হযরত ইসহাক আঃ
হযরত ইসহাক আঃ
: ১৩৩
أَمْ كُنْتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِنْ بَعْدِي قَالُوا نَعْبُدُ إِلَٰهَكَ وَإِلَٰهَ آبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِلَٰهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ

ইয়াকুবের যখন মৃত্যু এসেছিল তোমর কি তখন উপস্থিত ছিলে ? তিনি যখন সন্তানদের বলেছিলেন, ‘আমার পরে তোমরা কার ‘ইবাদাত করবে’ ? তারা বলেছিলো, ‘আমরা আপনার ইলাহ [১] ও আপনার পিতৃ পুরুষ ইবরাহীম, ইস্‌মাঈল ও ইসহাকের ইলাহ্‌ - সেই এক ইলাহ্‌রই ‘ইবাদাত করবো। আর আমরা তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণকারী’ [২]।

ফুটনোট

[১] ইলাহ শব্দটি মাসদার। যার অর্থ উপাস্য বা যার উপাসনা করা হয়। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ ইলাহ হলেন যাকে সবাই উপাসনা করে। [তাফসীরে তাবারীঃ ১/৫৪] ইবনে আববাসের এই উক্তি শুধুমাত্র হক মা’বুদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ ইলাহ শব্দ দ্বারা এমন মা’বুদকে বুঝানো হয়, যিনি ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য। আর যিনি মা’বুদ হওয়ার যোগ্য তার মধ্যে এমন গুণ থাকা আবশ্যক যার কারণে তাকে সর্বোচ্চ ভালবাসা এবং সবচেয়ে বেশী বিনয় প্রদর্শন করতে বাধ্য হয়।

[২] এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, নবীদের সবার দ্বনই ছিল ইসলাম। এ জন্যই এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নবীগণ হচ্ছেন বৈমাত্রেয় ভাই। তাদের মাতা বিভিন্ন কিন্তু তাদের দ্বীন এক ” [বুখারী ৩৪৪৩, মুসলিম: ২৩৬৫] মাতা বিভিন্ন হওয়ার অর্থ হচ্ছে, তাদের শরীআত বিভিন্ন। আর দ্বীন এক হওয়ার অর্থ হচ্ছে, তাওহীদের মূলনীতিসমূহে তাদের মধ্যে ঐক্য রয়েছে। [ইবনে কাসীর]

: ১৩৬
قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ

তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্‌র প্রতি এবং যা আমাদের নাযিল হয়েছে, এবং যা ইবরাহীম, ইসমা’ঈল, ইসহাক, ইয়া’কূব ও তার বংশধরদের প্রতি [১] প্রতি নাযিল হয়েছে, এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের রব-এর নিকট হতে দেয়া হয়েছে [২]। আমরা তাদের মধ্যে কোন তারতম্য করি না [৩]। আর আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী’।

ফুটনোট

[১] কুরআন ইয়াকুব ‘আলাইহিস সালাম-এর বংশধরকে (اَسْبَاط) শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেছে। এটা (سبط) এর বহুবচন। এর অর্থ গোত্র ও দল। তাদের (سِبْط) বলার কারণ এই যে, ইয়াকুব ‘আলাইহিস সালাম-এর ঔরসজাত পুত্রদের সংখ্যা ছিল বারজন। পরে প্রত্যেক পুত্রের সন্তানরা এক-একটি গোত্রে পরিণত হয়। আল্লাহ্‌ তা'আলা তার বংশে বিশেষ বরকত দান করেছিলেন। তিনি যখন ইউসুফ ‘আলাইহিস সালাম-এর কাছে মিশরে যান, তখন সন্তান ছিল বার জন। পরে ফিরআউনের সাথে মোকাবেলার পর মূসা ‘আলাইহিস সালাম যখন মিশর থেকে ইসরাঈল বংশধরকে নিয়ে বের হলেন, তখন তার সাথে ইয়াকুব ‘আলাইহিস সালাম-এর সন্তানদের মধ্য থেকে প্রত্যেক ভাইয়ের সন্তান হাজার হাজার সদস্যের একটি গোত্র ছিল। তার বংশে আল্লাহ্‌ তা'আলা আরও একটি বরকত দান করেছেন এই যে, অনেক নবী ও রাসূল ইয়াকুব ‘আলাইহিস সালাম-এর বংশেই জন্মেছে। [তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন]

