পানি
পানি
২২ : ১৯
هَٰذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ ۖ فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِنْ نَارٍ يُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ

এরা দুটি বিবাদমান পক্ষ [১], তারা তাদের রব সম্বন্ধে বিতর্ক করে; অতএব যারা কুফরী করে তাদের জন্য কেটে তৈরি করা হয়েছে আগুনের পোশাক [২], তাদের মাথার উপর ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি।

ফুটনোট

[১] আয়াতে উল্লেখিত দুই পক্ষ হচ্ছে, সাধারণ মুমিনগণ এবং তাদের বিপরীতে সব কাফের দল; ইসলামের যুগের হোক কিংবা পূর্ববতী যুগসমূহের। ইয়াহুদী, নাসারা, সাবেয়ী, মাজুস ও শির্ককারী সবাই এ কাতারভুক্ত। [ফাতহুল কাদীর] বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, এই আয়াত সেই দুই পক্ষ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যারা বদরের রণক্ষেত্রে একে অপরের বিপক্ষে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। মুসলিমদের মধ্য থেকে আলী, হামযা, ওবায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম ও কাফেরদের পক্ষ থেকে ওতবা ইবনে রবী"আ, তার পুত্ৰ ওলীদ ও তার ভাই শায়বা এতে শরীক ছিল। তন্মধ্যে কাফের পক্ষের তিন জনই নিহত এবং মুসলিমদের মধ্য থেকে আলী ও হামযা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছিলেন। ওবায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু গুরুতর আহত অবস্থায় ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে শাহাদাত বরণ করেন। আয়াত যে এই সম্মুখযোদ্ধাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, তা বুখারী ও মুসলিমের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । [দেখুন- বুখারীঃ ২৭৪৩, মুসলিমঃ ৩০৩৩] কিন্তু বাহ্যতঃ এই হুকুম তাদের সাথেই বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত নয়; বরং সমগ্র উম্মতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য- যে কোন যামানার উম্মতই হোক না কেন। আয়াতে আল্লাহ সম্পর্কে বিরোধকারী সমস্ত দলগুলোকে তাদের সংখ্যাধিক্য সত্ত্বেও দু'টি পক্ষে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি পক্ষ নবীদের কথা মেনে নিয়ে আল্লাহর সঠিক বন্দেগীর পথ অবলম্বন করে। দ্বিতীয় পক্ষ নবীদের কথা মানে না এবং তারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে। তাদের মধ্যে বহু মতবিরোধ রয়েছে এবং তাদের কুফরী বিভিন্ন বিচিত্র রূপও পরিগ্রহ করেছে। কাতাদা বলেন, মুসলিম ও আহলে কিতাব দু'টি দলে বিভক্ত হয়ে তর্কে লিপ্ত হলো। আহলে কিতাবরা বলল, আমাদের নবী তোমাদের নবীর আগে আর আমাদের কিতাব তোমাদের কিতাবের আগে, সুতরাং আমরা তোমাদের থেকে উত্তম। অপরদিকে মুসলিমরা বলল, আমাদের কিতাব সমস্ত কিতাবের মধ্যে ফয়সালা করে (সেগুলোর সত্যাসত্য নিরূপন করে)। আর আমাদের নবী সর্বশেষ নবী, সুতরাং আমরা তোমাদের থেকে উত্তম। তখন আল্লাহ ইসলামের অনুসারীদেরকে তাদের শক্ৰদের উপর প্রাধান্য দিয়ে আয়াত নাযিল করেন। [ইবন কাসীর] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে দুই প্রতিপক্ষ বলে জান্নাত ও জাহান্নাম বোঝানো হয়েছে। জাহান্নাম বলেছিল, আমাকে আপনার শাস্তির জন্য নির্ধারিত করে দিন। আর জান্নাত বলেছিল, আমাকে আপনার দয়ার জন্য নির্ধারিত করে দিন। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] তবে আয়াতে দু’টি দল বলে মুমিন ও কাফের ধরে নিলে সব মতের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান হয়ে যায়। [তাবারী; ইবন কাসীর]

