জাদুকর
জাদুকর
: ৫১
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ وَيَقُولُونَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا هَٰؤُلَاءِ أَهْدَىٰ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا سَبِيلًا

আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছিল, তারা জিব্‌ত ও তাগূতে বিশ্বাস করে [১]? তারা কাফেরদের সম্বন্ধে বলে, ‘এদের পথই মুমিনদের চেয়ে প্রকৃষ্টতর [২]।

ফুটনোট

অষ্টম রুকূ‘

[১] আয়াতে ‘জ্বিবত’ ও ‘তাগূত’ শীৰ্ষক দু’টি বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে। শব্দ দুটির মর্ম সম্পর্কে তাফসীরকার মনীষীবৃন্দের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আবিসিনীয় ভাষায় ‘জ্বিবত’ বলা হয় জাদুকরকে। আর ‘তাগুত’ বলা হয় গণক বা জ্যোতিষীকে। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, ‘জ্বিবত’ অর্থ জাদু এবং ‘তাগুত’ অর্থ শয়তান। মালেক ইবন আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, আল্লাহ ব্যতীত যে সমস্ত জিনিসের উপাসনা করা হয়, সে সবই তাগুত বলে অভিহিত হয়। ইমাম কুরতুবী বলেন যে, মালেক ইবন আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উক্তিটিই অধিক পছন্দনীয়। তার কারণ, কুরআন থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাক”। [সূরা আন-নাহল: ৩৬] কিন্তু উল্লেখিত বিভিন্ন মতের মাঝে কোন বিরোধ নেই। কাজেই এর যে কোনটিই গ্রহণ করা যায়। প্রকৃতপক্ষে ‘জ্বিবত’ প্রতিমাকেই বোঝাত, পরে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য পূজ্য বস্তুতে এর প্রয়োগ হতে আরম্ভ করে। [রুহুল মা’আনী] তাগুতের অর্থ ও প্রকারভেদ এবং প্রধান প্রধান তাগুত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সূরা আল-বাকারাহর ২৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় করা হয়েছে।

[২] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, ইয়াহুদীদের সর্দার হুইয়াই ইবন আখতাব ও কাব ইবন আশরাফ ওহুদ যুদ্ধের পর নিজেদের একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে কুরাইশদের সাথে সাক্ষাত করার উদ্দেশ্যে মক্কায় এসে উপস্থিত হয়। ইয়াহুদী সর্দার কাব ইবন আশরাফ আবু সুফিয়ানের কাছে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে তাদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়। তখন মক্কাবাসীরা কাব ইবন আশরাফকে বলল, তোমরা হলে একটি প্রতারক সম্পপ্রদায়। সত্য সত্যই যদি তোমরা তোমাদের এই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে সত্য হয়ে থাক, তবে আমাদের এ দুটি মূর্তির (জ্বিবত ও তাগুতের) সামনে সিজদা কর। সুতরাং সে কুরাইশদেরকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে তাই করল। তারপর কা’ব কুরাইশদেরকে বলল, তোমাদের মধ্য থেকে ত্রিশ জন এবং আমাদের মধ্য থেকে ত্ৰিশ জন লোক এগিয়ে আস, যাতে আমরা সবাই মিলে কা’বার প্রভূর সামনে দাড়িয়ে এ ওয়াদা করে নিতে পারি যে, আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। কা’বের এ প্রস্তাব কুরাইশরাও পছন্দ করল এবং সেভাবে তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যজোট গঠন করল। অতঃপর আবু সুফিয়ান কা’বকে বলল, তোমরা হলে শিক্ষিত লোক; তোমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব রয়েছে, কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ মূর্খ। সুতরাং তুমিই আমাদেরকে বল, প্রকৃতপক্ষে আমরা ন্যায়ের উপর রয়েছি, নাকি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ন্যায়ের উপর রয়েছেন? তখন কা’ব জিজ্ঞেস করল, তোমাদের দ্বীন কি? আবু সুফিয়ান উত্তরে বলল, আমরা হজ্বের জন্য নিজেদের উট জবাই করি এবং সেগুলোর দুধ খাওয়াই, মেহমানদিগকে দাওয়াত করি, নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখি এবং বায়তুল্লাহ (আল্লাহর ঘর)-এর তাওয়াফ করি, পক্ষান্তরে এর বিপরীতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পৈত্রিক দ্বীন পরিহার করেছেন, নিজের আত্মীয়-স্বজন থেকে পৃথক হয়ে গেছেন এবং সর্বোপরি তিনি আমাদের সনাতন দ্বীনের বিরুদ্ধে নিজের এক নতুন দ্বীন উপস্থাপন করেছেন। এসব কথা শোনার পর কা’ব ইবন আশরাফ বলল, তোমরাই ন্যায়ের উপর রয়েছ। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোমরাহ হয়ে গেছেন। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা আলোচ্য আয়াতটি নাযিল করে ওদের মিথ্যা ও প্রতারণার নিন্দা করেন। [দেখুন- সহীহ ইবন হিব্বানঃ ৬৫৭২]

