আখলাক
আখলাক
: ৮৩
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ مُعْرِضُونَ

আর স্মরণ কর, যখন আমরা ইসরাঈল-সন্তানদের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কারো ‘ইবাদাত করবে না, মাতা-পিতা [১], আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও দরিদ্রের [২] সাথে সদয় ব্যবহার করবে এবং মানুষের সাথে সদালাপ করবে [৩]। আর সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দিবে, তারপর তোমাদের মধ্য হতে কিছুসংখ্যক লোক ছাড়া [৪] তোমরা সকলেই অবজ্ঞা করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে।

ফুটনোট

[১] আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল ! আল্লাহ্‌র কাছে কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, “সময়মত সালাত আদায় করা”। বললেন, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, “পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার" বললেন, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, “আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করা”। [বুখারী ৫২৭, মুসলিম: ৮৫]

[২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মিসকীন সে নয়, যে এক খাবার বা দুই খাবারের জন্য ঘুরে বেড়ায় বরং মিসকীন হচ্ছে, যার সামর্থ নেই অথচ সে লজ্জায় কারও কাছে চায় না। অথবা মানুষকে আগলে ধরে কোন কিছু চায় না। ” [বুখারী: ১৪৭৬, মুসলিম: ১০৩৯]

[৩] আয়াতে এমন কথাকে বুঝানো হয়েছে, যা সৌন্দর্যমণ্ডিত। এর অর্থ এই যে, যখন মানুষের সাথে কথা বলবে, নম্রভাবে হাসিমুখে ও খোলামনে বলবে। তবে দ্বীনের ব্যাপারে শৈথিল্য অথবা কারো মনোরঞ্জনের জন্য সত্য গোপন করবে না। কারণ, আল্লাহ্ তা'আলা যখন মূসা ও হারূন ‘আলাইহিমাস সালাম-কে নবুয়ত দান করে ফি’রআউনের প্রতি পাঠিয়েছিলেন, তখন এ নির্দেশ দিয়েছিলেন, “ তোমরা উভয়েই ফির’আউনকে নরম কথা বলবে। " [সূরা ত্বা-হাঃ ৪৪]
আজ যারা অন্যের সাথে কথা বলে, তারা মূসা ‘আলাইহিস সালাম-এর চাইতে উত্তম নয় এবং যার সাথে কথা বলে, সেও ফিরআউন অপেক্ষা বেশী মন্দ বা পাপিষ্ঠ নয়। সুতরাং সবার সাথে সুন্দরভাবে কথা বলা উচিত। হাদীসে এসেছে, “তোমরা সৎকাজের সামান্যতম কিছুকে খাটো করে দেখ না। যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করা। " [মুসলিম: ২৬২৬] তাছাড়া মানুষের সাথে সদালাপের অর্থ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে এক বর্ণনায় এসেছে যে, তা হচ্ছে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

[৪] ‘অল্প কয়েকজন’ অর্থ, তারাই যারা তাওরাতের পুরোপুরি অনুসরণ করত, তাওরাত রহিত হওয়ার পূর্বে তারা মূসা ‘আলাইহিস সালাম প্রবর্তিত শরীআতের অনুসারী ছিল এবং তাওরাত রহিত হওয়ার পর ইসলামী শরীআতের অনুসারী হয়ে যায়। আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, একত্ববাদে ঈমান, এবং পিতা-মাতা, আত্মীয় স্বজন, ইয়াতীম বালক-বালিকা ও দীন-দরিদ্রের সেবাযত্ন করা, মানুষের সাথে নম্রভাবে কথাবার্তা বলা, সালাত আদায় করা ও যাকাত দেয়া ইসলামী শরীআতসহ পূর্ববর্তী শরীআতসমূহেও ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মানুষ সেগুলো ত্যাগ করে।

:
وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا وَارْزُقُوهُمْ فِيهَا وَاكْسُوهُمْ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا

আর তোমরা অল্প বুদ্ধিমানদেরকে তাদের ধন-সম্পদ অর্পণ করো না [১]; যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের জীবন চালানোর ব্যবস্থা করেছেন এবং তা থেকে তাদের আহার-বিহার ও ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা কর। আর তোমরা তাদের সাথে সদালাপ কর।