[২] ভবিষ্যতে যে বিষয়টির ঘটে যাওয়া একেবারে সুনিশ্চিত তার প্রতি জোর দেবার জন্য সেটি এমনভাবে বর্ণনা করা হয় যেন তা ঘটে গেছে। আগুনের পোশাক বলতে সম্ভবত এমন জিনিস বুঝানো হয়েছে যাকে সূরা ইবরাহীমের ৫০ আয়াতে বলা হয়েছে যে, “তাদের জামা হবে আলকাতরার”। অৰ্থাৎ তাদের জন্য আগুনের টুকরা দিয়ে কাপড়ের মত করে তৈরী করে দেয়া হবে। [ইবন কাসীর] সায়ীদ ইবন জুবাইর বলেন, এখানে জামাগুলো হবে, তামার। যা গরম হলে সবচেয়ে বেশী তাপ সৃষ্টি হয়। [ইবন কাসীর]

২২ : ২০
يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ

যা দ্বারা তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া বিগলিত করা হবে।
ফুটনোট

২৫ : ৫৩
وَهُوَ الَّذِي مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هَٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَهَٰذَا مِلْحٌ أُجَاجٌ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَحِجْرًا مَحْجُورًا

আর তিনিই দুই সাগরকে সমান্তরালে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট, সুপেয় এবং অন্যটি লোনা, খর; আর তিনি উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান [১]।

ফুটনোট

[১] مرج শব্দের অর্থ স্বাধীন ছেড়ে দেয়া। عذب মিঠা পানিকে বলা হয়। فُرَاتٌ -এর অর্থ সুপেয়, مِلْحٌ -এর অর্থ লোনা এবং أجاجٌ এর অর্থ তিক্ত বিস্বাদ। আল্লাহ্‌ তা‘আলা স্বীয় কৃপা ও অপার রহস্য দ্বারা পৃথিবীতে দুই প্রকার সাগর সৃষ্টি করেছেন। (এক) সর্ববৃহৎ যাকে মহাসাগর বলা হয়। গোটা পৃথিবী এর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর প্রায় এক-চতুর্থাংশ এ জলধির বাইরে উন্মুক্ত, যাতে সারা বিশ্বের মানব সমাজ বসবাস করে। এই সর্ববৃহৎ সাগরের পানি রহস্যবশতঃ তীব্ৰ লোনা ও বিস্বাদ। পৃথিবীর স্থলভাগে আকাশ থেকে বর্ষিত পানির ঝর্ণা, নদনদী, নহর ও বড় বড় সাগর আছে। এগুলোর পানি মিষ্ট ও সুপেয়। মানুষের নিজেদের তৃষ্ণা নিবারণে এবং দৈনন্দিন ব্যবহারে এরূপ পানিরই প্রয়োজন, যা আল্লাহ্‌ তা‘আলা স্থলভাগে বিভিন্ন প্রকারে সরবরাহ করেছেন। সমুদ্রে স্থলভাগের চাইতে অনেক বেশী সামুদ্রিক জন্তুজানোয়ার বসবাস করে। এগুলো সেখানেই মরে, সেখানেই পচে এবং সেখানেই মাটি হয়ে যায়। সমগ্ৰ পৃথিবীর পানি ও আবর্জনা অবশেষে সমুদ্রে পতিত হয়। যদি সমুদ্রের পানি মিষ্ট হত, তবে মিষ্ট পানি দ্রুত পচনশীল বিধায় দু’চার দিনেই পচে যেত। এই পানি পচে গেলে তার দুর্গন্ধে ভূপৃষ্ঠের অধিবাসীদের জীবনধারন দুরূহ হয়ে যেত। তাই আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাকে এত তীব্ৰ লোনা, তিক্ত ও তেজস্ক্রিয় করে দিয়েছেন যেন সারা বিশ্বের আবর্জনা তাতে পতিত হয়ে বিলীন হয়ে যায় এবং সেখানে বসবাসকারী যে সকল সৃষ্টজীব সেখানে মরে, তাও পচতে পারে। [দেখুন-আদওয়াউল-বায়ান]

২৭ : ৬১
أَمَّنْ جَعَلَ الْأَرْضَ قَرَارًا وَجَعَلَ خِلَالَهَا أَنْهَارًا وَجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا ۗ أَإِلَٰهٌ مَعَ اللَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