: ১০৯
قَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَٰذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ

ফির’আউন সম্প্রদায়ের নেতারা বলল, ‘এ তো একজন সুদক্ষ জাদুকর [১],’

ফুটনোট

চৌদ্দতম রুকূ’

[১] (ملا) শব্দটি ব্যবহৃত হয় কোন সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী নেতৃবর্গকে বুঝানোর জন্য। অর্থ হচ্ছে, ফিরআউন সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এসব মু'জিযা দেখে তাদের সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বললঃ এ যে বড় পারদর্শী জাদুকর। তার কারণ প্রত্যেকের চিন্তা তার নিজ যোগ্যতা অনুসারেই হয়ে থাকে। সে হতভাগারা আল্লাহর পরিপূর্ণ কুদরাত ও মহিমা সম্পর্কে কি বুঝবে, যারা জীবনভর ফিরআউনকে রব আর জাদুকরদেরকে নিজেদের পথপ্রদর্শক মনে করেছে এবং জাদুকরদের ভোজবাজীই দেখে এসেছে। কাজেই তারা এহেন বিস্ময়কর ঘটনা দেখার পর এছাড়া আর কিইবা বলতে পারত যে, এটা একটা মহাজাদু। কিন্তু তারাও এখানে (ساحر) এর সাথে (عليم) শব্দটি যোগ করে একথা প্রকাশ করে দিয়েছে যে, মূসা আলাইহিস সালামের মু'জিযা সম্পর্কে তাদের মনেও এ অনুভূতি জন্মেছিল যে, এ কাজটি সাধারণ জাদুকরদের কাজ থেকে স্বতন্ত্র ও ভিন্ন প্রকৃতির। এজন্যই স্বীকার করে নিয়েছে যে, তিনি বড়ই বিজ্ঞ জাদুকর।

বস্তুতঃ আল্লাহ্ তা'আলা সর্বযুগেই নবী-রাসূলগণের মু'জিযাসমূহকে এমনি ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন যে, দর্শকবৃন্দ যদি সামান্যও চিন্তা করে আর হঠকারীতা অবলম্বন না করে তাহলে মু'জিযা ও জাদুর মাঝে যে পার্থক্য তা নিজেরাই বুঝতে পারে। জাদুকররা সাধারণতঃ অপবিত্রতা ও পঙ্কিলতার মধ্যে ডুবে থাকে। পঙ্কিলতা ও অপবিত্রতা যত বেশী হবে তাদের জাদুও তত বেশী কার্যকর হবে। পক্ষান্তরে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা হল নবী-রাসূলগণের সহজাত অভ্যাস। তাছাড়া মু'জিযা সরাসরি আল্লাহ্ তা'আলার কুদরাতের কাজ। তাই কুরআনুল কারীমে এ বিষয়টিকে আল্লাহ্ তা'আলার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। যেমন (وَلٰكِنَّ اللّٰهَ رَمٰى) “এবং আল্লাহ তা'আলাই সে তীর নিক্ষেপ করেছিলেন”। [সূরা আল-আনফাল: ১৭]

সারমর্ম এই যে, ফিরআউনের সম্প্রদায়ও মূসা আলাইহিস সালামের মু'জিযাকে নিজেদের জাদুকরদের কার্যকলাপ থেকে কিছুটা স্বতন্ত্রই মনে করেছিল। সেজন্যই একথা বলতে বাধ্য হয়েছিল যে, এ তো বড় বিজ্ঞ জাদুকর, সাধারণ জাদুকররা যে এমন কাজ দেখাতে পারে না।

: ১১২
يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ

‘ যেন তারা তোমার কাছে প্রতিটি সুদক্ষ জাদুকর উপস্থিত করে। ’
ফুটনোট

: ১১৩
وَجَاءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوا إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ

জাদুকররা ফির’আউনের কাছে এসে বলল, ‘আমারা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো [১]?’