ফুটনোট

[১] এ আয়াতে ধন-সম্পদের গুরুত্ব এবং মানুষের জীবন ধারণের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং সম্পদের হেফাযতের ক্ষেত্রে একটা সাধারণ ক্রটির সংশোধন নির্দেশ করা হয়েছে। তা হচ্ছে, অনেকেই স্নেহান্ধ হয়ে অল্পবয়স্ক, অনভিজ্ঞ ছেলে-মেয়ে অথবা স্ত্রীলোকদের হাতে ধন-সম্পদের দায়-দায়িত্ব তুলে দেয়। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি সম্পদের অপচয় এবং যা দারিদ্র ঘনিয়ে আসার আকারে দেখা দেয়। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন যে, কুরআনুল কারীমের এ আয়াতে নির্দেশ করা হচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান-সন্ততি কিংবা অনভিজ্ঞ স্ত্রীলোকদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থেকো না, বরং আল্লাহ্ তা’আলা যেহেতু তোমাকে অভিভাবক এবং দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন, সেজন্য তুমি সম্পদ তোমার নিজের হাতে রেখে তাদের খাওয়া-পরার দায়-দায়িত্ব পালন করতে থাক। যদি তারা অর্থ-সম্পদের দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়ে নেয়ার আব্দার করে, তবে তাদেরকে ভালভাবে বুঝিয়ে দাও যে, এসব তোমাদের জন্যই সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে তাদের মনোকষ্টের কারণ না হয়, আবার সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা না দেয়। [তাবারী] উপরোক্ত ব্যাখ্যা মতে, এমন সবার হাতেই সম্পদ অৰ্পন করা যাবে না যাদের হাতে পড়ে ধন-সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। এতে ইয়াতীম শিশু বা নিজের সন্তানের কোন পার্থক্য নেই। আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু আনহুও এ আয়াতের এরূপ তাফসীরই বর্ণনা করেছেন। [তাবারী] মোটকথা, মালের হেফাজত অত্যন্ত জরুরী এবং অপচয় করা গোনাহের কাজ। নিজের সম্পদের হেফাজত করতে গিয়ে যদি কেউ নিহত হয়, তবে সে শহীদের মর্যাদা পাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘নিজের মালের হেফাজত করতে গিয়ে যদি কেউ নিহত হয়, তবে সে শহীদ’। [বুখারীঃ ২৪৮০, মুসলিমঃ ১৪১] অর্থাৎ সওয়াবের দিক দিয়ে শহীদের মর্যাদা পাবে।

:
وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُمْ مِنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا

আর সম্পত্তি বন্টনকালে আত্মীয়, ইয়াতীম এবং অভাবগ্রস্ত লোকদের উপস্থিত থাকলে তাদেরকে তা থেকে কিছু দিবে এবং তাদের সাথে সদালাপ করবে [১]।

ফুটনোট

[১] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াত মুহকাম, এ আয়াত রহিত হয় নি। অর্থাৎ এর উপর আমল করতে হবে। [বুখারী ৪৫৭৬]

অন্য বর্ণনায় ইবন আব্বাস বলেন, আল্লাহ তা’আলা মুমিনগণকে তাদের মীরাস বন্টনের সময় আত্মীয়তার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, ইয়াতীমদের তত্ত্বাবধান এবং মিসকীনদের জন্য যদি মৃত ব্যক্তির কোন অসীয়ত থেকে থাকে, তবে সে অসীয়ত থেকে প্রদান করতে হবে। আর যদি অসীয়ত না থাকে, তবে তাদেরকে মীরাস থেকে কিছু পৌছাতে হবে। [তাবারী] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবদুর রহমান ইবন আবী বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মীরাস বন্টনের সময় -আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখনও জীবিত- আব্দুর রহমানের সন্তান আবদুল্লাহ ঘরে ইয়াতীম, মিসকীন, আত্মীয়স্বজন সবাইকে তার পিতার মীরাস থেকে কিছু কিছু প্রদান করেন, এ হিসেবে যে, এখানে (الْقِسْمَةَ) শব্দের অর্থ, বন্টন। তারপর সেটা ইবন আব্বাসকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেন, ঠিক করে নি। কারণ এটা অসীয়ত করার প্রতি নির্দেশ। এ আয়াতটিতে অসীয়তের কথাই বলা হয়েছে। যখন মাইয়্যেত তার সম্পদের ব্যাপারে অসীয়ত করতে চাইবে সে যেন নিঃস্ব, ইয়াতীম স্বজনদের না ভুলে সে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] সে হিসেবে এটি মৃত্যুর আগেই সম্পদের মালিকের করণীয় নির্দেশ করছে।

:
الْيَوْمَ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ ۖ وَطَعَامُ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَهُمْ ۖ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِي أَخْدَانٍ ۗ وَمَنْ يَكْفُرْ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