নাকি তিনি, যিনি যমীনকে করেছেন বসবাসের উপযোগী এবং তার মাঝে মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদীনালা এবং তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বত ও দুই সাগরের মাঝে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায় [১]; আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ মিঠা ও নোনা পানির ভাণ্ডার। এ ভাণ্ডার এ পৃথিবীতেই রয়েছে কিন্তু তারা কখনো পরস্পর মিশে যায় না। ভূ-গর্ভের পানির স্রোতও কখনো একই এলাকায় মিঠা পানির স্রোত আলাদা এবং নোনা পানির স্রোত আলাদা দেখা যায়। নোনা পানির সাগরেও দেখা যায় কোথাও মিঠা পানির স্রোত আলাদা প্রবাহিত হচ্ছে। [দেখুন ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

৩৫ : ১২
وَمَا يَسْتَوِي الْبَحْرَانِ هَٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَائِغٌ شَرَابُهُ وَهَٰذَا مِلْحٌ أُجَاجٌ ۖ وَمِنْ كُلٍّ تَأْكُلُونَ لَحْمًا طَرِيًّا وَتَسْتَخْرِجُونَ حِلْيَةً تَلْبَسُونَهَا ۖ وَتَرَى الْفُلْكَ فِيهِ مَوَاخِرَ لِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

আর সাগর দুটি একরূপ নয়ঃ একটির পানি সুমিষ্ট ও সুপেয়, অন্যটির পানি লোনা খর। আর প্রত্যেকটি থেকে তোমরা তাজা গোশত খাও এবং আহরণ কর অলংকার, যা তোমরা পরিধান কর। আর তোমরা দেখ তার বুক চিরে নৌযান চলাচল করে, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
ফুটনোট

৩৮ : ৫৭
هَٰذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَّاقٌ

এটাই। কাজেই তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ [১]।

ফুটনোট

[১] মূলে غساق শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আভিধানিকগণ এর কয়েকটি অর্থ বৰ্ণনা করেছেন। এর একটি অর্থ হচ্ছে, শরীর থেকে বের হয়ে আসা রক্ত, পুঁজ ইত্যাদি জাতীয় নোংরা তরল পদার্থ এবং চোখের পানিও এর অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, অত্যন্ত ও চরম ঠাণ্ডা জিনিস। তৃতীয় অর্থ হচ্ছে, চরম দুৰ্গন্ধযুক্ত পচা জিনিস। কিন্তু প্রথম অর্থেই এ শব্দটির সাধারণ ব্যবহার হয়, যদিও বাকি দু'টি অর্থও আভিধানিক দিক দিয়ে নির্ভুল। [তাবারী]

৩৮ : ৫৮
وَآخَرُ مِنْ شَكْلِهِ أَزْوَاجٌ

আরো আছে এরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি [১]।

ফুটনোট

[১] ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এর দ্বারা প্ৰচণ্ড শীত বোঝানো হয়েছে। আর ইবন আব্বাস বলেন, এর অর্থ, অনুরূপ। [তাবারী।]

৪০ : ৭০
الَّذِينَ كَذَّبُوا بِالْكِتَابِ وَبِمَا أَرْسَلْنَا بِهِ رُسُلَنَا ۖ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ

যারা মিথ্যারোপ করে কিতাবে এবং যাসহ আমাদের রাসূলগণকে আমরা পাঠিয়েছি তাতে; অতএব, তারা শীঘ্রই জানতে পারবে---
ফুটনোট

৪০ : ৭১
إِذِ الْأَغْلَالُ فِي أَعْنَاقِهِمْ وَالسَّلَاسِلُ يُسْحَبُونَ

যখন তাদের গলায় বেড়ী ও শৃংখল থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে
ফুটনোট

৪০ : ৭২
فِي الْحَمِيمِ ثُمَّ فِي النَّارِ يُسْجَرُونَ

ফুটন্ত পানিতে, তারপর তাদেরকে পোড়ানো হবে আগুনে [১]।

ফুটনোট

[১] এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, জাহান্নামীদেরকে প্রথমে حميم অর্থাৎ ফুটন্ত পানিতে ও পরে جحيم অর্থাৎ জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এ থেকে আরও জানা যায় যে, حميم জাহান্নামের বাইরের কোন স্থান, যার ফুটন্ত পানি পান করানোর জন্যে জাহান্নামীদেরকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। অর্থাৎ তারা যখন তীব্র পিপাসায় বাধ্য হয়ে পানি চাইবে তখন দোযখের কর্মচারীরা তাদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে টেনে হেঁচড়ে এমন জায়গায় নিয়ে যাবে, যা থেকে টগবগে গরম পানি বেরিয়ে আসছে। অতঃপর তাদের সে পানি পান করা শেষ হলে আবার তারা তাদেরকে টেনে হেঁচড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবে। সূরা আস-সাফ্‌ফাতের ৬৭-৬৮ নং আয়াত থেকেও তাই জানা যায়। কোন কোন আয়াত থেকে জানা যায় যে, حميم ও جحيم একই স্থান এবং جحيم এর মধ্যেই حميم অবস্থিত। আয়াতটি এইঃ

هَٰذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُونَ * يَطُوفُونَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيمٍ آنٍ

[সুরা আর-রহমানঃ ৪৩-৪৪]

৪৪ : ৪৩
إِنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّومِ

নিশ্চয় যাক্কূম গাছ হবে [১] ---

ফুটনোট

[১] যাক্কুমের স্বরূপ সম্পর্কে সূরা আস-সাফফাতে কিছু জরুরী বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, কুরআনের আয়াত থেকে বাহ্যতঃ জানা যায়, যাক্কুম কাফেরদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করার আগেই খাওয়ানো হবে। [ফাতহুল কাদীর] কেননা, এখানে মানুষকে খাওয়ানোর পর জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাওয়ার আদেশ উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অন্য সূরায় বলা হয়েছে,

لَآكِلُونَ مِن شَجَرٍ مِّن زَقُّومٍ - فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ- فَشَارِبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ فَشَارِبُونَ شُرْبَ الْهِيمِ [সূরা আল- ওয়াকি'আঃ ৫২-৫৬]

৪৪ : ৪৪
طَعَامُ الْأَثِيمِ

পাপীর খাদ্য ;
ফুটনোট

৪৪ : ৪৫
كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ

গলিত তামার মত, পেটের মধ্যে ফুটতে থাকবে
ফুটনোট

৪৪ : ৪৮
ثُمَّ صُبُّوا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيمِ

তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির শাস্তি ঢেলে দাও -
ফুটনোট

৪৭ : ১৫
مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ فِيهَا أَنْهَارٌ مِنْ مَاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِنْ لَبَنٍ لَمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِنْ خَمْرٍ لَذَّةٍ لِلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِنْ عَسَلٍ مُصَفًّى ۖ وَلَهُمْ فِيهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِنْ رَبِّهِمْ ۖ كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِي النَّارِ وَسُقُوا مَاءً حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ

মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত : তাতে আছে নির্মল পানির নহরসমূহ, আছে দুধের নহরসমূহ যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ, আছে পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ [১] এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রত্যেক প্রকারের ফলমূল। আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। তারা (মুত্তাকীরা) কি তাদের ন্যায় যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং যাদেরকে পান করানো হবে ফুটন্ত পানি, ফলে তা তাদের নাড়ীভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিবে?

ফুটনোট

[১] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে রয়েছে পানির সাগর, মধুর সাগর, দুধের সাগর এবং মদের সাগর। তারপর সেগুলো থেকে আরো নালাসমূহ প্রবাহিত করা হবে। [তিরমিয়ী: ২৫৭১]

৫৫ : ১৯
مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ

তিনি প্রবাহিত করেন দুই সমুদ্র যারা পরস্পর মিলিত হয়,
ফুটনোট

৫৫ : ২১
فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ

কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?
ফুটনোট

৫৬ : ৩১
وَمَاءٍ مَسْكُوبٍ

আর সদা প্রবাহমান পানি,
ফুটনোট

৫৬ : ৬৮
أَفَرَأَيْتُمُ الْمَاءَ الَّذِي تَشْرَبُونَ

তোমরা যে পানি পান কর তা সম্পর্কে আমাকে জানাও [১]

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ শুধু তোমাদের ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থাই নয় তোমাদের পিপাসা মেটানোর ব্যবস্থাও আমিই করেছি। তোমাদের জীবন ধারণের জন্য যে পানি খাদ্যের চেয়েও অধিক প্রয়োজনীয় তার ব্যবস্থা তোমরা নিজেরা কর নাই। আমিই তা সরবরাহ করে থাকি। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]। আমি তোমাদেরকে শুধু অস্তিত্ব দান করেই বসে নাই। তোমাদের প্রতিপালনের এত সব ব্যবস্থাও আমি করছি যা না থাকলে তোমরা বেঁচেই থাকতে পারতে না। [আদওয়াউল-বায়ান]

৬৭ : ৩০
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَأْتِيكُمْ بِمَاءٍ مَعِينٍ