ফুটনোট

[১] ফিরআউনের জাদুকররা প্রথমে এসেই মজুরী নিয়ে দরকষাকষি করতে শুরু করল। তার কারণ যারা ভ্রান্তবাদী পার্থিব লাভই হল তাদের মূখ্য। কাজেই যেকোন কাজ করার পূর্বে তাদের সামনে থাকে বিনিময় কিংবা লাভের প্রশ্ন। অথচ নবী-রাসূলগণ এবং তাদের যারা নায়েব বা প্রতিনিধি তারা প্রতি পদক্ষেপে ঘোষণা করেনঃ “আমরা যে সত্যের বাণী তোমাদের মঙ্গলের জন্য তোমাদেরকে পৌঁছে দেই তার বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান কামনা করি না। বরং আমাদের প্রতিদানের দায়িত্ব শুধু আল্লাহর উপরই রয়েছে”। [সূরা আস-শু'আরাঃ ১০৯, ১২৭, ১৪৫, ১৬৪, ১৮০] ফির'আউন তাদেরকে বললঃ তোমরা পারিশ্রমিক চাইছ? আমি পারিশ্রমিক তো দেবই আর তার সঙ্গে সঙ্গে তোমাদেরকে শাহী দরবারের ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত করে নেব।

: ১২০
وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ

এবং জাদুকরেরা সিজদাবনত হল।
ফুটনোট

১০ :
أَكَانَ لِلنَّاسِ عَجَبًا أَنْ أَوْحَيْنَا إِلَىٰ رَجُلٍ مِنْهُمْ أَنْ أَنْذِرِ النَّاسَ وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا أَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِنْدَ رَبِّهِمْ ۗ قَالَ الْكَافِرُونَ إِنَّ هَٰذَا لَسَاحِرٌ مُبِينٌ

মানুষের জন্য এটা কি আশ্চর্যের বিষয় যে, আমরা তাদেরই একজনের কাছে ওহী পাঠিয়েছি এ মর্মে যে, আপনি মানুষকে সতর্ক করুন [১] এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য তাদের রবের কাছে আছে উচ্চ মর্যাদা [২]! কাফিররা বলে, ‘এ তো এক সুস্পষ্ট জাদুকর !’

ফুটনোট

[১] এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা কাফের মুশরিকদের একটি সন্দেহ ও তার উত্তর তুলে ধরেছেন। সন্দেহটি ছিল এই যে, কাফেররা তাদের মূর্খতার দরুন সাব্যস্ত করে রেখেছিল যে, আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে যে নবী বা রাসূল আসবেন তিনি মানুষ হবেন না। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তাদের এ সন্দেহকে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এটা যে শুধু কুরাইশ কাফেরদের সন্দেহ তা নয়। পূর্ববর্তী উম্মতরাও তা বলেছিল। তারা বলেছিল “মানুষই কি আমাদেরকে পথের সন্ধান দেবে ?" [সূরা আত-তাগাবুনঃ ৬] নূহ ও হুদ এর কাওমও এ রকম বিস্মিত হয়েছিল। তখন নবীগণ তার জবাবে বলেছেন, “তোমরা কি বিস্মিত হচ্ছ যে, তোমাদেরই একজনের মাধ্যমে তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদের কাছে উপদেশ এসেছে?” [সূরা আল-আ’রাফঃ ৬৩, ৬৯] অনুরূপভাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাওমও বলেছে, “সে কি বহু ইলাহকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? এটা তো এক অত্যাশ্চর্য ব্যাপার!” [সূরা সোয়াদঃ ৫] ইবন আব্বাস বলেন, যখন আল্লাহ্ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল হিসেবে পাঠালেন তখন আরবরা সেটা মানতে অস্বীকার করেছিল। অথবা তাদের মধ্যে অনেকেই এ জন্য অস্বীকার করেছিল যে, আল্লাহ্ মহান যে তিনি তাঁর রাসূল বানাবেন মুহাম্মাদের মত একজন মানুষকে। তিনি এটা করতেই পারেন না। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [ইবন কাসীর] আল্লাহ তা'আলা তাদের এই ভ্রান্ত ধারণার উত্তর কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রকারে দিয়েছেন। এক আয়াতে বলেছেনঃ “যমীনের উপর বানিয়ে পাঠাতাম”। [আল-ইসরাঃ ৯৫] যার মূল কথা হল এই যে, রিসালাতের উদ্দেশ্য ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না রাসূল এবং যাদের মধ্যে রাসূল পাঠানো হচ্ছে এ দুয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে। বস্তুতঃ ফিরিশতার সম্পর্ক থাকে ফিরিশতাদের সাথে আর মানুষের সম্পর্ক থাকে মানুষের সাথে। যখন মানুষের জন্য রাসূল পাঠানোই উদ্দেশ্য, তখন কোন মানুষকেই রাসূল বানানো উচিত।