[২] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আহলে কিতাবগণ হিব্রু ভাষায় তাওরাত পড়ত এবং মুসলিমদের জন্য আরবীতে অনুবাদ করে দিত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমরা তাদেরকে সত্যায়নও করবে না, মিথ্যারোপ করবে না; বরং বলবে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্‌র প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে এবং যা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরদের প্রতি নাযিল হয়েছে, এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের রব-এর নিকট হতে দেয়া হয়েছে। ” [বুখারী ৪৪৮৫]

[৩] নবীদের মধ্যে পার্থক্য না করার অর্থ হচ্ছে, কেউ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং কেউ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন না অথবা কাউকে মানি এবং কাউকে মানি না - আমরা তাদের মধ্যে এভাবে পার্থক্য করি না। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে আগত সকল নবীই একই চিরন্তন সত্য ও একই সরল-সোজা পথের দিকে আহবান জানিয়েছেন। কাজেই যথার্থ সত্যপ্রিয় ব্যক্তির পক্ষে সকল নবীকে সত্যপন্থী ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে মেনে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। যে ব্যক্তি এক নবীকে মানে এবং অন্য নবীকে অস্বীকার করে, সে আসলে যে নবীকে মানে তারও অনুগামী নয়। তার আসল দ্বীন হচ্ছে বর্ণবাদ, বংশবাদ ও বাপ-দাদার অন্ধ অনুসরণ। কোন নবীর অনুসরণ তার দ্বীন নয়।

: ১৪০
أَمْ تَقُولُونَ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطَ كَانُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ ۗ قُلْ أَأَنْتُمْ أَعْلَمُ أَمِ اللَّهُ ۗ وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ كَتَمَ شَهَادَةً عِنْدَهُ مِنَ اللَّهِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ

তোমরা কি বল যে, ‘অবশ্যই ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁর বংশধরগণ ইয়াহুদী বা নাসারা ছিল’ ? বলুন, ‘তোমরা কি বেশী জান, না আল্লাহ্‌ ? তার চেয়ে বেশী যালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে তার কাছে যে সাক্ষ্য আছে তা গোপন করে ? আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ্‌ গাফেল নন।
ফুটনোট

: ৮৪
قُلْ آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَالنَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ

বলুন, ‘আমরা আল্লাহ্‌তে ও আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং ইব্‌রাহীম, ইসমা’ঈল, ইসহাক, ইয়া’কূব ও তাঁর বংশধরগণের প্রতি যা নাযিল হয়েছিল এবং যা মূসা, ‘ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাঁদের রবের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছিল তাতে ঈমান এনেছি; আমরা তাঁদের কারও মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী।’
ফুটনোট

: ১৬৩
إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَىٰ نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِنْ بَعْدِهِ ۚ وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَعِيسَىٰ وَأَيُّوبَ وَيُونُسَ وَهَارُونَ وَسُلَيْمَانَ ۚ وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا

নিশ্চয় আমরা আপনার নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম [১], যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম [২], আর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়া’কূব ও তার বংশধরগণ, ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারূন ও সুলাইমানের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে প্রদান করেছিলাম যাবূর।

ফুটনোট

তেইশতম রুকূ‘

[১] নবীগণের প্রতি প্রেরিত আল্লাহ তা'আলার বিশেষ নির্দেশ ও বাণীকে ওহী বলা হয়। হারিস ইবন হিশাম রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট অহী কিভাবে আসে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অহী কোন কোন সময় ঘন্টার আওয়াজের মত আমার নিকট আসে। আর ওটাই আমার পক্ষে সবচেয়ে কষ্টদায়ক অহী, এরপর ফেরেশতা আমার থেকে পৃথক হতো এমতাবস্থায় যে, তিনি যা বলেন তা শেষ হতেই তার কাছ থেকে আমি তা আয়ত্ব করে ফেলি। আবার কোন কোন সময় ফেরেশতা মানুষের আকারে এসে আমাকে যে অহী বলেন, আমি তা সাথে সাথে আয়ত্ব করে নেই। [বুখারীঃ ২]

[২] এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, পূর্ববতী নবীগণের প্রতি যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হয়েছিল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও তেমনি আল্লাহ্ তা’আলা ওহী নাযিল করেছেন। অতএব, পূর্ববর্তী নবীগণকে যারা মান্য করে, তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও মান্য করতে বাধ্য। আর যারা তাকে অস্বীকার করে তারা যেন অন্যসব নবীকে এবং তাদের প্রতি প্রেরিত ওহীকেও অস্বীকার করলো।