আজ [১] তোমাদের জন্য সমস্ত ভাল জিনিস হালাল করা হল [২] ও যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে [৩] তাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্যদ্রব্য তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা [৪] নারীদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হল [৫] যদি তোমরা তাদের মাহর প্রদান কর বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। আর কেউ ঈমানের সাথে কুফরী করলে তার কর্ম অবশ্যই নিস্ফল হবে এবং সে আখেরাতে ক্ষীতগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে [৬]।

ফুটনোট

[১] এখানে ‘আজ’ বলে এ দিনকে বোঝানো হয়েছে, যেদিন এ আয়াত ও এর পূর্ববর্তী আয়াত নাযিল হয়। অর্থাৎ দশম হিজরীর বিদায় হজ্জের আরাফার দিন। উদ্দেশ্য এই যে, আজ যেমন তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত পূর্ণতা লাভ করেছে, তেমনি আল্লাহ তা’আলার পবিত্র বস্তুসমূহ, যা পূর্বেও তোমাদের জন্যে হালাল ছিল, চিরস্থায়ীভাবে হালাল রাখা হল। [কুরতুবী]

[২] এ আয়াতে (طيبات) অর্থাৎ পবিত্র ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন বস্তু হালাল হওয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,

(وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَـبٰىِٕثَ)

অর্থাৎ আল্লাহ হালাল করেন তাদের জন্যে (طيبات) এবং হারাম করেন (خَـبٰىِٕثَ) [সূরা আল-আরাফ: ১৫৭] এখানে (طيبات) এর বিপরীতে (خَـبٰىِٕثَ) ব্যবহার করে উভয় শব্দের মর্মার্থ বর্ণনা করা হয়েছে। অভিধানে (طيبات) পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাম্য বস্তুসমূহকে এবং এর বিপরীতে (خَـبٰىِٕثَ) নোংরা ও ঘৃণাৰ্হ বস্তুসমূহকে বলা হয়। [জালালাইন] কাজেই আয়াতের এ বাক্যের দ্বারা বোঝা যায় যে, যেসব বস্তু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, উপাদেয় ও পবিত্র, সেগুলো মানুষের জন্যে হালাল করা হয়েছে এবং যেসব বস্তু নোংরা, ঘৃণা ও অপকারী, সেগুলো হারাম করা হয়েছে। এ ধরনের ব্যাপারে নবীদের সিদ্ধান্ত সবার জন্যে অকাট্য দলীলস্বরূপ। কেননা, মানুষের মধ্যে নবীগণই সবাধিক সুস্থ স্বভাবসম্পন্ন। কোন কোন মুফাসসির এখানে (طيبات) এর অর্থ আল্লাহর নামে যবাইকৃত হালাল প্রাণী অর্থ করেছেন। [বাগভী]

[৩] এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, আহলে কিতাব হওয়ার জন্য যে কিতাবটির অনুসারী বলে তারা দাবী করে, সে কিতাবটি আল্লাহ্ তা’আলার নাযিল করা কিতাব কি না তা প্রমাণিত হতে হবে। সাথে সাথে স্বীয় কিতাবের প্রতি বিশুদ্ধ ঈমান থাকা এবং আমল করাও জরুরী। যেমন, তাওরাত, ইঞ্জল, যবুর, মূসা ও ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের সহীফা ইত্যাদি। আর যাদের গ্রন্থ আল্লাহর কিতাব বলে কুরআন ও সুন্নাহর নিশ্চিত পন্থায় প্রমাণিত নয়, তারা আহলে কিতাবদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। মূলতঃ কুরআনের পরিভাষায় ইহুদী ও নাসারা জাতিই আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত। যারা তাওরাত ও ইঞ্জীলের প্রতি বিশ্বাসী। [ইবন কাসীর]

[৪] এখানে ইয়াহুদী ও নাসারা মহিলাদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে একটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তা হলো, তাদেরকে অবশ্যই ‘মুহসানাহ’ বা সংরক্ষিত মহিলা হতে হবে। সুতরাং তাদের মধ্যে যারা সংরক্ষিত বা নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারিনী নয়, তারা এর ব্যতিক্রম। [সা’দী]

