হযরত ইয়াহইয়া আঃ
হযরত ইয়াহইয়া আঃ
: ৩৯
فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَىٰ مُصَدِّقًا بِكَلِمَةٍ مِنَ اللَّهِ وَسَيِّدًا وَحَصُورًا وَنَبِيًّا مِنَ الصَّالِحِينَ

অতঃপর যখন যাকারিয়্যা ইবাদত কক্ষে সালাতে দাঁড়িয়েছিলেন তখন ফেরেশ্‌তারা তাকে আহবান করে বলল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্‌ আপনাকে ইয়াহ্‌ইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন, সে হবে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে আগমনকৃত এক কালেমাকে সত্যায়নকারী [১], নেতা [২], ভোগ আসক্তিমুক্ত [৩] এবং পূণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত একজন নবী। ’

ফুটনোট

[১] এখানে কালেমা বলতে ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে ‘কালেমাতুল্লাহ' বা আল্লাহ্‌র বাণী বলা হয়েছে, কারণ, তিনি শুধু আল্লাহ্‌র কালেমা বা নির্দেশে চিরাচরিত প্রথার বিপরীতে পিতার মাধ্যম ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এখানে তাকে ‘আল্লাহ্‌র কালাম’ বলে বিশেষভাবে উল্লেখ করে সম্মানিত করাই উদ্দেশ্য। নতুবা সবকিছুই আল্লাহ্‌র কালেমার মাধ্যমেই হয়। তার কালেমা ব্যতীত কিছুই হয় না।

[২] কাতাদা বলেন, আল্লাহ্‌র শপথ তিনি ইবাদাত, সহিষ্ণুতা, জ্ঞান ও পরহেযগারীতে সবার শীর্ষ নেতা হিসেবে ছিলেন। পক্ষান্তরে মুজাহিদ বলেন, সাইয়্যেদ অর্থ হচ্ছে, তিনি আল্লাহ্‌র কাছে সম্মানিত ছিলেন। [তাবারী]

[৩] এটা ইয়াহইয়া ‘আলাইহিস সালামের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এর অর্থ, যিনি যাবতীয় কামনা-বাসনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। উদাহরণতঃ উত্তম পানাহার, উত্তম পোষাক পরিধান এবং বিবাহ ইত্যাদি। এ গুণটি প্রশংসার ক্ষেত্রে উল্লেখ করায় বাহ্যতঃ মনে হয় যে, এটাই উত্তম পন্থা। অথচ বিভিন্ন হাদীসে বিবাহিত জীবন-যাপন করাই যে উত্তম একথা প্রমাণিত আছে। এ সম্পর্কে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত এই যে, যদি কারো অবস্থা ইয়াহইয়া '‘আলাইহিস সালামের মত হয়- অর্থাৎ অন্তরে আখেরাতের চিন্তা প্রবল হওয়ার কারণে স্ত্রীর প্রয়োজন অনুভূত না হয় এবং স্ত্রী ও সন্তানদের হক আদায় করার মত অবকাশ না থাকে, তবে তার পক্ষে বিবাহ না করাই উত্তম। এ কারণেই যে সব হাদীসে বিবাহের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তাতে এ কথাও বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি বিবাহের সামর্থ রাখে এবং স্ত্রীর হক আদায় করতে পারে, তার পক্ষেই বিবাহ করা উত্তম’। [বুখারীঃ ১৮০৬, মুসলিমঃ ১৪০০] এতে বুঝা যাচ্ছে যে, এর ব্যতিক্রম হলে বিবাহ ওয়াজিব নয়।

: ৮৫
وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَىٰ وَعِيسَىٰ وَإِلْيَاسَ ۖ كُلٌّ مِنَ الصَّالِحِينَ

আর যাকারিয়্যা , ইয়াহইয়া, ঈসা এবং ইলয়াসকেও (হিদায়াত দিয়েছিলাম)। এরা প্রত্যেকেই সৎকর্মপরায়ণ ছিলেন ;
ফুটনোট

১৯ :
يَا زَكَرِيَّا إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ اسْمُهُ يَحْيَىٰ لَمْ نَجْعَلْ لَهُ مِنْ قَبْلُ سَمِيًّا

তিনি বললেন, ‘হে যাকারিয়্যা! আমরা আপনাকে এক পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম হবে ইয়াহইয়া; এ নামে আগে আমরা কারো নামকরণ [১] করিনি।