: ৮৪
وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ ۚ كُلًّا هَدَيْنَا ۚ وَنُوحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ ۖ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَىٰ وَهَارُونَ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ

আর আমারা তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়া’কূব, এদের প্রত্যেককে হিদায়াত দিয়েছিলাম;পূর্বে নূহকেও আমারা হিদায়াত দিয়েছিলাম এবং তার বংশধর দাউদ, সুলাইমান, আইউব, ইউনূস, মূসা ও হারূনকেও; আর এভাবেই মুহসিনদেরকে পুরস্কৃত করি ;
ফুটনোট

১১ : ৭১
وَامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ إِسْحَاقَ يَعْقُوبَ

আর তাঁর স্ত্রী দাঁড়ানো ছিলেন , অতঃপর তিনি হেসে ফেললেন [১]। অতঃপর আমরা তাকে ইস্‌হাকের ও ইস্‌হাকের পরবর্তী ইয়া’কূবের সুসংবাদ দিলাম [২]।

ফুটনোট

[১] এ থেকে বুঝা যায় ফেরেশতার মানুষের আকৃতিতে আসার খবর শুনেই পরিবারের সবাই পেরেশান হয়ে পড়েছিল। এ খবর শুনে ইবরাহীমের স্ত্রীও ভীত হয়েছিলেন। তারপর যখন তিনি শুনলেন, তাদের গৃহের বা পরিবারের ওপর কোন বিপদ আসছে না। তখনই তার ধড়ে প্রাণ এলো এবং তিনি আনন্দিত হলেন। [বাগভী; কুরতুবী] অথবা তিনি আযাব নাযিল হওয়া এবং কাওমে লুতের গাফিলতির ব্যাপারটি জেনে হেসে দিলেন [বাগভী] অথবা তিনি হেসেছিলেন সন্তানের সুসংবাদ শোনার পর তখন অবশ্য আয়াতের শব্দের মধ্যে আগ-পিছ হয়েছে ধরে নিতে হবে। [বাগভী; কুরতুবী] অথবা তিনি ও তার স্বামী উভয়েই মেহমানের খিদমতে নিয়োজিত আছেন তারপরও তারা খাচ্ছেন না, এ কথাটি তিনি হেসে হেসেই বলেছিলেন। [ইবন কাসীর]

[২] ফেরেশতাদের ইবরাহীমের পরিবর্তে তাঁর স্ত্রী সারাকে এ খবর শুনাবার কারণ এই ছিল যে, ইতিপূর্বে ইবরাহীম একটি পুত্র সন্তান লাভ করেছিলেন। তার দ্বিতীয়া স্ত্রী হাজেরার গর্ভে সাইয়্যিদিনা ইসমাঈল আলাইহিস সালামের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত সারা ছিলেন সন্তানহীনা। তাই তাঁর মনটিই ছিল বেশী বিষন্ন। তাঁর মনের এ বিষন্নতা দূর করার জন্য তাঁকে শুধু ইসহাকের মতো মহান গৌরবান্বিত পুত্রের জন্মের সুসংবাদ দিয়ে ক্ষান্ত হননি বরং এ সংগে এ সুসংবাদও দেন যে, এ পুত্রের পরে আসছে ইয়াকুবের মতো নাতি, যিনি হবেন বিপুল মর্যাদা সম্পন্ন পয়গম্বর। [কুরতুবী]

১২ :
وَكَذَٰلِكَ يَجْتَبِيكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِنْ تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ وَيُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَعَلَىٰ آلِ يَعْقُوبَ كَمَا أَتَمَّهَا عَلَىٰ أَبَوَيْكَ مِنْ قَبْلُ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

আর এভাবে আপনার রব আপনাকে মনোনীত করবেন এবং আপনাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা [১] শিক্ষা দেবেন [২] এবং আপনার প্রতি ও ইয়া’কুবের পরিবার পরিজনদের উপর তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করবেন [৩] , যেভাবে তিনি এটা আগে পূর্ণ করেছিলেন আপনার পিতৃ-পুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের উপর [৪]। নিশ্চয় আপনার রব সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় [৫]।

ফুটনোট

[১] উপরে বর্ণিত অর্থটি মুজাহিদ ও অন্যান্য তাফসীরকারক বর্ণনা করেছেন। [ইবন কাসীর] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এর অর্থ সত্য কথার ব্যাখ্যা। সে হিসেবে আসমানী কিতাবসমূহের সঠিক ব্যাখ্যাও হতে পারে। [সা'দী]