[৫] আয়াতে আহলে কিতাবদের খাদ্য বলা হয়েছে। সর্বপ্রকার খাদ্যই এর অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীগনের মতে ‘খাদ্য’ বলতে যবেহ করা জন্তুকে বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] কেননা, অন্য প্রকার খাদ্যবস্তুতে আহলে-কিতাব, পৌত্তলিক, মুশরেক সবাই সমান। রুটি, আটা, চাল, ডাল ইত্যাদিতে যবেহ্ করার প্রয়োজন নেই। এগুলো যে কোন লোকের কাছ থেকে যে কোন বৈধ পন্থায় অর্জিত হলে মুসলিমের জন্যে খাওয়া হালাল। [সা’দী] অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও তাফসীরবিদের মতে, কাফেরদের মধ্য থেকে আহলে কিতাব ইয়াহুদী ও নাসারাদের যবেহ করা জন্তু হালাল হওয়ার কারণ হচ্ছে, আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে জন্তু যবেহ করাকে তারাও বিশ্বাসগতভাবে জরুরী মনে করে। এ ছাড়া মৃত জন্তুকেও তার হারাম মনে করে। [ইবন কাসীর]

[৬] ঈমানের সাথে কুফরী করার অর্থ, ইসলামী শরীআতের সাথে কুফরী করলো শরীআতের বিধি-বিধান মানতে অস্বীকার করল, তার সমস্ত আমল পণ্ড হয়ে যাবে। [ফাতহুল কাদীর, মুয়াচ্ছার, সাদী] যারাই এভাবে আল্লাহ ও তার দেয়া শরীআতের সাথে কুফরী করে সে অবস্থায় মারা যাবে। সে ঈমান অবস্থায় করা যাবতীয় আমল ধ্বংস করে ফেলবে। আখেরাতে সে কিছুরই মালিক থাকবে না। আলেমগণ এ আয়াত থেকে দলীল নিয়েছেন যে, যারাই মুর্তাদ হবে এবং সে অবস্থায় মারা যাবে, তাদের সমস্ত আমল পণ্ড হয়ে যাবে। অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন, “আর তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ নিজের দ্বীন থেকে ফিরে যাবে এবং কাফের হয়ে মারা যাবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের আমলসমূহ নিস্ফল হয়ে যাবে। আর এরাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে”। [সূরা আল-বাকারাহ: ২১৭] [সা’দী]

২৪ :
وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

আর যারা সচ্চরিত্রা নারীর [১] প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে না আসে, তাদেরকে তোমরা আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; এরাই তো ফাসেক [২]।

ফুটনোট

[১] محصنات শব্দটি إحصان থেকে উদ্ভুত। শরীয়তের পরিভাষায় إحصان ‘ইহসান’ দুই প্রকার। একটি ব্যভিচারের শাস্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং অপরটি অপবাদ আরোপের শাস্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ব্যভিচারের শাস্তির ক্ষেত্রে إحصان এই যে, যার বিরুদ্ধে ব্যভিচার প্রমাণিত হয়, তাকে জ্ঞান সম্পন্ন, বালেগ, মুক্ত ও মুসলিম হতে হবে এবং শরীয়ত সম্মত পন্থায় কোন নারীকে বিয়ে করে তার সাথে সঙ্গমও হতে হবে। এরূপ ব্যাক্তি যিনা করলে তার প্রতি রজম তথা প্রস্তরাঘাতে হত্যার শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। পক্ষান্তরে অপবাদ আরোপের শাস্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য إحصان এই যে, যে ব্যাক্তির প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করা হয়, তাকে জ্ঞান সম্পন্ন বালেগ, মুক্ত ও মুসলিম হতে হবে, সৎ হতে হবে অর্থাৎ পূর্বে কখনো তার বিরুদ্ধে ব্যভিচার প্রমাণিত হয়নি। [দেখুন, কুরতুবী, বাগভী, সা‘দী, যাদুল মাসির]

[২] যে ব্যক্তি অন্যের বিরুদ্ধে যিনার অভিযোগ আনে, সে সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে নিজের অভিযোগ প্রমাণ করবে। আর যদি প্রমাণ করতে না পারে তাহলে তাকে আশি ঘা বেত্ৰাঘাত করো, যাতে ভবিষ্যতে আর সে কখনো এ ধরনের কোন কথা বিনা প্রমাণে নিজের মুখ থেকে বের করার সাহস না করে। আর তাদের সাক্ষ্য কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। [ইবন কাসীর, মুয়াসসার]

২৪ : ২৩
إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

যারা সচ্চরিত্রা, সরলমনা-নির্মলচিত্ত, ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে [১] তারা তো দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি [২]।