ফুটনোট

[১] سميًّا শব্দের অর্থ সমনামও হয় এবং সমতুল্যও হয়। এখানে প্রথম অর্থ নেয়া হলে আয়াতের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট যে, তার পূর্বে ইয়াহইয়া নামে কারও নামকরণ করা হয়নি। [তাবারী] নামের এই অনন্যতা ও অভূতপূর্বতাও কতক বিশেষ গুণে তাঁর অনন্যতার ইঙ্গিতবহ ছিল। কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ বলেন: ইয়াহইয়া অর্থ জীবিতকরণ, তিনি এমন এক বান্দা যাকে আল্লাহ ঈমানের মাধ্যমে জীবন্ত রেখেছিলেন। [তাবারী] পক্ষান্তরে যদি দ্বিতীয় অর্থ নেয়া হয় তখন উদ্দেশ্য হবে, তার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল যা তার পূর্ববতী নবীগণের কারও মধ্যে ছিল না। সেসব বিশেষ গুণে তিনি তুলনাহীন ছিলেন। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] এতে জরুরী নয় যে, ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম পূর্ববতী নবীদের চাইতে সবাবস্থায় শ্রেষ্ঠ ছিলেন। কেননা, তাদের মধ্যে ইবরাহীম খলীলুল্লাহ ও মূসা কলীমুল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকৃত ও সুবিদিত।

১৯ : ১২
يَا يَحْيَىٰ خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ ۖ وَآتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا

হে ইয়াহইয়া![১] আপনি কিতাবটিকে দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ করুন। আর আমরা তাকে শৈশবেই দান করেছিলাম প্রজ্ঞা [২]।

ফুটনোট

[১] মাঝখানে এই বিস্তারিত তথ্য পরিবেশিত হয়নি যে, আল্লাহর ফরমান অনুযায়ী ইয়াহইয়ার জন্ম হয় এবং শৈশব থেকে তিনি যৌবনে পদার্পণ করেন। এখন বলা হচ্ছে, যখন তিনি জ্ঞানলাভের নির্দিষ্ট বয়ঃসীমায় পৌঁছেন তখন তাঁর উপর কি দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এখানে মাত্র একটি বাক্যে নবুওয়াতের মহান মর্যাদায় অভিষিক্ত করার সময় তার উপর যে দায়িত্ব অৰ্পিত হয় তার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি তাওরাতকে সুদৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরবেন এবং বনী ইসরাঈলকে এ পথে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবেন। আর যদি কিতাব বলে কোন সুনির্দিষ্ট সহীফা ও চিঠি সংবলিত গ্ৰন্থ বুঝানো হয়ে থাকে। তবে তাও উদ্দেশ্য হতে পারে। [দেখুন, ইবন কাসীর]

[২] এখানে الحكم শব্দ দ্বারা জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বুঝ, দৃঢ়তা, স্থিরতা, কল্যাণমূলক কাজে অগ্ৰগামিতা এবং অসৎকাজ থেকে বিমুখতা বুঝানো হয়েছে। ছোট বেলা থেকেই তিনি এ সমস্ত গুণের অধিকারী ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবন মুবারক বলেন, মামার বলেন: ইয়াহইয়া ইবন যাকারিয়্যাকে কিছু ছোট ছেলে-পুলে বলল যে, চল আমরা খেলতে যাই। তিনি জবাবে বললেন: খেল-তামাশা করার জন্য তো আমাদের সৃষ্টি করা হয়নি! [ইবন কাসীর]

২১ : ৯০
فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَوَهَبْنَا لَهُ يَحْيَىٰ وَأَصْلَحْنَا لَهُ زَوْجَهُ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا ۖ وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ

অতঃপর আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া, আর তার জন্য তার স্ত্রীকে (গর্ভধারণের) যোগ্য করেছিলাম। তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর তারা আমাদেরকে ডাকত আগ্রহ ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমাদের নিকট ভীত-অবনত [১]।

ফুটনোট

[১] তারা আগ্রহ ও ভয় অর্থাৎ সুখ ও দুঃখ সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ তা’আলাকে ডাকে। এর এরূপ অৰ্থও হতে পারে যে, তারা ইবাদত ও দো’আর সময় আশা ও ভীতি উভয়ের মাঝখানে থাকে। আল্লাহ তা’আলার কাছে কবুল ও সওয়াবের আশাও রাখে এবং স্বীয় গোনাহ ও ত্রুটির জন্যে ভয়ও করে। ভালো কিছু পাওয়ার আশা তারা করে, আর খারাপ কিছু থেকে বাচার আশাও তারা করে। [সা’দী]

0:00
0:00