[২] অধিকাংশ মুফাসসির বলেন, আয়াতটি ইয়াকুব আলাইহিস সালাম-এর পূর্ব কথার পরিপূরক বাক্য অর্থাৎ ইয়াকুব আলাইহিস সালাম নিজেই বলছেন, হে ইউসুফ! তুমি তোমার স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের বলো না। কেননা, তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে। যেভাবে তুমি স্বপ্নে তোমাকে সম্মানিত দেখেছ, এভাবে আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করবেন নবী হিসেবে এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যাদাতা হিসেবে। অনুরূপভাবে তোমার উপর তাঁর নেয়ামত পরিপূর্ণ করবেন। [বাগভী; ইবন কাসীর] অথবা এ আয়াতটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর প্রতি প্রদত্ত সুসংবাদ অর্থাৎ এখানে আল্লাহ তা'আলা ইউসুফ আলাইহিস সালাম-কে কতিপয় নেয়ামত দানের ওয়াদা করেছেন। প্রথম, আল্লাহ স্বীয় নেয়ামত ও অনুগ্রহরাজির জন্য আপনাকে মনোনীত করবেন। মিসর দেশে রাজ্য, সম্মান ধন-সম্পদ লাভের মাধ্যমে এ ওয়াদা পূর্ণতা লাভ করেছে। দ্বিতীয়, আল্লাহ্ তা'আলা আপনাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কিত জ্ঞান শিক্ষা দেবেন। [কুরতুবী]। তবে প্রথম তাফসীরটি বেশী যুক্তিযুক্ত। এ আয়াত থেকে আরো জানা গেল যে, স্বপ্নের ব্যাখ্যা একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্র, যা আল্লাহ্ তা'আলা কোন কোন ব্যক্তিকে দান করেন। সবাই এর যোগ্য নয়। ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। [দেখুন, কুরতুবী]

[৩] তৃতীয় ওয়াদা (وَ یُتِمُّ نِعۡمَتَهٗ) অর্থাৎ আল্লাহ আপনার প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করবেন। এতে নবুওয়াত দানের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে এবং পরবর্তী বাক্যসমূহেও এর প্রতি ইঙ্গিত আছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, আপনার ভাইদেরকে আপনার প্রতি মুখাপেক্ষী বানাব। আবার কেউ কেউ অর্থ করেছেন, আপনাকে প্রতিটি বিপদ থেকে উদ্ধার করব [কুরতুবী] তবে আয়াতের পরবর্তী অং থেকে বুঝা যায় যে, এখানে নবুওয়াতই বুঝানো হয়েছে।

[৪] অর্থাৎ যেভাবে আমি স্বীয় নবুওয়াতের নেয়ামত আপনার পিতৃ-পুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের প্রতি ইতিপূর্বে পূর্ণ করেছি। এখানে নেয়ামত বলতে অন্যান্য নেয়ামতের সাথে সাথে নবুওয়াত ও রেসালাতই উদ্দেশ্য। [ইবন কাসীর]

[৫] আয়াতের শেষে বলা হয়েছে (اِنَّ رَبَّکَ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ) " অর্থাৎ আপনার পালনকর্তা অত্যন্ত জ্ঞানবান, সুবিজ্ঞ। তিনি ভাল করেই জানেন কার কাছে ওহী পাঠাবেন, কাকে রাসূল বানাবেন। কে নবুওয়াত ও রিসালাতের অধিক উপযুক্ত। [ইবন কাসীর]

১২ : ৩৮
وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ آبَائِي إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ ۚ مَا كَانَ لَنَا أَنْ نُشْرِكَ بِاللَّهِ مِنْ شَيْءٍ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ فَضْلِ اللَّهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ

‘আমি আমার পিতৃপুরুষ ইব্‌রাহীম, ইস্‌হাক এবং ইয়া’কূবের মিল্লাত অনুসরণ করি। আল্লাহ্‌র সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের জন্য সংগত নয়। এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
ফুটনোট

১৪ : ৩৯
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَهَبَ لِي عَلَى الْكِبَرِ إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ ۚ إِنَّ رَبِّي لَسَمِيعُ الدُّعَاءِ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌রই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমা’ঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব দো’আ শ্রবণকারী [১]।