[২] এ বাক্যের দ্বারা সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। ইবনে আব্বাস বলেন, এর অর্থ যিকরুল আউয়াল তথা লাওহে মাহফুযে তাদের তাকদীরে সৌভাগ্যবান লিখা হয়েছে। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, তারা যে উত্তম আমল পেশ করেছে সে জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে। [ইবন কাসীর; সা’দী] অতএব, বাক্যের অর্থ দাড়ালো এই যে, ঈমানদারদেরকে এ সুসংবাদ দিয়ে দিন যে, তাদের জন্য তাদের পালনকর্তার কাছে অনেক বড় সম্মানিত মর্যাদা রয়েছে যা তারা নিশ্চিতই পাবে এবং পাওয়ার পর কখনো তা শেষ হয়ে যাবে না। চিরকালই তারা সে সম্মানিত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত থাকবেন। এ আয়াতের তাফসীর যদি আমরা কুরআনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে, এর সমার্থে সূরা আল-কাহফের ২-৩ নং আয়াতে এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে, তারা সেখানে সর্বদা অবস্থান করবে। মুজাহিদ বলেন, এর দ্বারা পূর্বে তারা যে আমল করেছে যেমন, তাদের সালাত, সাওম, সাদকা, তাসবীহ ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর]

কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, এক্ষেত্রে (صدق) শব্দ প্রয়োগের মাঝে এমন ইশারা করাও উদ্দেশ্য যে, জান্নাতের এসব উচ্চমর্যাদা একমাত্র সত্যনিষ্ঠা ও ইখলাসের কারণেই পাওয়া যাবে। কোন কোন মুফাসসির বলেন এখানে যাবতীয় কল্যাণ উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ এখানে (قَدَمَ صِدْقٍ) বলে তাদের সৎকর্মকাণ্ডসমূহকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন, তাদের সালাত, সাওম, সাদকা, তাসবীহ ইত্যাদি। [ফাতহুল কাদীর]

১০ : ৭৭
قَالَ مُوسَىٰ أَتَقُولُونَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَاءَكُمْ ۖ أَسِحْرٌ هَٰذَا وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُونَ

মূসা বললেন, ‘সত্য যখন তোমাদের কাছে আসল তখন তা সম্পর্কে তোমরা এরূপ বলছ? এটা কি জাদু? অথচ জাদুকরেরা সফলকাম হয় না [১]।’

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ তোমরা এসব গুণাগুণ দেখে অবশ্যই বুঝতে পার যে আসলে এটা কি জাদু নাকি জাদু নয়। তাছাড়া জাদুকররা দুনিয়া ও আখেরাতে কোথাও সফলকাম হয় না। সুতরাং তোমরা দেখো কার পরিণাম কেমন হয়, আর কে-ই বা সফল হয়। পরবর্তীতে তারা ঠিকই সেটা জানতে পেরেছিল এবং প্রত্যেকের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, মূসা আলাইহিস সালামই সফলকাম। তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে সবখানেই সফল [সা’দী] এ সমগ্র বিষয় শুধু একটি বাক্যের মধ্যে গুটিয়ে নিয়ে বলা হয়েছে, “জাদুকর কোন কল্যাণ প্রাপ্ত লোক হয় না।"

১০ : ৭৯
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ

আর ফির’আউন বলল, ‘তোমরা আমার কাছে সমস্ত সুদক্ষ জাদুকরকে নিয়ে আস।‘
ফুটনোট

১০ : ৮০
فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُوسَىٰ أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ

অতঃপর যখন জাদুকরেরা আসল তখন তাদেরকে মূসা বললেন, ‘তোমাদের যা নিক্ষেপ করার, নিক্ষেপ কর।’
ফুটনোট

