্তি মগ্ন ও আনন্দিত থাকে, প্রথমে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে পার্থিব জীবনের মোটামুটি বিষয়গুলো যথাক্রমে এইঃ প্রথমে ক্রীড়া, এরপর কৌতুক, এরপর সাজ-সজ্জা, এরপর পারস্পরিক অহমিকা, এরপর ধন ও জনের প্রাচুর্য নিয়ে পারস্পরিক গর্ববোধ। لعب শব্দের অর্থ এমন খেলা, لهوٌ এমন খেলাধুলা, যার আসল লক্ষ্য চিত্তবিনোদন زينة বা অঙ্গ-সজ্জা, পোশাক ইত্যাদির মোহ সর্বজনবিদিত। প্রত্যেক মানুষের জীবনের প্রথম অংশ ক্রীড়া অর্থাৎ لعب এর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। এরপর لهوٌ শুরু হয়। এরপর সে অঙ্গসজ্জায় ব্যাপৃত হয় এবং শেষ বয়সে সমসাময়িক ও সমবয়সীদের সাথে

تَفَاخُرٌفِي الْأَمْوَالِ وَالْأًدِ

বা প্রতিযোগিতার প্রেরণা সৃষ্টি হয়। উল্লেখিত ধারাবাহিকতায় প্রতিটি অর্থেই মানুষ নিজ অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু কুরআন পাক বলে যে, এই সবই হচ্ছে সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী। [দেখুন, সাদী, তাবারী]

[২] দুনিয়ায় মানুষের কর্মকাণ্ড বর্ণনার পর পবিত্র কুরআন বর্ণিত বিষয়বস্তুর একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছে,

كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا

এখানে غيث শব্দের অর্থ বৃষ্টি। الكفار শব্দটি মুমিনের বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত হলেও এর অপর আভিধানিক অর্থ কৃষকও হয়। আলোচ্য আয়াতে কেউ কেউ এ অর্থই নিয়েছেন। আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, বৃষ্টি দ্বারা ফসল ও নানা রকম উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়ে যখন সবুজ ও শ্যামল বর্ণ ধারণ করে, তখন কৃষকের আনন্দের সীমা থাকে না। কোন কোন তাফসীরবিদ الكفار শব্দটিকে প্রচলিত অর্থে ধরে বলেছেন যে, এতে কাফেররা আনন্দিত হয়। [কুরতুবী] এখানে প্রশ্ন হয় যে, সবুজ, শ্যামল ফসল দেখে কাফেররাই কেবল আনন্দিত হয় না, মুসলিমরাও হয়। জওয়াব এই যে, মুমিনের আনন্দ ও কাফেরের আনন্দের মধ্যে বিরাট ব্যবধান রয়েছে। ফলে দুনিয়ার অগাধ ধন-রত্ন পেয়েও মুমিন কাফেরের ন্যায় আনন্দিত ও মত্ত হয় না। তাই আয়াতে কাফের আনন্দিত হয় বলা হয়েছে। এরপর এই দৃষ্টান্তের সারসংক্ষেপ এরূপ বর্ণনা করা হয়েছে যে, ফসল ও অন্যান্য উদ্ভিদ যখন সবুজ শ্যামল হয়ে যায়, তখন দর্শক মাত্রই বিশেষ করে কাফেররা খুবই আনন্দিত ও মত্ত হয়ে উঠে। কিন্তু অবশেষে তা শুষ্ক হতে থাকে। প্রথমে পীতবর্ণ হয়, এরপরে সম্পূর্ণ খড়-কুটায় পরিণত হয়। মানুষও তেমনি প্রথমে তরতাজা ও সুন্দর হয়। শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত এরূপই কাটে। অবশেষে যখন বার্ধক্য আসে, তখন দেহের সজীবতা ও সৌন্দর্য সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায় এবং সবশেষে মরে মাটি হয়ে যায়। দুনিয়ার ক্ষণভঙ্গুরতা বর্ণনা করার পর আবার আসল উদ্দেশ্য- আখেরাতের চিন্তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আখেরাতের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে,

وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ

অর্থাৎ আখেরাতে মানুষ এ দু'টি অবস্থার মধ্যে যে কোনো একটির সম্মুখীন হবে। একটি কাফেরদের অবস্থা অর্থাৎ তাদের জন্যে কঠোর আযাব রয়েছে। অপরটি মুমিনদের অবস্থা; অর্থাৎ তাদের জন্যে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সস্তুষ্টি রয়েছে। এরপর সংক্ষেপে দুনিয়ার স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে,

وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

অর্থাৎ এসব বিষয় দেখা ও অনুধাবন করার পর একজন বুদ্ধিমান ও চক্ষুষ্মান ব্যক্তি এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হতে পারে যে, দুনিয়া একটি প্রতারণার স্থল। এখানকার সম্পদ, প্রকৃত সম্পদ নয়, যা বিপদমুহুর্তে কাজে আসতে পারে। অতঃপর আখেরাতের আযাব ও সওয়াব এবং দুনিয়ার ক্ষণভঙ্গুরতার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি এরূপ হওয়া উচিত যে, মানুষ দুনিয়ার সুখ ও আনন্দে মগ্ন না হয়ে আখেরাতের চিন্তা বেশী করবে। পরবর্তী আয়াতে তাই ব্যক্ত করা হয়েছে। ইবন কাসীর]

0:00
0:00