ফুটনোট

[১] এ আয়াতের বিষয়বস্তুও পূর্ববতী দো'আর পরিশিষ্ট। কেননা, দো'আর অন্যতম শিষ্টাচার হচ্ছে দো'আর সাথে সাথে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা। ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম এস্থলে বিশেষভাবে আল্লাহ তা'আলার একটি নেয়ামতের শোকর আদায় করেছেন, নেয়ামতটি এই যে, ঘোর বার্ধক্যের বয়সে আল্লাহ তা'আলা তার দো'আ কবুল করে তাকে সুসন্তান ইসমাঈল ও ইসহাক দান করেছেন। এ প্রশংসা বর্ণনায় এদিকেও ইঙ্গিত রয়েছে যে, নিঃসঙ্গ ও নিঃসহায় অবস্থায় জনশূন্য প্রান্তরে পরিত্যক্ত শিশুটি আপনারই দান। আপনিই তার হেফাযত করুন। অবশেষে

(اِنَّ رَبِّيْ لَسَمِيْعُ الدُّعَاءِ)

বলে প্রশংসা বর্ণনা সমাপ্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ নিশ্চয় আমার রব দো’আ শ্রবণকারী তথা কবুলকারী।

১৯ : ৪৯
فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ ۖ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا

অতঃপর তিনি যখন তাদের থেকে ও তারা আল্লাহ্ ছাড়া যাদের ‘ইবাদাত করত সেসব থেকে পৃথক হয়ে গেলেন, তখন আমরা তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়া’কুব এনং প্রত্যেককে নবী করলাম [১]

ফুটনোট

[১] পূর্ববতী বাক্যে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর উক্তি বর্ণিত হয়েছে যে, আমি আশা করি, আমার পালনকতাঁর কাছে দোআ করে আমি বঞ্চিত ও বিফল মনোরথ হব না। বাহ্যতঃ এখানে গৃহ ও পরিবারবর্গ ত্যাগ করার পর নিঃসঙ্গতার আতঙ্ক ইত্যাদি থেকে আত্মরক্ষার দো'আ বোঝানো হয়েছিল। আলোচ্য বাক্যে এই দোআ কবুল করার কথা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর জন্য নিজ গৃহ, পরিবারবর্গ ও তাদের দেব-দেবীকে পরিহার করলেন, তখন আল্লাহ তা'আলা। তাকে পুত্র ইসহাক দান করলেন। এই পুত্ৰ যে দীর্ঘায়ু ও সন্তানের পিতা হয়েছিলেন তাও "ইয়াকুব (পৌত্ৰ) শব্দ যোগ করে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। পুত্ৰ দান থেকে বোঝা যায় যে, ইতিপূর্বে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বিবাহ করেছিলেন। কাজেই আয়াতের সারমর্ম এই দাঁড়াল যে আল্লাহ তা'আলা তাকে পিতার পরিবারের চাইতে উত্তম একটি স্বতন্ত্র পরিবার দান করলেন, যা নবী ও সৎকর্মপরায়ণ মহাপুরুষদের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। [দেখুন, ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর]

২১ : ৭২
وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ نَافِلَةً ۖ وَكُلًّا جَعَلْنَا صَالِحِينَ

এবং আমরা ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক আর অতিরিক্ত পুরস্কারসরূপ ইয়া’কূবকে [১]; এবং প্রত্যেকেই করেছিলাম সৎকর্মপরায়ণ।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ আমি তাকে (দো'আ ও অনুরোধ অনুযায়ী) পুত্র ইসহাক ও অতিরিক্ত দান হিসেবে পৌত্র ইয়াকুবও নিজের পক্ষ থেকে দান করলাম। অর্থাৎ ছেলের পরে পৌত্রকেও নবুওয়াতের মর্যাদায় অভিসিক্ত করেছি। দোআর অতিরিক্ত হওয়ার কারণে একে نافلة বলা হয়েছে। [কুরতুবী]

২৯ : ২৭
وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَجَعَلْنَا فِي ذُرِّيَّتِهِ النُّبُوَّةَ وَالْكِتَابَ وَآتَيْنَاهُ أَجْرَهُ فِي الدُّنْيَا ۖ وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ

আর আমরা ইবরাহীমকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়া‘কূব [১] এবং তাঁর বংশধরদের জন্য স্থির করলাম নবূওয়ত ও কিতাব। আর আমরা তাকে তার প্রতিদান দুনিয়ায় দিয়েছিলাম; এবং আখেরাতেও তিনি নিশ্চয়ই সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম হবেন [২]।