২০ : ৬৩
قَالُوا إِنْ هَٰذَانِ لَسَاحِرَانِ يُرِيدَانِ أَنْ يُخْرِجَاكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ بِسِحْرِهِمَا وَيَذْهَبَا بِطَرِيقَتِكُمُ الْمُثْلَىٰ

তারা বলল, ‘এ দুজন অবশ্যই জাদুকর, তার চায় তাদের জাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিস্কার করতে [১] এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন পদ্ধতি ধ্বংস করতে [২]।

ফুটনোট

[১] উদ্দেশ্য এই যে, এরা দু’জন বড় জাদুকর। জাদুর সাহায্যে তোমাদের রাজ্য অধিকার করতে চায় এবং তোমাদের সর্বোত্তম ধর্মকে মিটিয়ে দিতে চায়। সুতরাং সেটার মোকাবিলায় সর্বশক্তি নিয়োগ কর। [দেখুন, ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ এরা জাদুকর। তারা সমস্ত জাদুকরদের পরাজিত করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চায়। তারা তোমাদের কওমের সর্দার এবং সেরা লোক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে খতম করে দিতে চায়। কাজেই তাদের মোকাবেলায় তোমরা তোমাদের পূর্ণ কলাকৌশল ও শক্তি ব্যয় করে দাও এবং সব জাদুকর সারিবদ্ধ হয়ে এক যোগে তাদের মোকাবেলায় অবতীর্ণ হও। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে আয়াতের অর্থ এই বর্ণিত হয়েছে যে, এরা দু'জন তোমাদের মধ্যকার ভালো লোক যাদেরকে তোমরা কাজে খাটাতে পার এমন লোক অৰ্থাৎ বনী-ইসরাইলদেরকে নিয়ে চলে যেতে চায়। [ইবন কাসীর]

২০ : ৬৯
وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ

‘আর আপনার ডান হাতে যা আছে তা নিক্ষেপ করুন, এটা তারা যা করেছে তা খেয়ে ফেলবে [১]। তারা যা করেছে তা তো শুধু জাদুকরের কৌশল। আর জাদুকর যেখানেই আসুক, সফল হবে না।

ফুটনোট

[১] মূসা 'আলাইহিস সালাম-কে ওহীর মাধ্যমে বলা হল যে, আপনার ডান হাতে যা আছে তা নিক্ষেপ করুন। মূসা ‘আলাইহিস সালাম তার লাঠি নিক্ষেপ করতেই তা একটি বিরাট অজগর সাপ হয়ে যাদুর সাপগুলোকে গিলে ফেলল। [ইবন কাসীর]

২০ : ৭০
فَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ هَارُونَ وَمُوسَىٰ

অতঃপর জাদুকরেরা সিজদাবনত হও [১], তার বলল , ‘আমরা হারুন ও মূসার রব এর প্রতি ঈমান আনলাম।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ মূসা আলাইহিস সালাম-এর লাঠি যখন অজগর হয়ে তাদের কাল্পনিক সাপগুলোকে গ্ৰাস করে ফেলল, তখন জাদুবিদ্যা বিশেষজ্ঞ জাদুকরদের বুঝতে বাকী রইল না যে, এ কাজ জাদুর জোরে হতে পারে না; বরং নিঃসন্দেহে এটা মু'জিযা, যা একান্তভাবে আল্লাহর কুদরতে প্রকাশ পায়। তাই তারা হঠাৎ স্বতস্ফূৰ্তভাবে সিজদাবনত হয়, যেন কেউ তাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে ফেলে দিয়েছে। এ অবস্থায়ই তারা ঘোষণা করলঃ আমরা মূসা ও হারূনের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনলাম। [ইবন কাসীর]

২৬ : ৩৪
قَالَ لِلْمَلَإِ حَوْلَهُ إِنَّ هَٰذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ

ফির‘আউন তার আশেপাশের পরিষদবৰ্গকে বলল, ‘এ তো এক সুদক্ষ জাদুকর!
ফুটনোট

২৬ : ৩৭
يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَحَّارٍ عَلِيمٍ

‘যেন তারা তোমার কাছে প্রতিটি অভিজ্ঞ জাদুকরকে উপস্থিত করে।’
ফুটনোট

২৬ : ৩৮
فَجُمِعَ السَّحَرَةُ لِمِيقَاتِ يَوْمٍ مَعْلُومٍ

অতঃপর এক নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট সময়ে জাদুকরদেরকে একত্র করা হল,
ফুটনোট