বলুন, ‘তোমরা আমাকে জানাও, যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন কে তোমাদেরকে এনে দেবে প্ৰবাহমান পানি?’
ফুটনোট

৭৭ : ২৭
وَجَعَلْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ شَامِخَاتٍ وَأَسْقَيْنَاكُمْ مَاءً فُرَاتًا

আর আমরা তাতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় উচ্চ পর্বতমালা এবং তোমাদেরকে পান করিয়েছি সুপেয় পানি [১]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ এ পৃথিবীর অভ্যন্তরে সুপেয় পানি সৃষ্টি করা হয়েছে। এর পৃষ্ঠদেশের উপরেও সুপেয় পানির নদী ও খাল প্রবাহিত করা হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “তোমরা যে পানি পান কর তা সম্পর্কে আমাকে জানাও তোমরা কি সেটা মেঘ হতে নামিয়ে আন, না আমরা সেটা বর্ষণ করি? আমরা ইচ্ছে করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না ?” [সূরা আল-ওয়াকি‘আহ: ৬৮-৭০]

৭৮ : ২১
إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا

নিশ্চয় জাহান্নাম ওৎ পেতে অপেক্ষমান;
ফুটনোট

৭৮ : ২২
لِلطَّاغِينَ مَآبًا

সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তনস্থল।
ফুটনোট

৭৮ : ২৩
لَابِثِينَ فِيهَا أَحْقَابًا

সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে [১]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ তারা সেখানে অবস্থানকারী হবে সুদীর্ঘ বছর। আয়াতে ব্যবহৃত أحقاب শব্দটি حقب এর বহুবচন। এর অর্থ নির্ধারণ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও স্বাভাবিকভাবে বলা যায় যে, এর দ্বারা ‘সুদীর্ঘ সময়’ উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। সুতরাং أحقاب দ্বারা তখন কোন সুনির্দিষ্ট সময় বোঝা উচিত হবে না। তাই উপরে এর অনুবাদ করা হয়েছে, ‘যুগ যুগ ধরে’। এর মানে হচ্ছে, একের পর এক আগমনকারী দীর্ঘ সময় তারা সেখানে অবস্থান করবে। এমন একটি ধারাবাহিক যুগ যে, একটি যুগ শেষ হবার পর আর একটি যুগ শুরু হয়ে যায়। একের পর এক আসতেই থাকবে এবং এমন কোন যুগ হবে না যার পর আর কোন যুগ আসবে না। [দেখুন: ইবন কাসীর] কুরআনের ৩৪ জায়গায় জাহান্নামবাসীদের জন্য ‘খুলুদ’ (চিরন্তন) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তিন জায়গায় কেবল ‘খুলুদ’ বলেই শেষ করা হয়নি বরং তার সাথে “আবাদান” (চিরকাল) শব্দও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এক জায়গায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, “তারা চাইবে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে যেতে। কিন্তু তারা কখনো সেখান থেকে বের হতে পারবে না এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।” [সূরা আল-মায়েদাহ : ৩৭]

৭৮ : ২৪
لَا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا

সেখানে তারা আস্বাদন করবে না শীতলতা, না কোন পানীয়---
ফুটনোট

৭৮ : ২৫
إِلَّا حَمِيمًا وَغَسَّاقًا

ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া [১];

ফুটনোট

[১] মূলে গাস্সাক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হয়ঃ পুঁজ, রক্ত, পুঁজ মেশানো রক্ত এবং চোখ ও গায়ের চামড়া থেকে বিভিন্ন ধরনের কঠোর দৈহিক নির্যাতনের ফলে যেসব রস বের হয়, যা প্রচণ্ড দুৰ্গন্ধযুক্ত। [ইবন কাসীর]

৭৮ : ২৬
جَزَاءً وِفَاقًا

এটাই উপযুক্ত প্রতিফল [১]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ জাহান্নামে তাদেরকে যে শাস্তি দেয়া হবে, তা ন্যায় ও ইনসাফের দৃষ্টিতে তাদের বাতিল বিশ্বাস ও কুকর্মের অনুরূপ হবে। এতে কোন বাড়াবাড়ি হবে না। [মুয়াসসার, সা‘দী]

৮৮ : ১৭
أَفَلَا يَنْظُرُونَ إِلَى الْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ

তবে কি তারা তাকিয়ে দেখে না উটের দিকে, কিভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে?
ফুটনোট

0:00
0:00