ফুটনোট

[১] ইসহাক আলাইহিস সালাম ছিলেন তাঁর পুত্র এবং ইয়াকূব ছিলেন পৌত্র। এখানে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অন্যান্য পুত্রদের উল্লেখ না করার কারণ হচ্ছে এই যে, ইবরাহীম সন্তানদের মাদ্‌ইয়ানী শাখায় কেবলমাত্র শু‘আইব আলাইহিস সালামই নবুওয়াত লাভ করেন এবং ইসমাঈলী শাখায় মুহাম্মাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভ পর্যন্ত আড়াই হাজার বছরে আর কোন নবী আসেননি। পক্ষান্তরে ইসহাক আলাইহিস সালাম থেকে যে শাখাটি চলে তার মধ্যে একের পর এক ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত নবুওয়াত ও কিতাবের নেয়ামত প্রদত্ত হতে থাকে।

[২] অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তা‘আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর আত্মত্যাগ ও অন্যান্য সৎকর্মের প্রতিদান দুনিয়াতেও দান করেছেন। তাঁকে মানুষের প্রিয় ও নেতা করেছেন। যারাই ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দাওয়াতকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিল তারা সবাই দুনিয়ার বুক থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং এমনভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে যে, আজ দুনিয়ার কোথাও তাদের কোন নাম নিশানাও নেই। কিন্তু যে ব্যাক্তিকে আল্লাহ্‌র কালেমা বুলন্দ করার অপরাধে তারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে চেয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত যাকে সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় স্বদেশভূমি ত্যাগ করতে হয়েছিল তাকে আল্লাহ্‌ এমন সফলতা দান করেন যে, দুনিয়াতে তাকে উত্তম স্বচ্ছন্দ রিযিক, প্রশস্ত আবাস, উত্তম নেককার স্ত্রী, সুপ্ৰশংসা প্ৰদান করা হয়েছে। তাছাড়া চার হাজার বছর থেকে দুনিয়ার বুকে তার নাম সমুজ্জ্বল রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। দুনিয়ার সকল মুসলিম, নাসারা ও ইয়াহূদী রাব্বুল আলামীনের সেই খলীল তথা বন্ধুকে একযোগে নিজেদের নেতা বলে স্বীকার করে। একমাত্র সেই ব্যাক্তি এবং তার সন্তানদের থেকেই তারা হিদায়াতের আলোকবর্তিকা লাভ করতে পেরেছে। আখেরাতে তিনি যে মহাপুরস্কার লাভ করবেন তাতো তার জন্য নির্ধারিত হয়েই আছে কিন্তু এ দুনিয়ায়ও তিনি যে মর্যাদা লাভ করেছেন তা দুনিয়ার বৈষয়িক স্বাৰ্থ উদ্ধার প্রচেষ্টায় জীবনপাতকারীদের একজনও আজ পর্যন্ত লাভ করতে পারেনি। [দেখুন, ইবন কাসীর; সা‘দী; আদওয়াউল বায়ান] এ থেকে জানা গেল যে, কর্মের আসল প্রতিদান তো আখেরাতে পাওয়া যাবে, কিন্তু তার কিছু অংশ দুনিয়াতেও নগদ দেয়া হয়। অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসে অনেক সৎকর্মের পার্থিব উপকারিতা ও অসৎকর্মের পার্থিব অনিষ্ট বর্ণিত হয়েছে।

৩৭ : ১১২
وَبَشَّرْنَاهُ بِإِسْحَاقَ نَبِيًّا مِنَ الصَّالِحِينَ

আর আমরা তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাকের, তিনি ছিলেন এক নবী, সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম।
ফুটনোট

৩৭ : ১১৩
وَبَارَكْنَا عَلَيْهِ وَعَلَىٰ إِسْحَاقَ ۚ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِمَا مُحْسِنٌ وَظَالِمٌ لِنَفْسِهِ مُبِينٌ

আর আমরা ইবরাহীমের ওপর বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাকের উপরও; তাদের উভয়ের বংশধরদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মুহসিন এবং কিছু সংখ্যক নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী।
ফুটনোট

৩৮ : ৪৫
وَاذْكُرْ عِبَادَنَا إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ أُولِي الْأَيْدِي وَالْأَبْصَارِ

আর স্মরণ করুন, আমাদের বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়া'কুবের কথা, তাঁরা ছিলেন শক্তিশালী ও সূক্ষ্মদর্শী।
ফুটনোট

0:00
0:00