২৬ : ৪০
لَعَلَّنَا نَتَّبِعُ السَّحَرَةَ إِنْ كَانُوا هُمُ الْغَالِبِينَ

‘যেন আমরা জাদুকরদের অনুসরণ করতে পারি, যদি তারা বিজয়ী হয়।’
ফুটনোট

২৬ : ৪১
فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالُوا لِفِرْعَوْنَ أَئِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ

অতঃপর জাদুকরেরা এসে ফির‘আউনকে বলল, ‘আমরা যদি বিজয়ী হই আমাদের জন্য পুরস্কার থাকবে তো?’
ফুটনোট

২৬ : ৪৬
فَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ

তখন জাদুকরেরা সিজদাবনত হয়ে পড়ল।
ফুটনোট

৩৮ :
وَعَجِبُوا أَنْ جَاءَهُمْ مُنْذِرٌ مِنْهُمْ ۖ وَقَالَ الْكَافِرُونَ هَٰذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ

আর তারা বিস্ময় বোধ করছে যে, এদের কাছে এদেরই মধ্য থেকে একজন সতর্ককারী আসল এবং কাফিররা বলে, 'এ তো এক জাদুকর [১], মিথ্যাবাদী।'

ফুটনোট

[১] নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য জাদুকর শব্দটি তারা যে অর্থে ব্যবহার করতো তা হচ্ছে এই যে, তিনি মানুষকে এমন কিছু জাদু করতেন যার ফলে তারা পাগলের মতো তাঁর পেছনে লেগে থাকতো। কোন সম্পর্কচ্ছেদ করার বা কোন প্রকার ক্ষতির মুখোমুখি হবার কোন পরোয়াই তারা করতো না। পিতা পুত্ৰকে এবং পুত্র পিতাকে ত্যাগ করতো। স্ত্রী স্বামীকে ত্যাগ করতো এবং স্বামী স্ত্রী থেকে আলাদা হয়ে যেতো। হিজরাত করার প্রয়োজন দেখা দিলে একেবারে সবকিছু সম্পর্ক ত্যাগ করে স্বদেশভূমি থেকে বের হয়ে পড়তো। কারবার শিকেয় উঠুক এবং সমস্ত জ্ঞাতি-ভাইরা বয়কট করুক কোনদিকেই দৃষ্টিপাত করতো না। কঠিন থেকে কঠিনতর শারীরিক কষ্টও বরদাশত করে নিতো কিন্তু ঐ ব্যক্তির পেছনে চলা থেকে বিরত হতো না। [দেখুন, কুরতুবী]

৪০ : ২৪
إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَقَارُونَ فَقَالُوا سَاحِرٌ كَذَّابٌ

ফিরআউন, হামান ও কারূনের কাছে। অতঃপর তারা বলল, 'জাদুকর, চরম মিথ্যাবাদী ৷'
ফুটনোট

৪৩ : ৪৯
وَقَالُوا يَا أَيُّهَ السَّاحِرُ ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِنْدَكَ إِنَّنَا لَمُهْتَدُونَ

আর তারা বলেছিল, ‘হে জাদুকর ! তোমার রবের কাছে তুমি আমাদের জন্য তা প্রার্থনা কর যা তিনি তোমার সাথে অঙ্গীকার করেছেন, নিশ্চয়ই আমরা সৎপথ অবলম্বন করব।’
ফুটনোট

৫১ : ৩৯
فَتَوَلَّىٰ بِرُكْنِهِ وَقَالَ سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ

তখন সে ক্ষমতার অহংকারে মুখ ফিরিয়ে নিল [১] এবং বলল, ‘এ ব্যক্তি হয় এক জাদুকর, না হয় এক উন্মাদ।’

ফুটনোট

[১] ركن শব্দের অর্থ খুঁটি। আবার নিজ পার্শ্বশক্তির অর্থেও ব্যবহৃত হয়। মুফাসসিরগণ এখানে দু'টি অর্থ বর্ণনা করেছেন। এক. সে তার শক্তির অহংকারে মত্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। দুই. সে তার শক্তিশালী দলবল ও সেনাবাহিনীসহ মুখ ফিরিয়ে নিল [দেখুন, কুরতুবী]।

৫১ : ৫২
كَذَٰلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ

এভাবে তাদের পূর্ববতীদের কাছে যখনই কোন রাসূল এসেছেন তারাই তাকে বলেছে, ’এ তো এক জাদুকর, না হয় এক উন্মাদ !’
ফুটনোট

0:00
0:00