ফুটনোট

[১] মূলে (গাফেলাত) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, সরলমনা ও ভদ্র মহিলারা, যারা ছল-চাতুরী জানে না, যাদের মন নিৰ্মল, কলুষমুক্ত ও পাক-পবিত্র, যারা অসভ্যতা ও অশ্ৰীল আচরণ কি ও কিভাবে করতে হয় তা জানে না এবং কেউ তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেবে একথা যারা কোনদিন কল্পনাও করতে পারে না। হাদীসে বলা হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিষ্কলুষ মহিলাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া সাতটি “সর্বনাশা” কবীরাহ গোনাহের অন্তরভুক্ত। [দেখুন, বুখারীঃ ২৭৬৬, মুসলিমঃ ৮৯]

[২] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার এমন কতিপয় বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো অন্য কোন মহিলার ভাগ্যে জোটেনি। তিনি নিজেও আল্লাহ্‌র নেয়ামত প্ৰকাশার্থে এসব বিষয় গর্বভরে বর্ণনা করতেন।

প্রথম- হাদীসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিয়ে হওয়ার পূর্বে ফিরিশতা জিবরাঈল ‘আলাইহিস সালাম একটি রেশমী কাপড়ে আমার ছবি নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করেন এবং বলেনঃ এ আপনার স্ত্রী। [তিরমিযীঃ ৩৮৮০]

দ্বিতীয়- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছাড়া কোন কুমারী বালিকাকে বিয়ে করেননি।

তৃতীয়- তার কোলে মাথা রেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন।

চতুৰ্থ- আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার গৃহেই তিনি সমাধিস্থ হন।

পঞ্চম- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তখনো ওহী নাযিল হত, যখন তিনি আয়েশার সাথে একই লেপের নীচে শায়িত থাকতেন। অন্য কোন স্ত্রীর এরূপ বৈশিষ্ট্য ছিল না। [তিরমিযীঃ ৩৮৭৯]

ষষ্ট- আসমান থেকে তার নির্দোষিতার বিষয় নাযিল হয়েছে।

সপ্তম- তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলীফার কন্যা এবং সিদ্দীকা ছিলেন। আল্লাহ্‌ তা‘আলা যাদেরকে দুনিয়াতেই ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকার ওয়াদা দিয়েছেন, তিনি তাদেরও অন্যতমা।

অষ্টম- সাহাবাগণ কোন ব্যাপারে সমস্যায় পড়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে আসলে তার কাছে কোন না কোন ইলম পেতেন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ফকীহ ও পণ্ডিতসুলভ জ্ঞানানুসন্ধান এবং বিজ্ঞজনোচিত বক্তব্য দেখে মূসা ইবনে তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ আমি আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার চাইতে অধিক শুদ্ধভাষী ও প্রাঞ্জলভাষী কাউকে দেখিনি। [তিরমিযীঃ ৩৮৮৪] কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ ইউসুফ ‘আলাইহিস সালামের প্রতি অপবাদ আরোপ করা হলে আল্লাহ্‌ তা‘আলা একটি কচি শিশুকে বাকশক্তি দান করে ওর সাক্ষ্য দ্বারা তার দোষমুক্ততা প্রকাশ করেন। মারইয়ামের প্রতি অপবাদ আরোপ করা হলে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার শিশু পুত্ৰ ঈসা ‘আলাইহিস সালামের সাক্ষ্য দ্বারা তাকে দোষমুক্ত করেন। আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার প্রতি অপবাদ আরোপ করা হলে আল্লাহ্‌ তা‘আলা কুরআনের দশটি আয়াত নাযিল করে তার দোষমুক্ততা ঘোষণা করেন, যা তার গুণ ও জ্ঞান-গরিমাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

২৪ : ২৬
الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ ۖ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ ۚ أُولَٰئِكَ مُبَرَّءُونَ مِمَّا يَقُولُونَ ۖ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য। লোকেরা যা বলে তার সাথে তারা সম্পর্কহীন; তাদের জন্য আছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা [১]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ দুশ্চরিত্রা নারীকুল দুশ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল দুশ্চরিত্রা নারীকুলের জন্য উপযুক্ত। সচ্চরিত্রা নারীকুল সচ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষকুল সচ্চরিত্রা নারীকুলের জন্য উপযুক্ত। এদের সম্পর্কে লোকে যা বলে, এরা তা থেকে পবিত্র। এদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। এ আয়াতে একটি নীতিগত কথা বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ্‌ তা‘আলা মানবচরিত্রে স্বাভাবিকভাবে যোগসূত্র রেখেছেন। দুশ্চরিত্রা, ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষের প্রতি এবং দুশ্চরিত্র ও ব্যভিচারী পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এমনিভাবে সচ্চরিত্রা নারীদের আগ্রহ সচ্চরিত্র পুরুষদের প্রতি এবং সচ্চরিত্র পুরুষদের আগ্রহ সচ্চরিত্রা নারীদের প্রতি হয়ে থাকে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ আগ্রহ অনুযায়ী জীবনসঙ্গী খোঁজ করে নেয় এবং আল্লাহ্‌র বিধান অনুযায়ী সে সেরূপই পায়।

কোন কোন মুফাসসির এ আয়াতের এ অর্থও করেছেন যে, খারাপ কথা খারাপ লোকদের জন্য (অর্থাৎ তারা এর হকদার) এবং ভালো কথা ভালো লোকদের জন্য, আর ভালো লোকদের সম্পর্কে দুর্মুখেরা যেসব কথা বলে তা তাদের প্রতি প্ৰযুক্ত হওয়া থেকে তারা মুক্ত ও পবিত্র। অন্য কিছু মুফাসসির এর অর্থ করেছেন এভাবে, খারাপ কাজ খারাপ লোকদের পক্ষেই সাজে এবং ভালো কাজ ভালো লোকদের জন্যই শোভনীয়, ভালো লোকেরা খারাপ কাজের অপবাদ বহন থেকে পবিত্র। ভিন্ন কিছু তাফসীরকারক এর অর্থ নিয়েছেন এভাবে, খারাপ কথা খারাপ লোকদেরই বলার মতো এবং ভালো লোকেরা ভালো কথাই বলে থাকে, অপবাদদাতারা যে ধরনের কথা বলছে ভালো লোকেরা তেমনি ধরনের কথা বলা থেকে পবিত্র। [দেখুন-ইবন কাসীর, সা‘দী, কুরতুবী, বাগভী]

২৬ : ১৩৭
إِنْ هَٰذَا إِلَّا خُلُقُ الْأَوَّلِينَ

‘এটা তো কেবল পূর্ববর্তীদেরই স্বভাব।
ফুটনোট

৫৫ : ৭০
فِيهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ

সে উদ্যানসমূহের মাঝে রয়েছে চরিত্রবর্তী, অনিন্দ্য সুন্দরীগণ [১]।

ফুটনোট

[১] خيرات এর অর্থ চারিত্রিক দিক দিয়ে সুশীলা এবং حسانٌ এর অর্থ দেহাবয়বের দিক দিয়ে সুন্দরী। উভয় উদ্যানের নারীগণ সমভাবে এই বিশেষণে বিশেষিত হবে। [ইবন কাসীর; কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

৬৮ :
وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ

আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন [১] ।

ফুটনোট

[১] আয়াতে উল্লেখিত, “মহৎ চরিত্র” এর অর্থ নির্ধারণে কয়েকটি মত বর্ণিত আছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, মহৎ চরিত্রের অর্থ মহৎ দ্বীন। কেননা, আল্লাহ তা‘আলার কাছে ইসলাম অপেক্ষা অধিক প্রিয় কোনো দ্বীন নেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, স্বয়ং কুরআন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর “মহৎ চরিত্র”। অর্থাৎ কুরআন পাক যেসব উত্তম কর্ম ও চরিত্র শিক্ষা দেয়, তিনি সেসবের বাস্তব নমুনা। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “মহৎ চরিত্র” বলে কুরআনের শিষ্টাচার বোঝানো হয়েছে; অর্থাৎ যেসব শিষ্টাচার কুরআন শিক্ষা দিয়েছে। [কুরতুবী]

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা। তিনি বলেছেন, কুরআনই ছিলো তার চরিত্র। [মুসনাদে আহমাদ: ৬/৯১] আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণনা করেছেন, “আমি দশ বছর যাবত রাসূলুল্লাহ্র খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। আমার কোন কাজ সম্পর্কে তিনি কখনো উহ! শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। আমার কোন কাজ দেখে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে কেন? কিংবা কোন কাজ না করলে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে না কেন? [বুখারী: ৬০৩৮, মুসলিম: ২৩০৯] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্তায় আল্লাহ্ তা‘আলা যাবতীয় উত্তম চরিত্র পূর্ণমাত্রায় সন্নিবেশিত করে দিয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেন, “আমি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দান করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি।” [মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৮১, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৬৭০]

0:00
0:00